ইভিএম: দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে চায় ইসি
ইসির এ সংলাপ প্রক্রিয়া আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর বড় একটি অংশের সাড়া পেলেও বিএনপি ও সমমনা দলগুলোকে টানতে পারেনি।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত পর্যালোচনা শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন; চলতি মাসেই নতুন করে নির্বাচনী সংলাপে বসার পরিকল্পনা চলছে ইসিতে। প্রথম ডাকেই দুই তৃতীয়াংশের বেশি দলের সাড়া পেয়েছে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে কতটি আসনে কীভাবে হবে, সবার মতামত বিশ্লেষণ করে মাস দুয়েকের মধ্যে তা চূড়ান্ত করতে চায় নির্বাচন আয়োজনকারী সাংবিধানিক সংস্থাটি।
আগামী বছরের শেষভাগে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কর্মপরিকল্পনা করে সব ধরনের প্রস্তুতির লক্ষ্যে এগোচ্ছে কমিশন। ইভিএমে ভোট, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যে ইসি মতামত নিচ্ছে, সঙ্গে করণীয় বিষয়ে আশ্বস্ত করার পাশাপাশি নিজেদের এখতিয়ারও তুলে ধরছে। ইসির এ সংলাপ প্রক্রিয়া আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর বড় একটি অংশের সাড়া পেলেও বিএনপি ও সমমনা দলগুলোকে টানতে পারেনি। নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার চার মাসের মধ্যে ইভিএমে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা ও ইউপির দেড় শতাধিক এলাকায় ভোট করেছে।
এরই মধ্যে পেশাজীবী, বিশিষ্টজন, সম্পাদক, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, পর্যবেক্ষক সংস্থা, কারিগরি বিশেষজ্ঞ, সাবেক সিইসিসহ অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ হয়েছে। ইভিএমের কারিগরি বিষয় নিয়ে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মতামতও কমিশন পেয়েছে। নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবিব খান বলেন, “ইভিএম নিয়ে ইসির আমন্ত্রণে রাজনৈতিক দলের সাড়া, দলগুলোর কারিগরি বিশেষজ্ঞদের আগ্রহ-অনাগ্রহ ও নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহারে লব্ধ অভিজ্ঞতা- সার্বিক বিষয় নানা ধাপে আমরা বিশ্লেষণ করছি। জুলাই মাসে ইভিএম নিয়ে আমাদের সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হবে। সব কিছু পর্যালোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব, কোন পদ্ধতিতে, কতটি আসনে ও কীভাবে যাব।”
ঈদের পরে ইসি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন’ বিষয়ে সংলাপ শুরু করতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। “দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে আমরা দলগুলোর সঙ্গে জুলাই মাসে বসতে চাই। ঈদের পরেই সংলাপ শুরু করতে হবে। ইভিএম-এর কারিগরি বিষেয়ে একসঙ্গে ১৩টি করে দলকে নিয়ে তিন ধাপে বসেছিলাম; এবার ৩৯টি দলের সঙ্গে আলাদা আলাদা সঙ্গে বসব,” বলেন এ নির্বাচন কমিশনার।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছে ১৪টি দল: আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, তরিকত ফেডারেশন, সাম্যবাদী দল-এমএল, গণতন্ত্রী পার্টি, জাতীয় পার্টি-জেপি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাকের পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ, গণফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি। ইভিএমের বিপক্ষে মত দিয়েছে ১৪টি দল: জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক অন্দোলন-এনডিএম, বাংলাদেশ কংগ্রেস, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, গণফোরাম, বাংলাদেশ ন্যাপ ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট।
ইসির সংলাপে যায়নি ১১টি দল: বিএনপি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পাটি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি।
রাজনৈতিক দলগুলো কতটুকু সাড়া দিল, তাদের আন্তরিকতা, সংশয়, বিরোধিতা বিষয়গুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখছে নির্বাচন কমিশন। ইসির সংলাপে চারজন প্রতিনিধি নিয়ে উপস্থিত থাকার অনুরোধ করা হলেও অধিকাংশ দলই সভায় যোগ দিয়েছে দলের আরও ভারী হয়ে। আবার ইভিএম যাচাইয়ে দলগুলোকে ‘টেকনিক্যাল এক্সপার্ট’ সঙ্গে আনার অনুরোধ জানানো হলেও বেশিরভাগ দল সেটা করেনি। ২৮টি দলের মধ্যে ৫টি দল ‘টেকিনক্যাল পার্সন’ সঙ্গে এনেছিলেন। কিছু দল ইভিএমে সম্পূর্ণ একমত। কিছু দল এ প্রযুক্তির আরও সংযোজন-পরিমার্জনের পক্ষে। কিছু দল নেতিবাচক অবস্থান জানিয়েছে।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, সংলাপে পাওয়া মতামত কয়েকটি ধাপে বিশ্লেষণ করবে কমিশন। এর মধ্যে কতটি দল এসেছে, কয়টি দল আসেনি, সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলো কী বলেছে, টেকনিক্যাল টিম কারা নিয়ে এসেছে বা আনেনি কেন; দেড় শতাধিক ইভিএমের ভোটে গোলোযোগ, জালভোট, কেন্দ্রদখল, সহিংসতা না ঘটা ও ভোটারের আস্থার বিষয়গুলো যাচাই বাছাই করা হবে। নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খানের মতে, ইভিএমের কারিগরি দিক নিয়ে অসন্তুষ্ট থাকলে দলগুলো অবশ্যই তাদের ‘বিশেষজ্ঞ’ নিয়ে আসত। যেহেতু আনেনি, এ নিয়ে তাদের এক ধরনের ‘ইতিবাচক’ অবস্থান ধরে নেওয়া যায়।
দায়িত্ব নেওয়ার পর বর্তমান কমিশন সব ধরনের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে ইভিএমে ভোট করেছে। এসব নির্বাচনে কোনো সহিংসতা ছিল না, কেন্দ্র দখল ও জালভোটের অভিযোগ নেই, কারিগরি জটিলতাও সেভাবে হয়নি। ইতিবাচক বিষয়গুলোর পাশাপাশি মাঠের অভিজ্ঞতাগুলোসহ সব বিষয় যৌক্তিকভাবে নিয়ে স্বল্প সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে চায় কমিশন। দক্ষ জনবল তৈরি, প্রশিক্ষণ, আসন সংখ্যা নির্ধারণ, ইভিএম প্রস্তুতে কারিগরি দিক ও অর্থ বরাদ্দের বিষয়ও এর মধ্যে থাকছে। একাদশ সংসদে মাত্র ছয়টি আসনে ইভিএমে ব্যবহার হয়। আগামী বছরের ভোটে ইভিএম ব্যবহার বাড়াতে চাইলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে দ্রুত, কারণ এ প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিতে সময় লাগবে বেশ।
গত ২৮ জুন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালও বলেছেন, “ইসির মত বিনিময়ে ইভিএমের পক্ষে এবং বিপক্ষে কথাবার্তা হয়েছে। সব আলোচনা্ লিপিবদ্ধ করেছি। আমাদের সামর্থ্য কতগুলো তা দেখব। এরপর সিদ্ধান্ত নেব। সম্পূর্ণ বা ফিফটি ফিফটি করব কি-না সে সিদ্ধান্ত নেব।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews