চার লেন চালু হলে স্বস্তি পাবেন উত্তরের মানুষ, আছে শঙ্কাও

চার লেন চালু হলে স্বস্তি পাবেন উত্তরের মানুষ, আছে শঙ্কাও

প্রথম নিউজ, রংপুর : পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদ উদযাপন করতে নাড়ীর টানে বাড়ি ফিরবে লাখো মানুষ। ঈদের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি থাকলেও পুরোদমে চলছে মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ। ঈদে গাড়ির চাপ সামাল দিতে ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম পাড় থেকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর পর্যন্ত চার লেন চালু করা হয়েছে। ঘরমুখো মানুষের যাতায়াতের স্বস্তি ফেরাতে দ্রুতই কাজ শেষ করার দাবি জানিয়েছেন বাস চালকেরা। সংশ্লিষ্টরাও ঈদযাত্রা নির্বিঘ্নে করতে ওই সব স্থানে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে পুরোদমে।

প্রতি বছর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার সময় বঙ্গবন্ধু সেতু গোলচত্বর থেকে হাটিকুমরুল মোড় পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার মহাসড়ক পাড়ি দিতে যাত্রী ও চালকদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে থাকতে হয়। তবে এ বছর মহাসড়কের নকলা ব্রিজ, ফ্লাইওভার ও চার লেনের কাজ অনেকাংশে শেষ হওয়ায় অনেকটাই স্বস্তি পেতে পারেন উত্তরবঙ্গের ঈদে ঘরে ফেরা মানুষ, যাত্রী ও চালকেরা।

বাসচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা-বগুড়া ও বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কে রাস্তা প্রশস্তকরণ ও ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ অধিকাংশ জায়গায় শেষ হলেও হাটিকুমরুল গোলচত্বর এলাকায় আন্তর্জাতিক মানের ইন্টারচেঞ্জ নির্মাণকাজসহ অনেক জায়গায় চার লেনের কাজ চলমান। এর ফলে কিছু কিছু জায়গায় রাস্তা সরু হয়ে গেছে।

এদিকে রংপুরের দমদমা এলাকায় মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ চলমান রয়েছে। একই অবস্থা রংপুরের পায়রাবন্দের ইসলামপুর এলাকার। স্বয়ংক্রিয় টোল প্লাজার নির্মাণকাজ চলছে এখনো। ফলে কোথাও কোথাও একপাশের রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ করে রাখা হয়েছে।

এছাড়া রংপুরের শঠিবাড়ি ও বড়দরগায় ওভারপাসের নির্মাণকাজ চলমান। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, গাইবান্ধার পলাশবাড়ীসহ তিনটি স্থানে ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ শুরুই হয়নি। সেখানে চলমান অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণকাজ। প্রতিবারের মতো এবারেও ঢাকা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে উত্তরের ঈদযাত্রায় ভোগান্তির শঙ্কা দেখছেন যানবাহন সংশ্লিষ্টরা। তাদের দুর্ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বগুড়া থেকে রংপুর পর্যন্ত অন্তত ২৫টি স্থান।

যানজটপ্রবণ এসব স্থানের মধ্যে রয়েছে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল বাজার, ঘুরকা বেলতলা, ভূঁইয়াগাতী, হাইওয়ে অভি ভিলা, সীমাবাড়ি, ফুড ভিলেজ ও পেন্টাগন হোটেলের সামনের এলাকা, চান্দাইকোনা বাজার, ঘোগা বটতলা, বগুড়ার ছনকা বাজার, শেরপুর সদর, নয়মাইল, মাঝিড়া, বনানী বাসস্ট্যান্ড, ফুলতলা, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের সামনের এলাকা, তিনমাথা রেলগেট, চারমাথা বাস টার্মিনালের সামনের এলাকা, বারপুর মোড়, মাটিডালী মোড়, ঠেঙ্গামারা, মহাস্থান ও মোকামতলা উড়ালসড়কের নিচের অংশ ও গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ শহরের অংশ এবং পলাশবাড়ী শহরের অংশ।

বাসচালক রেজাউল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগের বছরের তুলনায় এ বছর মহাসড়কের অবস্থা ভালো। তবে গোবিন্দগঞ্জ ও শটিবাড়িতে আমাদের দীর্ঘ যানযটে মধ্যে পড়তে হবে। এমনও হতে পারে সেখানে অনেক গাড়িকে ঈদ পর্যন্ত করতে হকে পারে। এছাড়াও অনেক জায়গায় খানাখন্দ রয়েছে। ঈদের আগে মেরামত করা না হলে এসব জায়গায় যানজট হবে। তাই ঈদের আগে এসব জায়গা মেরামত করা প্রয়োজন।

আরেক বাসচালক জহুরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বগুড়া থেকে পলাশবাড়ী পর্যন্ত রাস্তার কাজ ঠিকমত হয়নি। এখানে অনেক কাজ বাকি আছে। গোবিন্দগঞ্জের রাস্তার এক সাইডে কাজ চলেছে আরেক সাইড সরু। ঈদের তো গাড়ি বেশি চলবে যানজট বেশি হবে। আমাদের দাবি গোবিন্দগঞ্জ পলাশবাড়ি এলাকায় চলার মতো অবস্থা করে দেওয়া হোক।

ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে সাধারণ সময়ে দিনে ২০ হাজারের মতো যানবাহন চলাচল করে। ঈদ ঘিরে এ সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় ৫০ হাজার। ফলে বাড়তি গাড়ির চাপের পাশাপাশি সড়ক উন্নয়নকাজের ধীরগতির কারণে থাকছে পুরোনো ভোগান্তির আশঙ্কা। তবে এবার উত্তরের ঘরে ফেরা মানুষের যাতায়াতে যেন বিঘ্ন না ঘটে, এজন্য হাটিকুমরুল মোড়ে এক মাস আগে কংক্রিটের রাস্তা মেরামত করে দেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ সড়ক থেকে বগুড়ার মোকামতলা হয়ে রংপুর পর্যন্ত পুরোটাই চার লেনের ফ্যাসিলিটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাউথ এশিয়ান সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক-৩) সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের কর্মকর্তারা।

সাউথ এশিয়ান সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক-৩) সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, সাসেক সড়ক প্রকল্প এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত চলছে। প্রতিবার যেটা হয় উত্তরবঙ্গের ঈদযাত্রা নিয়ে শঙ্কা থাকে। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। গত বছরের তুলনায় সড়ক ব্যবস্থা অনেক ভালো। গত বছরও কোনো সমস্যা হয়নি। এবছরও হবে না। বঙ্গবন্ধু সেতুপশ্চিম সংযোগ সড়ক থেকে বগুড়ার মোকামতলা হয়ে রংপুর পর্যন্ত পুরোটাই চার লেনের ফ্যাসিলিটি দেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম গোলচত্বর থেকে হাটিকুমরুল পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার সড়কের কিছু কিছু জায়গায় ছয় লেনও নির্মাণ করা হয়েছে। পাঁচলিয়া, সয়দাবাদ, কড্ডার মোড় ওভারব্রিজ চালু করে দেওয়া হয়েছে। আর হাটিকুমরুল থেকে বগুড়ার মির্জাপুর পর্যন্ত কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। সড়কে যেখানে যেখানে খানাখন্দ ছিল তাও সংস্কার করে দেওয়া হয়েছে। ঈদে ঘরে ফেরা মানুষ যাতে ভোগান্তিতে না পড়তে হয়, এজন্য খুলে দেওয়া হবে পাঁচলিয়া ওভারব্রিজ। কাজ ও প্রায় শেষের দিকে। আগামী ৪ এপ্রিলের মধ্যে পুরো সড়ক চার লেনে উন্নীত হবে।

এদিকে ঈদযাত্রায় ভোগান্তির ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। কর্মকর্তারা বলছেন, সেসব স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে যানযটমুক্ত ঈদযাত্রা উপহার দেবেন তারা।

রংপুর হাইওয়ে পুলিশ সহকারী পুলিশ সুপার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে গোবিন্দগঞ্জ থেকে তেঁতুলিয়া জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত যে মহাসড়ক আছে এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ স্পটগুলো চিহ্নিত করেছি। বিশেষ করে পলাশবাড়ী বাজারে এবং গোবিন্দগঞ্জ বাজারে দুটি স্পট ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সেখানে আমরা অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করব। এদিকে রংপুর জেলার মধ্যে যেসব স্পট আছে সেগুলো তেমন ঝুঁকিপূর্ণ নয়। আমরা আশা করছি হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ফোর্স এবং জেলা পুলিশের সমন্বয়ে কাজ করব। তাছাড়া সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে সমন্বয়ে কাজ করায় আশা করি কোনো যানজট হবে না।

এদিকে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বড়দরগা থেকে রংপুর নগরীর মর্ডান মোড় পর্যন্ত ২৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার সড়কের ৮৫ ভাগ নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু মিঠাপুকুরের শঠিবাড়ী বাজার এলাকায় জমি জটিলতার কারণে দেড় কিলোমিটার অংশে কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। সেখানকার প্রায় ২২ একর জমি এখনো অধিগ্রহণ করা হয়নি। ৮টি প্যাকেজের মাধ্যমে বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্ত থেকে হাটিকুমরুল হয়ে রংপুরের মডার্ন মোড় পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন কাজ চলছে।