চার পুলিশ হত্যা: ২১ বছরেও শেষ হয়নি বিচার
১৪ বছর আগে মামলার অভিযোগ গঠন করা হলেও এখন পর্যন্ত সাক্ষ্যগ্রহ শেষ হয়নি।
প্রথম নিউজ, সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে আজকের এ দিনে রান্ধুনীবাড়ি পুলিশ ক্যাম্পে হামলা হয়েছিল। এতে ৪ পুলিশ সদস্য মারা যান। কিন্তু ২১ বছর পার হলেও এ হত্যা মামলার বিচার সম্পন্ন হয়নি। ১৪ বছর আগে মামলার অভিযোগ গঠন করা হলেও এখন পর্যন্ত সাক্ষ্যগ্রহ শেষ হয়নি।
জানা যায়, হত্যা মামলার আসামিদের মধ্যে মুকুল হোসেন, সাইদুল ইসলাম ও জয়নাল আবদীনের মৃত্যু হয়েছে। আর বাকি ৩৩ জন জামিনে আছেন। পলাতক আছেন ১০ জন। মামলাটি বর্তমানে সিরাজগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-২ আদালতে বিচারাধীন। ২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিলের পর ২০০৯ সালের ১৩ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, ২০০২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে ৫০-৬০ জনের কথিত সর্বহারা পার্টির সদস্যরা চর মকিমপুর অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পে হামলা করে। প্রথমে তারা পুলিশ কনস্টেবল জাহিদুল হককে গুলি করে এবং চার পাশ থেকে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। এরপর তারা পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলে তোমরা আত্মসমর্পণ করো এবং তোমাদের হাতিয়ার ফেলে দাও। এ সময় সুবেদার আব্দুল হান্নান সর্বহারাদের গুলি করতে পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দেন। শুরু হয় পাল্টাপাল্টি বন্দুকযুদ্ধ। সর্বহারাদের গুলিতে হাবিলদার গোলজার হোসেন, পুলিশ সদস্য শ্রী সুশান্ত চাকমা, সাদেকুল ইসলাম, রেজাউল হক, বাবুল হোসেন, আনিছুর রহমান ও আব্দুল করিম আহত হন।
এ সুযোগে সর্বহারা সদস্যরা অস্ত্রাগারে ঢুকে সাতটি এসএল আর ও সাতটি ম্যাগজিন, ১৪৪ রাউন্ড, দুটি রাইফেল, একটি ম্যাগজিন ও ৩০ রাউন্ড গুলি লুট করে গুলি করতে করতে বেরিয়ে আসে। পুলিশ সদস্যরা তাদের পিছু পিছু ধাওয়া করেও আটক করতে পারেনি। সর্বহারাদের গুলিতে পুলিশ সদস্য সুশান্ত চাকমা ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। আহতদের উদ্ধার করে সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় পুলিশ সদস্য জাহিদুল ইসলাম, সাদেকুল ইসলাম ও রেজাউল হকের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় ক্যাম্পের সুবেদার আব্দুল হান্নান বাদী হয়ে অজ্ঞাত ৫০-৬০ জন সর্বহারা দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে বেলকুচি থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্ত শেষে ৪৬ জনকে আসামি করে ২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।
আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইন্দ্রজিত সাহা বলেন, ক্যাম্প লুটের এ মামলা ২০০২ সালের। মামলার এজাহারে কোনো আসামির নাম ছিল না। চার্জশিটে ৪৬ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এরই মধ্যে তিন আসামির মৃত্যু হয়েছে। বাকিরাও বয়সের ভারে বৃদ্ধ হয়ে পড়েছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এ্যাডভোকেট জেবুন্নেছা (জেবা রহমান) বলেন, মামলাটি সতর্কতার সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে। এটি আলোচিত মামলা। সাক্ষীদের সমন জারি করা হচ্ছে। এর মধ্যে ছয়জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। আমরা চায় অতিদ্রুত এ মামলার বিচারকাজ শেষ হোক।