কোন বাধাই সরকার পতন আন্দোলন ঠেকানো যাবে না : মির্জা ফখরুল

আজ শনিবার বিকালে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি আয়োজিত বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

কোন বাধাই সরকার পতন আন্দোলন ঠেকানো যাবে না : মির্জা ফখরুল

প্রথম নিউজ, খুলনা: কোন বাধাই সরকার পতন আন্দোলন ঠেকানো যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আন্দোলন ছাড়া বিএনপির সামনে আর কোন পথ নেই।

আজ শনিবার বিকালে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি আয়োজিত বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এদিকে, বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে খুলনায় গণপরিবহন ও লঞ্চ বন্ধ রয়েছে। সমাবেশে যোগ দিতে নানা কৌশলে শুক্রবার রাতেই নেতা-কর্মীরা খুলনায় আসেন। শনিবার দুপুর পৌনে ১২টায় নগরীর সোনালী ব্যাংক চত্বরে নির্ধারিত সময়ের আগেই সমাবেশ শুরু হয়। দলে দলে সমাবেশে যোগ দেন নেতা-কর্মীরা। সমাবেশস্থল জনস্রোতে রূপ নেয়।  

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ১০টি আসনও পাবে না বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট সরকারকে পরাজিত করা হবে।

সরকারের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। সংসদ বিলুপ্ত করে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। কারণ আপনাদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৭৩ দিন হরতাল পালন করেছে আওয়ামী লীগ। তিনি বলেন, তিন দিন ধরে সমস্ত কিছু বন্ধ করে দিয়েছে। দুদিন ধরে বাস বন্ধ করে দিয়েছে। নৌপরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু এত কিছুর পরেও গণতন্ত্রের লড়াইয়ের যে সংগ্রাম, তাতে বাধা দিতে পারেনি। প্রশাসনকে ব্যবহার করে জনগণকে দমিয়ে রাখা যায় না। আজকে সেটা আবার প্রমাণ হয়েছে।

সরকারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার সংবিধানকে লঙ্ঘন করেছে মানবাধিকারকে লংঘন করেছে, আমাদের বিচার বিভাগের সম্পূর্ণ দলীয়করণ করেছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে নষ্ট করে দিয়েছে, মানুষ সেবা পায় না। ‘আজকে যদি আমরা জনগণের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এই সরকারের পতন করতে পারি এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি।... আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন টেকব্যাক বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে ফিরিয়ে নিয়ে আসো, কোন বাংলাদেশ? যে বাংলাদেশের জন্য আমরা ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছিলাম। সমৃদ্ধির বাংলাদেশ, মানবিকের বাংলাদেশ, মানবাধিকারের বাংলাদেশ, ভালোবাসার বাংলাদেশ। আমরা সেই বাংলাদেশকে ফিরে পেতে চাই’—যোগ করেন তিনি। মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা ভবিষ্যতে যদি রাষ্ট্র ক্ষমতার দায়িত্ব পাই তাহলে তরুণ যুবকদের জন্য কাজের ব্যবস্থা করব। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব, চাকরির ব্যবস্থা করব। ন্যায় বিচার করার ব্যবস্থা করব। আর যারা মেগা প্রযুক্তির নামে মেগা দুর্নীতি করেছে তা তদন্তের কমিশন গঠন করব।


বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, বিএনপির ইতিহাস গণতন্ত্র উদ্ধারের ইতিহাস। তাই এ দলটিকে আওয়ামী লীগ ভয় পায়। এ সময় তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে আরো বেশি শক্তি নিয়ে রাজপথে নামার আহ্বান জানান। তিান বলেন, ‘খুলনাবাসীকে বলতে চাই, আরো দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে রাজপথে নামতে হবে। যে দলের ইতিহাস গণতন্ত্র উদ্ধারের ইতিহাস, আওয়ামী লীগ সেই দলকে তো ভয় পাবেই। তিনি বলেন, দুর্নীতি ও দ্রব্যমূল্য আওয়ামী লীগ বাড়িয়েছে। এসব কথা বললে আওয়ামী লীগ ভয় পায়। ১৪ বছর ধরে বেগম খালেদা জিয়াকে নানাভাবে হয়রানি করছেন। মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে আটকে রেখেছেন। আমাদের নেতা তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাসনে রেখেছেন। এই সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে পুলিশকে অবৈধভাবে ব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। বিএনপির সিনিয়র এ নেতা বলেন, সরকার হটানো ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প নেই। জাতির কোনো বিকল্প নেই। জাতিকে যদি গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে হয়, তাহলে এই সরকারকে বাতিল করে নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, খুলনায় আওয়ামী লীগের শোচনীয় পরাজয় হয়েছে। সরকারি দলের হামলা, পুলিশের গণগ্রেফতার, যানবাহন বন্ধ ও সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির পরও লাখ লাখ লোকের সমাগম ঘটিয়ে আজকের গণসমাবেশ সফল করে খুলনার মানুষ বীরত্বের পরিচয় দিয়েছে। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতা আটকে রেখেছে। এ সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসায় জনগণের ওপর সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে আর এর মাশুল দিচ্ছে জনগণ। তিনি আরো বলেন, আমরা জনগণের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে নেমেছি। জনগণকে সঙ্গে নিয়েই আমরা এ লড়াইয়ে বিজয়ী হয়ে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবো। অবৈধ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার মাধ্যমে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করবো। ড. মঈন খান বলেন, সরকার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে প্রচণ্ড ভয় পায় বলেই তাকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলা দিয়ে দণ্ড দিয়েছে। অবৈধ এ সরকারের বিদায়ের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবো।

জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, দলীয় কর্মসূচিতে গুলি করে নেতা-কর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপক্ষে সরকারের দাবিতে বিভাগীয় (দলের সাংগঠনিক বিভাগ) পর্যায়ে সমাবেশ করছে বিএনপি। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় সমাবেশ সম্পন্ন করেছে দলটি।

সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডক্টর খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ডক্টর আব্দুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায়চৌধুরী, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom