এমপিদের দিকনির্দেশনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী

গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনের লেভেল ৯-এ সরকারি দলের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ওই বার্তা দেয়া হয়।

এমপিদের দিকনির্দেশনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রথম নিউজ, অনলাইন: আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের শেষ বৈঠকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বার্তা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনের লেভেল ৯-এ সরকারি দলের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ওই বার্তা দেয়া হয়। ৬টা ১০ মিনিটে শুরু হওয়া বৈঠক এক ঘণ্টারও বেশি সময় চলে। সভায় সংসদ নেতা দলের এমপিদের বক্তব্য শোনেন। আগামী নির্বাচনের জন্য এমপিদের সক্রিয়ভাবে নিজ এলাকায় কাজ করার নির্দেশনা দেন তিনি। পাশাপাশি দলীয় কোন্দলে জড়িত এমপিদের মনোনয়ন দেয়া হবে না বলে স্পষ্ট বার্তা দেন। আওয়ামী লীগের সভাপতি, সংসদীয় দলের নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। 

একাদশ জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের এটি অষ্টম ও শেষ সভা। বৈঠকে উপস্থিত কয়েকজন এমপি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের এমপিদের নির্বাচনের প্রস্তুতি সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। বিশেষ করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যেন ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে পারে সে ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া সরকার পতনের জন্য বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচির বিষয়ে দলীয় এমপিদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন দলীয় সভাপতি। 

বৈঠকে নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক কর্মসূচি, ২৮শে অক্টোবর রাজধানীতে বিএনপি’র মহাসমাবেশসহ তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কথা বলেন কয়েকজন এমপি। তারা জানান, নির্বাচনকে টার্গেট করে বিরোধী দলগুলো দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে। প্রধানমন্ত্রী এসব নিয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন। বৈঠক শেষে দলীয় প্রধানের বার্তা প্রসঙ্গে নরসিংদী-৩ আসনের এমপি জহিরুল হক ভুঁইয়া মোহন  বলেন, দলীয় প্রধান বলেছেন, একটি মহল নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করছে। আমরা একটা ফ্রি, ফেয়ার নির্বাচন করবো। নির্বাচনে বিএনপি আসবে কি আসবে না এটা তাদের বিষয়। তবে নির্বাচনে বিএনপি আসবে এটা ধরে নিয়েই আমাদের এগোতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দল থেকে যাকে মনোনয়ন দেয়া হবে তার জন্যই সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। কেউ যেন মোনাফেকি না করে। প্রধানমন্ত্রী নিজের নির্বাচনী এলাকায় এমপিদের অবস্থান তৈরির নির্দেশ দিয়ে বলেন, এলাকার প্রতিটি ভোটারের কাছে গিয়ে ভোট চাইতে হবে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের বিষয়গুলো তুলে ধরতে হবে। প্রচার করতে হবে। 

জাতীয় সংসদের হুইপ ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী সবাইকে নির্বাচনমুখী হয়ে জনগণের দোরগোড়ায় যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ দলীয় এমপিরা বলেন, আগামী ২৮শে অক্টোবরকে ঘিরে বিএনপিসহ বিভিন্ন বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীরা নাশকতা করতে পারে। বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করতে পারে। সে ব্যাপারে সংসদ সদস্যদেরকে এখন থেকেই তৎপর হওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। এমপিরা জানান, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও চ্যালেঞ্জিং হবে। ঐক্যবদ্ধ না থাকলে জয় সহজ হবে না। এবারে আরও কঠিন হবে। কারণ ষড়যন্ত্রকারীরা সব ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। জিততে হলে জনসম্পৃক্ততা ও জনপ্রিয়তা বাড়ান। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জনগণের কাছে তুলে ধরেন। 

বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে এই ষড়যন্ত্র চলছে বিষয়টি এমন না বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, তৃতীয় কোনো শক্তিকে ক্ষমতায় এনে দেশকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা চলছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভার কথা তুলে ধরে বলেন, সম্প্রতি লুলা ডি সিলভার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি আমাকে বলেছেন, যেভাবে ব্রাজিলকে গুছিয়ে রেখে গিয়েছিলাম এসে দেখি ছারখার করে দিয়েছে। এখন আমাদের দেশেও যদি অন্য কেউ ক্ষমতায় আসে দেশটা ধ্বংস করে দেবে। সুতরাং সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে ঐক্যবদ্ধ থেকে এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে। যোগ্যতা দিয়ে এবার মনোনয়ন পেতে হবে। এই সংসদে যারা আছেন তাদের অনেকে মনোনয়ন নাও পেতে পারেন। তাতে কেউ দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা বা বিদ্রোহী কর্মকাণ্ড করবেন না। যারা করবে তার রাজনীতি শেষ হয়ে যাবে। কাউকে চেয়ার দেয়া হবে না।

এবার নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে তাই নিজ যোগ্যতায় জয়ী হয়ে আসতে হবে। বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসতে পারে। আসলেও তারা বিতর্কিত করার চেষ্টা করবে। যদি না আসে তবে আরও অনেক দল নির্বাচনে আসার জন্য প্রস্তুত আছে। বৈঠকে বিএনপি’র আন্দোলন ও ২৮শে অক্টোবরের বিষয় নিয়ে কথা ওঠে। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওরা আন্দোলন করে করুক, আমাদের বাধা দেয়ার কিছু নেই, তবে রাজপথ আমরা ছেড়ে দেবো না। সভায় কয়েকজন এমপি বক্তব্য রাখেন। তাদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের এমপি একেএম শামীম ওসমান জোরালো বক্তব্য দেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ উপস্থিত এমপিদের অনেকেই তার বক্তব্যে সমর্থন জানান। 

কয়েকজন এমপি জানান, সভায় শামীম ওসমান বিএনপি-জামায়াতের বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরে বলেন, ওরা থেমে নেই। সারা দেশে আঞ্চলিক মিডিয়াগুলোতে জামায়াত অর্থায়ন করছে। সরকার, আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের এমপি, নেতা, মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে যা ইচ্ছা তাই লিখছে। প্রয়োজনে আমাকে মনোনয়ন দিয়েন না কিন্তু দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। যিনি জিতে আসতে পারবেন তাকে জিতে আসতে হবে। হাজার বছরে বঙ্গবন্ধু এসেছেন একজন ভবিষ্যতে লাখ বছরে একজন বঙ্গবন্ধু আসবেন কিনা সন্দেহ আছে। কিন্তু এখন প্রতি জেলায় জেলায় খোন্দকার মোস্তাকরা আছে। এরা আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার জন্য কাজ করছে। এই মোস্তাকদের চিহ্নিত করতে হবে, এদের থেকে সাবধান থাকতে হবে। রাজবাড়ীর এমপি কাজী কেরামত আলী নিজ জেলায় দলীয় কোন্দল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেন। 

লালমনিরহাটের এমপি ও সাবেক মন্ত্রী মোতাহার হোসেন অভিযোগ করেন, এলাকায় দলের ঐক্য থাকলেও অনেক সময় ঢাকা থেকে অনেকে সমস্যা তৈরি করে, ঢাকায় বসে গ্রুপিং সৃষ্টি করে দেয় এলাকায়। এখন নির্বাচনকে সামনে রেখে অনেক মনোনয়নের ফেরিওয়ালা বেরিয়েছে। এরা সারা বছর মাঠে থাকে না, নির্বাচন আসলে তৎপরতা বাড়ে, এমপিদের বিরুদ্ধে সমালোচনা করে বক্তব্য দেয়, এতে দলের ক্ষতি হচ্ছে। এদের বিষয়ে নেত্রীর পদক্ষেপ নিতে হবে। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার কাছে সব তথ্য আছে, আমি সেভাবেই মনোনয়ন দেবো।