ক্রসরোডে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ, দেখছে সারা বিশ্ব

কোটা বিরোধী আন্দোলনের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ‘বাংলাদেশ ক্রসরোডে দাঁড়িয়ে’ কথাটি ফের আলোচনায়।

ক্রসরোডে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ, দেখছে সারা বিশ্ব

প্রথম নিউজ, অনলাইন: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিভিন্ন সময় ‘বাংলাদেশ ক্রসরোডে দাঁড়িয়ে’ এমন কথাটি বেশ কয়েকবার শোনা গিয়েছিল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখ থেকে, ছাপা হয়েছিল খ্যাতনামা বিদেশি পত্রিকাগুলোতেও। কোটা বিরোধী আন্দোলনের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ‘বাংলাদেশ ক্রসরোডে দাঁড়িয়ে’ কথাটি ফের আলোচনায়।

এবার যার মুখ থেকে এই কথাটি বেরিয়েছে তিনি ইউরোপের শক্তিশালী দেশ জার্মানির সাবেক মন্ত্রী রেনাতে কুনাস্ত। তিনি যে দেশটির বর্তমান সংসদ সদস্য তাই নয়, গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে জার্মানির পার্লামেন্টের ছয় সদস্যের যে প্রতিনিধি দল আনুষ্ঠানিক সফরে বাংলাদেশে এসেছিল, ওই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বেও ছিলেন জার্মান-সাউথ এশিয়া পার্লামেন্টারি গ্রুপের চেয়ারওম্যান রেনাতে কুনাস্ত।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ইস্যুতে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক এর বিবৃতির প্রসঙ্গ তুলে ধরে জার্মানির বিখ্যাত জেনিথ ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রেনাতে কুনাস্ত বলেন, ‘জাতিসংঘের প্রতিক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ। এ থেকে এটাই বোঝা যায় যে,  বাংলাদেশে যা ঘটে তা সারা বিশ্বে অনুভূত হয়।’

সাম্প্রতিক ঘটনাসমূহের পর বাংলাদেশের উন্নয়নে সহায়তায় ইউরোপ থেকে (২০২৬ সালে এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের পর) জিএসপি+ সুবিধা পাওয়া আরও কঠিন হয়ে গেলো- মন্তব্য করে তিনি জানান, মানবাধিকারের লঙ্ঘন ব্যবসা বা বিনিয়োগ লাভের জন্য ভালো নয়। বাংলাদেশ সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তারা কোন পথে যাবে।

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ ব্যাপকভাবে, স্বাধীনভাবে এবং স্বচ্ছভাবে স্পষ্ট করতে হবে বলে দাবি জানান রেনাতে কুনাস্ত। অন্যথায় কি হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দাবি করবে সরকার বাইরে থেকে স্বাধীন তদন্তের অনুমতি দিক। সেক্ষেত্রে, তদন্তকারীদের অবশ্যই (তাদের মতো করে) কাজ করার সক্ষমতা দিতে হবে। যার অর্থ: অবশ্যই সকল ব্যক্তি এবং প্রাসঙ্গিক উৎসগুলোতে অ্যাক্সেস থাকতে হবে। তখন কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই সাংবিধানিক মান অনুযায়ী একটি ব্যাপক তদন্তকে গুরুত্ব সহকারে সাহায্য করতে হবে।’

ডিজিটাল যুগে বিদ্যুৎবেগে সারা বিশ্বে সকল তথ্য ছড়িয়ে পড়ে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এগুলোকে দমিয়ে রাখা যায় না। খারাপ মানবাধিকার পরিস্থিতি বিনিয়োগের জন্য অনুকূল নয়। বিশেষ করে বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্প দেখায় যে ভিন্ন পথও আছে।’

বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে বললে রেনাতে কুনাস্ত রানা প্লাজা দুর্ঘটনার স্মৃতিচারণ করে বলেন, 'এরপর ব্যবসায়ীরা স্থানীয় মানবাধিকার গোষ্ঠী এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এর চাপে বুঝতে পারেন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ ছাড়া রপ্তানিতে ভালো করা যাবে না। সরকারও খুব পরিশ্রম করেছে। কাজের পরিবেশের অনেক উন্নতি হলে ইইউ'র সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্কেরও উন্নতি হয়। এখানকার টেক্সটাইল ব্যবসা ক্রমবর্ধমানভাবে শ্রমিক এবং পরিবেশগত অধিকারের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। আমরা তাই কড়া নজরে রাখছি।'

জিএসপি+ সুবিধার জন্য বাংলাদেশের আরও বহুমুখী উৎপাদন করা প্রয়োজন- উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই ধরনের পুলিশি সহিংসতার ঘটনাগুলোতেও সেটা বাদ পড়ার সম্ভাবনা বেশি। আপনি উৎপাদন খাতে সুনাম অর্জন করতে চাইবেন, আবার একই সঙ্গে গণতান্ত্রিক নীতিকে ব্যাপকভাবে উপেক্ষা করবেন; তাতে ভালো হবে না। বাংলাদেশ সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’