গুজবে টালমাটাল শেয়ারবাজার
একাধিক গুজব ছড়িয়ে পড়ায় সোমবার (১৪ আগস্ট) দেশের শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়েছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গড়পড়তা সব খাতের প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমেছে।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: একাধিক গুজব ছড়িয়ে পড়ায় সোমবার (১৪ আগস্ট) দেশের শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়েছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গড়পড়তা সব খাতের প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমেছে। এতে সবকটি মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। সেইসঙ্গে কমেছে লেনদেনের গতি। এর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহের দুই কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন হলো।
সোমবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার আগেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে হ্যাকাররা একাধিক ব্যাংক হ্যাকিংয়ের চেষ্টা করছে। সেইসঙ্গে আরও গুজব ছড়ায় প্রভাবশালী একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশ নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে। এ ধরনের গুজব ছড়িয়ে পড়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক দেখা দেয়।
আতঙ্কে লেনদেনের শুরু থেকেই এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ায়। ফলে শেয়ারবাজারে লেনদেনে শুরু হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমে যায়। সেইসঙ্গে কমে মূল্যসূচক। লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাজারেও বিক্রির চাপও বাড়তে থাকতে। ফলে লেনদেনের সময় যত গড়াই সূচকের পতন ততই বাড়তে থাকে। এতে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমার মাধ্যমে দিনের লেনদেন শেষ হয়। সেইসঙ্গে বড় পতন হয় সবকটি মূল্যসূচকের।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে মাত্র ১৯ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৪৮টির। আর ২২৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৩০ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ২৫৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ৬ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৫৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৩ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১২৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
শেয়ারবাজারের এ দরপতন সম্পর্কে আব্দুর রাজ্জাক নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, সকালে ব্রোকারেজ হাউসে আসার পরপরই গুঞ্জন শুনতে পাই একাধিক ব্যাংক হ্যাকিংয়ের ঝুঁকিতে রয়েছে। সেইসঙ্গে আরও গুঞ্জন ছড়ায় প্রভাবশালী একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশ নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে। এছাড়া রিজার্ভও কমে যাবে বলে বাজারে গুঞ্জন ছড়িয়েছে। সবকিছু মিলেই সব থেকেই বাজারে বিক্রির বেশ চাপ ছিল। তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। আতঙ্কে সবাই কম দামে শেয়ার বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এ কারণে গড়পড়তা সব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমে গেছে। দাম কমে যাওয়া দেখে আমিও লোকসানে কিছু শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছি।
ডিএসইর এক সদস্য বলেন, আজ বাজারে যেভাবে পড়েছে, তাতে স্পষ্ট বিনিয়োগকারীরা প্যানিক হয়ে পড়েছে। প্যানিকে অনেকে বিক্রির চাপ বাড়িয়ে দিয়েছে। এ প্যানিকের পেছনে বিভিন্ন গুজব কাজ করতে পারে। মূলত বিনিয়োগকারীরা প্যানিক হয়ে বিক্রির চাপ বাড়ানোর কারণেই আজকের এ দরপতন। তাছাড়া বাজারে এমন দরপতন হওয়ার কোনো স্বাভাবিক কারণ নেই। সবকটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪১৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৪২৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন কমেছে ১১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার। কোম্পানিটির ২৩ কোটি ৬৭ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সোনালী পেপারের ১৯ কোটি ১৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে জেমিনি সি ফুড। এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, রূপালী লাইফ ইনস্যুরেন্স, এমারেল্ড অয়েল এবং লিগাসি ফুটওয়্যার।
অপর শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৬৫ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৫১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৮টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৭৯টির এবং ৫৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ২৯ লাখ টাকা।