জলবায়ু মোকাবিলায় ৩২ দেশের বিরুদ্ধে মামলা

জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে দেশের সরকারগুলোকে বাধ্য করাই এ মামলার মূল উদ্দেশ্য। 

জলবায়ু মোকাবিলায় ৩২ দেশের বিরুদ্ধে মামলা

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় একসঙ্গে ৩২ দেশের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন পর্তুগালের ছয় তরুণ-তরুণী। তাদের দাবি, বিশ্বব্যাপী উত্তাপ মোকাবিলায় দেশগুলোতে পর্যাপ্ত নীতির অভাব ছিল। যার ফলে দাবানলসহ প্রকৃতি ভয়াবহ তাণ্ডবের সম্মুখীন হচ্ছে বারবার। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে দেশের সরকারগুলোকে বাধ্য করাই এ মামলার মূল উদ্দেশ্য। 

২০১৭ সালে পর্তুগালের লেইরিয়া অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া দাবানলের ভয়াবহতার অভিজ্ঞতা থেকে মামলাটির জন্ম। আসামি দেশগুলো হলো অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, বুলগেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া, সাইপ্রাস, চেক প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, হাঙ্গেরি, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, স্পেন, সুইডেন, নরওয়ে, রাশিয়া, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও তুরস্ক। এটি বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত নেওয়া সবচেয়ে বড় জলবায়ু মামলা। বাদীদের প্রত্যেকের বয়স ১১ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে। মারিয়ানা (১১), আন্দ্রে অলিভেরা (১৫), সোফিয়া অলিভেরা (১৮), মার্টিন অগোস্টিনহো (২০), ক্যাটারিনা মোটা (২৩) ও ক্লডিয়া ডুয়ার্তে অগোস্টিনহো (২৪)। বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ২০১৭ সালে তারা পর্তুগালের লেইরিয়া অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া দাবানলের বীভৎস রূপ দেখেছেন। যার প্রকোপে ৬৬ জন মারা গিয়েছিল। প্রায় ২০ হাজার হেক্টর (৫০ হাজার একর) বন ধ্বংস হয়েছিল। আন্দ্রে অলিভেরা ঘটনাটিকে ‘ভয়াবহ অভিজ্ঞতা’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। আন্দ্রের বোন সোফিয়া জানান, জলবায়ু সংকট নিয়ে উদ্বেগ তার দৈনন্দিন জীবকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। জলবায়ু সংকটের চরম অভিজ্ঞতা থেকে এমন পদক্ষেপ নিয়েছে তরুণ দল। নেতৃত্বে রয়েছেন ক্লডিয়া ডুয়ার্তে অগোস্টিনহো। 

আইনি পদক্ষেপ নেওয়া মামলাকারীদের প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবীরা যুক্তি দেন, সরকারগুলো গ্রিনহাউজ গ্যাসের নির্গমন কমানোর জন্য যথেষ্ট পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। আদালতে তারা প্রমাণসহ বলতে চান, দেশগুলোর বর্তমান নীতি একইভাবে চলতে থাকলে বিশ্বের তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়তে পারে। যুক্তরাজ্যে নির্গমন মাত্রা অনেকটাই বেড়েছে। কিন্তু তা মানতে  রাজি নন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। বলেন, এটি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিশ্ব-বিধ্বংসী পদক্ষেপ নিচ্ছে। এমনকি দাবির বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় যুক্তি দেখায়, প্রধানমন্ত্রী তার বাধ্যবাধকতা পূরণের জন্য যথেষ্ট কাজ করছেন। 

প্রতিরক্ষা নথিতে বলা হয়, দেশটি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিস্তৃত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং কোনো মানবাধিকার সীমা লঙ্ঘন করেনি। তবে আইনি অনুশীলনকারী প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল লিগ্যাল অ্যাকশন নেটওয়ার্কের (জিএলএএন) আইনি কর্মকর্তা গেরি লিস্টন মামলাকারীদের সমর্থন করেন। এ মামলার রায়ে দেশগুলোকে বিষাক্ত গ্যাস নির্গমন কমাতে দ্রুত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আদেশ দেওয়া হতে পারে। জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় সমুদ্র রক্ষার আরেকটি জলবায়ু বিচার মামলা জারি করে ছোটো দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো। জার্মানির হামবুর্গের একটি আদালতে উচ্চ হারে কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলোর বিরুদ্ধে মামলা করে। চলতি মাসের ১১ তারিখে শুনানি হয় মামলাটির।