জুলাইজুড়েই বৃষ্টি হতে পারে সারা দেশে

জুলাইজুড়েই বৃষ্টি হতে পারে সারা দেশে

প্রথম নিউজ, ঢাকা : জুলাই মাসজুড়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বজ বৃষ্টি হতে পারে। আজ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভারি বর্ষণ হতে পারে। আর আগামী শুক্রবার ভারি থেকে ভারি বৃষ্টি হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

এদিকে শুক্রবার অতি ভারি বৃষ্টিতে ঢাকার কোনো স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি থামার ৩০ ঘণ্টা পরও শনিবার পুরান ঢাকা, মিরপুর, সেগুনবাগিচা, শনির আখড়া, দক্ষিণখান, মধ্যবাড্ডা ও বাসাবো এলাকার অনেক স্থানেই পানি জমে ছিল। এসব এলাকার ড্রেনগুলো পলিথিনসহ বিভিন্ন ময়লা আবর্জনায় স্তূপ হওয়ার কারণেই মূলত পানি আটকা পড়েছে। পাশাপাশি যেসব খাল-বিলে গিয়ে পানি পড়বে, সেগুলোও ভরাট হয়ে গেছে। এসব খাল বেদখল হয়ে গেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ভারি বা হাল্কা বৃষ্টিতেই অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাত হয় নগরবাসীর। 

আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দুপুরে ঢাকাসহ রংপুর, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সিলেট অঞ্চলের ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা ঝড়ো হাওয়া বয়ে গেছে। সঙ্গে অস্থায়ীভাবে বৃষ্টি হয়েছে। আজও (রোববার) ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে। রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী বৃষ্টিসহ ঝড়ো বৃষ্টি হতে পারে। 

আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, ভারি বৃষ্টি স্থায়িত্ব বেশি হওয়া মানেই দুর্ভোগ চরমে ওঠা। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থানে রয়েছে। এর প্রভাবে সারা দেশে কয়েকদিন ধরে কোথাও ভারি, কোথাও হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। এ অবস্থায় আগামী শুক্রবার থেকে বৃষ্টি আরও বাড়বে। ওইদিন থেকে একটি নতুন স্কেল শুরু হয়ে বৃষ্টিপাতের তীব্রতর হবে। অর্থাৎ জুলাই মাসজুড়েই বৃষ্টি থাকবে। 

নগর বিশ্লেষকরা বলছেন, অল্প বৃষ্টিতে রাজধানীর অধিকাংশ রাস্তা তলিয়ে যায়, আর ভারি বৃষ্টি সপ্তাহে কয়েকদিন হলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম নগরীর অবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার শঙ্কা আছে। তবে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর উদ্যোগ বাস্তবায়ন চোখে পড়ছে না। গত ৪ বছরে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন জলাবদ্ধতা নিরসনে কমপক্ষে ৭৩০ কোটি টাকা খরচ করেছে। কিন্তু এর সুফল রাজধানীবাসী পাচ্ছে না। 

নগরবিদ ও স্থপতি ইকবাল হাবিব যুগান্তরকে বলেন, ‘নগরের জলাবদ্ধতা নগরবাসীদের চরম দুর্ভোগে ফেলছে। বছরের পর বছর এমন হয়ে আসছে-প্রতিকার নেই। সমাধান নেই। সিটি করপোরেশনগুলোর সক্ষমতার অভাব রয়েছে। নিরসনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে না। জনগণকেও সচেতন করতে নেই কোনো প্রচার। নিষিদ্ধ পলিথিন প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। পলিথিনসহ আবর্জনায় বেশির ভাগ ড্রেনই ভরে গেছে। ফলে বৃষ্টি হলেই রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে হাঁটুপানি হয়ে যাচ্ছে। ভারি বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। 

ইকবাল হাবিব আরও বলেন, পানি নিষ্কাশনে নতুন কিংবা পুরান ঢাকা-কোনোটায়ই সুপরিকল্পনা নেই। পানি মাটির নিচে যেতে পারছে না। বহু বছর ঢাকার ড্রেন ব্যবস্থার অভিভাবক ছিল ওয়াসা, প্রায় তিন বছর ধরে অভিভাবকের দায়িত্ব নিল দুই সিটি করপোরেশন। কিন্তু তাদের কি অভিজ্ঞ লোকবল আছে, বরাদ্দ আছে? 
কিছুই নেই। নেই প্রকৃত নকশা-হচ্ছে না পরিকল্পনা। কোটি কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে, সুফল মিলছে না। 
মতিঝিল কলোনির বাসিন্দা আজিজুল ইসলাম হেলাল জানালেন, রাজধানীর কিছু এলাকায় দুর্ভোগ যুগ যুগ ধরেই চলছে। জনপ্রতিনিধি, মেয়র আসে-যায়, পরিস্থিতি বদলায় না। অনেকেই প্রতিশ্রুতি দেয়, জলাবদ্ধতা নিরসনে-কিন্তু সব প্রতিশ্রুতিই ভাঁওতায় পরিণত হচ্ছে। 

শান্তিনগরের বাসিন্দা আয়েশা খানম বলেন, পেশায় শিক্ষক-আদর্শ কি নেই জনপ্রতিনিধি কিংবা সিটি করপোরেশনে দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টদের। আগামী সপ্তাহে আরও বৃষ্টি হবে, তখন তো দুর্ভোগ আরও বাড়বে। এর শেষ কোথায়, প্রতিকার কে করবে। মধ্য রামপুরার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হিরণ মোল্লার ভাষ্য, ভারি বৃষ্টি মানেই ব্যবসা তলানিতে। রামপুরার সড়ক-অলিগলি সবই তলিয়ে যায়। মলমূত্র ভেসে ওঠে। 

এদিকে ডিএসসিসির ৬৬ ও ৬৭নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন স্থানে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ৬৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল মতিন সাউদের ভাষ্য, অন্য সব ওয়ার্ডের চেয়ে এ ওয়ার্ডগুলো নিম্নাঞ্চলে তাই পানি জমে দ্রুত, সরতেও সময় লাগে। মিরপুর এলাকার বিভিন্ন স্থানের পানি ২৪ ঘণ্টায়ও নেমে যায়নি। মিরপুর ১৩, ১২ ও ১১ নম্বরের অনেক স্থানে সৃষ্টি হয়েছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা। 

এদিকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারি বৃষ্টির প্রভাব পড়েছে রেলসেবা নিরাপত্তায়ও। রেলওয়ে অপারেশন ও পরিবহণ দপ্তর সূত্র বলছে, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভারি বৃষ্টি হওয়ায় অতি সতর্কতার সঙ্গে ট্রেন চালাতে হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন লাইনে পানি জমে থাকায় লাইন এলাকা এখনো (শনিবার) নরম হয়ে আছে। ট্রেন চালাতে হচ্ছে ধীরগতিতে। আবারও ভারি বৃষ্টি হলে শঙ্কাও বাড়বে। ভারি বৃষ্টি হলে বিশেষ করে লাইনসহ রেলওয়ে সেতুর দুপাশের মাটি দেবে-ধসে যায়। এতে ট্রেন লাইনচ্যুত-দুর্ঘটনা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

উল্লেখ্য, সাধারণত ২৪ ঘণ্টায় ১ থেকে ১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে বলা হয় হালকা, ১১ থেকে ২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে মাঝারি, ২৩ থেকে ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে মাঝারি ধরনের ভারি, ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে ভারি এবং ৮৮ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি রেকর্ড হলে বলা হয়ে থাকে অতি ভারি বৃষ্টিপাত।