কে এই ৪০০ কোটি টাকার মালিক পিয়ন?

প্রধানমন্ত্রী বাসায় কাজ করা ওই ব্যক্তির বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তার নাম জাহাঙ্গীর আলম ওরফে পানি জাহাঙ্গীর।

কে এই ৪০০ কোটি টাকার মালিক পিয়ন?

প্রথম নিউজ, অনলাইন: প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা আজ সংবাদ সম্মেলনে জানান, ‘আমার বাসায় পিয়নের কাজ করা লোক ৪০০ কোটি টাকার মালিক বনে গেছে।’ এ তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশের পর থেকেই দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বাসায় কাজ করা ওই ব্যক্তির বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তার নাম জাহাঙ্গীর আলম ওরফে পানি জাহাঙ্গীর। তার বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিল থানাধীন খিলপাড়া ইউনিয়নে। জাহাঙ্গীর একসময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলীয় নেত্রী থাকার সময় সুধাসদনে কাজ করতেন। সে সময় সুধাসদনে আসা ব্যক্তিদের পানি এগিয়ে দেওয়ার কারণে তার নাম হয় পানি জাহাঙ্গীর। পরবর্তীতে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হলে তিনি তার ব্যক্তিগত কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী পরিচয় দিয়ে জাহাঙ্গীর আলম বিভিন্ন অনৈতিক কাজ করছেন এমন অভিযোগে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কোনও সম্পর্ক নেই। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রয়োজনে নিকটস্থ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তা নিতেও বলা হয়।

জানা যায়, জাহাঙ্গীর রাজধানী ঢাকায় একাধিক প্লট-ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন। ধানমন্ডিতে স্ত্রীর নামে আড়াই হাজার বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। এছাড়া নোয়াখালীর মাইজদী শহরের হরি নারায়ণপুরে তার আট তলা একটি বাড়ি রয়েছে। সেটিও তার স্ত্রীর নামে। সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য তিনি নোয়াখালীতে বিপুল অর্থও খরচ করেছেন। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে বিশাল বহর নিয়ে তিনি সভা-সমাবেশ করতেন। এসব সভা-সমাবেশের জন্য লাখ লাখ টাকা খরচ করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে সরকারের অনেক প্রভাবশালী মন্ত্রী ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে নিজের এলাকায় দাওয়াত করে নিয়ে যেতেন তিনি। যাতায়াতের জন্য হেলিকপ্টার ব্যবহার করতেন।

আরও জানা যায়, ধানমন্ডিতে আলিশান ফ্ল্যাট ছাড়াও রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও নিউমার্কেটে দুটি দোকান রয়েছে তার। ঢাকার মিরপুরে একটি সাত তলা ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে।

কোটি কোটি টাকার সম্পদ কামানোর পর রীতিমতো রাজনৈতিক মাঠে নেমে যান পিয়ন জাহাঙ্গীর। চাটখিল উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির পদও বাগিয়ে নেন। একই সঙ্গে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পাওয়ার জন্য নমিনেশন তুলেছিলেন। পরে নৌকা প্রতীক না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে পরবর্তীতে তিনি নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ান। তার বিরুদ্ধে নোয়াখালী-১ আসনের নৌকার প্রার্থী এইচ এম ইব্রাহীমের বিরোধিতা করে তাকে হারানোর পাঁয়তারার অভিযোগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সহকারী পরিচয় দিয়ে এই কাজ করার সময় তার বিরুদ্ধে বিজ্ঞপ্তি দেয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।

সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পিয়ন হিসেবে কাজ করার সময় ব্যক্তিগত পরিচয় দিয়ে তদবির, টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অপকর্ম করে বেড়িয়েছেন জাহাঙ্গীর। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচয় ব্যবহার করে গাজীপুরের ইপিজেড এলাকার ঝুট ব্যবসাও নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি।

বিপুল সম্পদের বিষয়ে জানতে একাধিকবার জাহাঙ্গীর আলমের ব্যক্তিগত মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।