চলমান সংকটের রাজনৈতিক সমাধান হতে হবে : মির্জা ফখরুল

বুধবার (২৪ জুলাই) বিকালে রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

চলমান সংকটের রাজনৈতিক সমাধান হতে হবে : মির্জা ফখরুল

প্রথম নিউজ, অনলাইন: ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সব দাবি পূরণ হয়নি’ মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, চলমান সংকটের রাজনৈতিক সমাধান না হলে আন্দোলন শেষ হবে না। বুধবার (২৪ জুলাই) বিকালে রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

নানা ঘটনা প্রবাহের পর চলমান আন্দোলন সমাপ্ত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, না এটা কখনো হয়নি, অতীতেও হয়নি। অতীতের ইতিহাসে দেখবেন বহুবার আন্দোলন এসেছে। আন্দোলন একপর্যায়ে হয়তো সেটা স্তিমিত হয়েছে তারপর কিন্তু আরও বেগবান হয়েছে। এবার আন্দোলন তো একটা ‘আইওপেনার’ (চোখ খুলে দেওয়া)। এ আন্দোলনে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। আমরা প্রথমদিন থেকে বলে আসছি কারফিউ প্রত্যাহার চাই। জনগণের শান্তির স্বার্থে কারফিউ অবশ্যই প্রত্যাহার করা উচিত।

মির্জা ফখরুল বলেন, দুর্নীতি দমন, অর্থনীতি ঠিক না রাখাসহ সব দিকে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে এই আন্দোলনে জনগণের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এটা রাজনৈতিক সমাধান ছাড়া শেষ হবে না। রাজনৈতিক সমাধানটা কি? প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল স্পষ্ট ভাষায় বলেন, রাজনৈতিক সমাধান হচ্ছে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, কারফিউ দেওয়ার পর থেকে সরকার অত্যন্ত সচেতনভাবে প্রমাণ করতে চাইছে যে, আন্দোলন ও ভাঙচুর সবকিছুর জন্য দায়ী তারেক রহমান! এখান থেকে বুঝা যায়, তারা তারেক রহমানকে হেয়প্রতিপন্ন করা ও ভাবমূর্তি বিনষ্ট করা এবং জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে নিয়ে যাওয়া এবং একইসঙ্গে বিএনপিকে দায়ী করা, বিরোধী দলকে দায়ী করার জন্য এসব বলছে।

তিনি বলেন, সরকার জনগণের সমস্যা নিয়ে কথা বলছে না। এই আন্দোলন শত শত প্রাণ কেড়ে নিল সে ব্যাপারে তারা কোনো কথা বলছে না। বলছে যে, যদি কেউ আহত হয়ে থাকে তাহলে সেটাকে দেখে প্রয়োজনে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করবে। অথচ এটা সম্পূর্ণভাবে দায়িত্ব সরকারের; এ ধরনের ঘটনায় যে কেউ আহত হোক না কেন তার চিকিৎসার ব্যবস্থা সরকারকেই অবশ্যই করতে হবে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিএনপির সমর্থন ‘এখনো আছে’ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে আমাদের সমর্থন ছিল, এখনো আমরা দিচ্ছি। তাদের যে দাবিগুলো ছিল তা এখনো পূরণ করা হয়নি। তাদের দাবি ৮ দফা… সেগুলো কিন্তু এখনো হয়নি। শুধু কোটা নয়, আরও যে দাবিগুলো আছে অবশ্যই সেসব দাবি সরকারের পূরণ করা উচিত।

তিনি বলেন, এ সরকারের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো জনগণের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক ও তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। সে কারণে তারা জনগণের চোখের ভাষা, মনের কথা কখনো বুঝতে পারে না। ক্ষমতায় টিকে থাকা ছাড়া তাদের কোনো উপায় নেই। আমাদের মূল দাবি একটাই সেটা হচ্ছে- নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা তো তথ্য ঠিকমতো পাচ্ছি না, যোগাযোগ ব্যবস্থা সরকার বন্ধ করে রাখায় আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি, নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভবপর হচ্ছে না। আমাদের অফিসগুলো কীভাবে অভিযান চালিয়ে সব কিছু নিয়ে গেছে… কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কয়েক দিন আগে কি করেছে… দরজায় তালা ও সেখানে ক্রাইম সিন ফিতা লাগিয়ে দিয়েছে। ফলে আমরা সবকিছু এখনো শুরু করতে পারিনি। যতটুকু জানতে পেরেছি আমাদের প্রায় দুই হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ সিনিয়র নেতারা, অঙ্গসংগঠনের নেতা, জাতীয় নির্বাহী কমিটির নেতা, বিরোধী দলের নেতা গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর আছেন, জামায়াতে ইসলামের মিয়া গোলাম পরওয়ার ও ডা. আবদুল্লাহ আবু তাহের আছেন।

সরকারের তরফে বিএনপির বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা আন্দোলনের সঙ্গে থাকা আর নাশকতার মদদ দেওয়া এক জিনিস নাকি। তারা (সরকার) চাচ্ছেন যে এখানে নাশকতা হোক। বিএনপির চল্লিশ বছরের ইতিহাসে নেই যে, বিএনপি রাষ্ট্রীয় স্থাপনার ওপরে আক্রমণ করেছে, সেখানে কোনো সমস্যা তৈরি করেছে। আজ পর্যন্ত যত আন্দোলন হয়েছে কোথাও কোনো রকমের রাষ্ট্রীয় স্থাপনার ওপরে বিএনপি আক্রমণ কখনো করেনি।