গণআন্দোলনে সরকার পদত্যাগে বাধ্য হবে
টঙ্গী ও কেরানীগঞ্জে বিএনপি’র সমাবেশ
প্রথম নিউজ, অনলাইন: সরকার পতনের একদফা দাবিতে ১৫ দিনের ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন শুরু করেছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। কর্মসূচির প্রথম দিন রাজধানীর প্রবেশমুখ কেরানীগঞ্জ ও টঙ্গীতে সমাবেশ করেছে বিএনপি। দুটি সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এসব বক্তব্যে তিন নেতা বলেন, জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ক্ষমতায় থাকার সুযোগ নেই। সরকার পতন আন্দোলন সমাপ্তির দিকে। এখন ডু অর ডাই। সারা দেশের দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। দুর্বার আন্দোলনেই সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হবে।
আমাদের কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, বর্তমান অবস্থা থেকে দেশ ও জাতিকে মুক্ত করতে হবে। আমরা এমন দুর্বার আন্দোলন করবো, সারাদেশে এমন অবস্থা সৃষ্টি করবো সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হবে। এসময় গ্রামগঞ্জের মা-বোনসহ সবাইকে আন্দোলনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। মঙ্গলবার বিকালে কেরানীগঞ্জের জিনজিরায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে সরকার পতনের একদফার দাবিতে ঘোষিত কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে দুপুর থেকেই কেরানীগঞ্জ, দোহার, নবাবগঞ্জ ও ধামরাই এলাকার বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জড়ো হন।
মির্জা আব্বাস বলেন, সরকার জবরদস্তি করে দেশে রাজত্ব কায়েম করেছে। এই রাজত্ব চলতে দেয়া যায় না। দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম করতে হবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। আমানউল্লাহ আমানকে মুক্ত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের দলের নেতাকর্মীদের কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। কিন্তু কেন। আজকে চোর-ডাকাতদের বিচার হচ্ছে না। শুধু বিএনপির নেতাদের বিচার হচ্ছে। শুধু স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে একরাতে সব শেষ করে দেবে। আমি আপনাদের বলতে চাই- আমরা আপনাদের কোনো ক্ষতি করবো না। আগে ক্ষমতা ছাড়েন। তবে অন্যায় করবেন পাপ করবেন, ডিসি-এসপি লেলিয়ে দিয়ে গুম করাবেন, রাতের ঘুম হারাম করবেন, আর আপনাদের মানুষ ছেড়ে দেবে- এটা ভাববেন না।
ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীর সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মো. আব্দুস সালাম, সাবেক এমপি দেওয়ান সালাউদ্দিন, ঢাকা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ইরফান ইবনে অমি, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ প্রমুখ।
ওদিকে স্টাফ রিপোর্টার, টঙ্গী থেকে জানান, আগামীদিনের কর্মসূচি পুলিশের অনুমতি সাপেক্ষে হবে না বলে মন্তব্য করেছেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেছেন, আমাদের এখন চূড়ান্ত আন্দোলনে যেতে হবে। আমাদের এখন ডু আর ডাই। হয় বাঁচবো, নয় মরে যাবো। কিন্তু কাঙালের মতো শেখ হাসিনার অত্যাচার-নিপীড়ন সহ্য করে বাঁচতে চাই না। তাই আপনারা প্রস্তুত থাকেন। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় নেতৃত্ব দেয়ার মতো নেতার তালিকা করেন। লক্ষ্যে না পৌঁছা পর্যন্ত থামবেন না। মঙ্গলবার বিকালে গাজীপুরের টঙ্গী উপজেলার কলেজগেটে সরকার পতনের একদফা দাবিতে কেন্দ্র ঘোষিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে দুপুর থেকেই গাজীপুর ও টঙ্গীর বিভিন্ন এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে কলেজগেটে জড়ো হন। একপর্যায়ে লোকরণ্য হয়ে পড়ে কলেজগেট প্রাঙ্গণ। সমাবেশে গয়েশ্বর রায় বলেন, এই সরকার নিজে নিজে পড়ে যাবে। আর আপনারা যদি ধাক্কা দিয়ে ফালান তখন আপনাদের কাছে চিৎকার দিবে। এই সরকারের কোনো যোগ্যতা নাই ক্ষমতায় থাকার।
তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের নাকি বলেন- বিএনপি ক্ষমতায় আসলে পিঠের চামড়াও থাকবে না। আবার বলেন, যেদিন ক্ষমতায় আসবে সেদিন নাকি এক লক্ষ লোক মারা যাবে। আরে আপনারা ক্ষমতায় থাকলে ১৮ কোটি লোকই মারা যাবে।
গয়েশ্বর রায় বলেন, কিছু ফেরিওয়ালা আছে, কিছু সংস্থার লোক আছে তারা আরেকটা নাটকীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রতারণা করে বলবে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। তার একটা লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। আজকে একটা পার্টি হয়েছে- সেই পার্টির মধ্যে কিছু শকুন ঢুকে পড়েছে। রাজনীতিবিদ কেনাবেচার হাট শুরু হয়ে গেছে ভেতরে ভেতরে। আপনাদের আশেপাশে জাতীয়তাবাদী কোনো নেতা যেন বিপথগামী না হয় সেটা খেয়াল রাখবেন।
এদিকে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আজকে একদফা হচ্ছে শেখ হাসিনার পতন, স্বৈরাচার ফ্যাসিস্টের পতন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রবর্তন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন বিলুপ্ত করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি। সব দফা আমরা আদায় করবো। তিনি বলেন, আমরা আন্দোলনে রাস্তায় নেমেছি। এই আন্দোলনে জয়ী হতে হবে। এই আন্দোলন বিএনপির একার আন্দোলন নয়, এই আন্দোলন বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের মুক্তির আন্দোলন। আরেকটি আন্দোলনে বাংলাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল, সেটা ছিল স্বাধীনতার আন্দোলন। মুক্তিযুদ্ধের পর আজ বাংলাদেশে আরেকটি মুক্তিযুদ্ধের আন্দোলন শুরু হয়েছে। এই আন্দোলন বাংলাদেশের মানুষের মালিকানা, ভোটাধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, জীবনের নিরাপত্তার আন্দোলন। বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে অনির্বাচিত শেখ হাসিনাকে বিদায় দেয়ার। সেজন্য লক্ষ জনতা রাস্তায় নেমেছে। এই আন্দোলন সফল সমাপ্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
বিএনপির নীতি-নির্ধারণ ফোরামের এই নেতা বলেন, মানুষ এখন বুক পেতে দিচ্ছে। কোনো অস্ত্র, গুলি কাজ করছে না। আমাদের সাথে বাংলাদেশের মানুষ, তাদের সাথে কেউ নাই। বিদেশী বন্ধুরাও নাই। তিনি বলেন, জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ক্ষমতায় থাকার সুযোগ নাই। তারা রাজনৈতিকভাবে পরাজিত হয়ে গেছে। তারেক রহমানের নির্দেশমতো ফয়সালা রাজপথে করতে হবে। প্রয়োজনে প্রাণ দিতে প্রস্তুত থাকতে হবে। আমরা শেষপথে চলে আসছি। এই আন্দোলনে মানুষ জয়ী হবে। কোনো অস্ত্র-গুলি এই আন্দোলন ঠেকাতে পারবে না।
গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত সরকারের সভাপতিত্বে সমাবেশে সাবেক এমপি হাসান সরকার, জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।