চট্টগ্রামে অনিয়মের দায়ে প্রধান শিক্ষিকার দণ্ড
অভিযুক্ত ফেরদৌস আরা বেগম উপজেলার শোভনদন্ডী ইউনিয়নের হিলচিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা।
প্রথম নিউজ, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের পটিয়ায় অনিয়ম ও দুর্নীতি সংক্রান্ত অপরাধের দায়ে এক শিক্ষিকাকে আগামী এক বছরের জন্য বেতন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর চট্টগ্রাম কার্যালয়। অভিযুক্ত ফেরদৌস আরা বেগম উপজেলার শোভনদন্ডী ইউনিয়নের হিলচিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা। সরকারি কর্মচারী বিধিমালায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তাকে এ দণ্ড দেওয়া হয়।
এ সংক্রান্তে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর চট্টগ্রামের বিভাগীয় উপ-পরিচালকের কার্যালয় থেকে একটি আদেশে বলা হয়, ফেরদৌস আরা বেগমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি সংক্রান্ত অপরাধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর ৩ (খ) অসদাচরণ ও ৩ (ঘ) বিধি মতে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত করে গত ১ আগস্ট তারিখে বিভাগীয় মামলা রুজুপূর্বক অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণী প্রেরণ করে জবাব প্রদানের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়। এরপর অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক গত ৮ আগস্ট তারিখে লিখিত জবাব দাখিল করেন ও তিনি ব্যক্তিগত শুনানিতে অংশগ্রহণ করার ইচ্ছা পোষণ করেন। গত ২৭ আগস্ট তার ব্যক্তিগত শুনানি গ্রহণ করা হয়। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের দাখিলকৃত জবাব ব্যক্তিগত শুনানিতে প্রদত্ত বক্তব্য বিভাগীয় মামলার প্রাসঙ্গিক রেকর্ডপত্রাদি ও সার্বিক বিষয় পর্যালোচনায় তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৪ (২) (খ) উপবিধি অনুযায়ী ‘লঘুদণ্ড’ প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
একারণে ফেরদৌস আরা বেগমকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর ৪ এর (২) (খ) উপবিধি মোতাবেক ১টি বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি এক বছরের জন্য স্থগিত করে লঘুদণ্ড প্রদান করা হলো। উক্ত স্থগিতকৃত বেতন পরে তিনি বকেয়া হিসেবে প্রাপ্য হবেন না। দণ্ডটি অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে আদেশে বলা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নামমাত্র বেতনে কোনো প্রকার নিয়োগ পরীক্ষা ছাড়াই পটিয়ার প্রত্যন্ত এলাকা লাওয়ারখীল বেসরকারি বানেস্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে ফেরদৌস আরা বেগম শিক্ষকতা শুরু করেন। এক সময় এই বিদ্যালয়ে ১০ থেকে ১৫ জন ছাত্রছাত্রী ছিল। ঐ স্কুলে থাকাকালীন পরীক্ষা দিয়ে এইচএসসি পাস করেন ফেরদৌস আরা বেগম। একপর্যায়ে তিনি সেই বানেস্বর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হন। ২০১৩ সালে স্কুলটি সরকারি হলে তাকে আত্তীকরণ করা হয়। এরপর তিনি বদলি হয়ে চলে আসেন নিজ গ্রামের হিলচিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখানে যোগদানের পর থেকে তার বিরুদ্ধে একাডেমিক অদক্ষতা, আর্থিক অনিয়ম, অসদাচরণসহ একাধিক অভিযোগ ওঠে।
এছাড়া তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নানা অজুহাতে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। সবমিলিয়ে ফেরদৌস আরা বেগমের বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আলা উদ্দিনকে প্রধান করে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি যাচাই-বাছাই করে প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রধান শিক্ষক ফেরদৌস আরা বেগমকে দণ্ড দেওয়া হয়।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রধান শিক্ষক ফেরদৌস আরা বেগমের বিরুদ্ধে অভিযোগ পরবর্তী তদন্ত প্রতিবেদনের পর বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়। মামলার শুনানি শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা অনুযায়ী তার ১টি বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি ১ বছরের জন্য স্থগিত করে লঘুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। স্থগিতকৃত বেতন পরে তিনি বকেয়া হিসেবে প্রাপ্য হবেন না। এ ধরনের শাস্তি অন্যান্য শিক্ষকদের জন্য শিক্ষণীয় উদাহরণ হয়ে থাকবে।