ইউক্রেন যুদ্ধে কেন হারছে রাশিয়া?
চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন আক্রমণ করে রাশিয়া
প্রথম নিউজ, ডেস্ক : চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন আক্রমণ করে রাশিয়া। ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির দেশের চেয়ে শক্তি ও সংখ্যায় অনেক বড় রাশিয়ার সেনাবাহিনী। ফলে স্বাভাবিকভাবেই অনেকে ভেবেছিলেন, ১০ দিনের মধ্যেই হয়তো ইউক্রেন জয় করে ফিরে যাবে রাশিয়ার সেনা।
রাশিয়াও ঠিক সেই একই ভুল ভেবেছিল। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। ইউক্রেন প্রমাণ করে দিয়েছে যে, রাশিয়ার ভাবনায় ভুল ছিল।
২০১৪ সালে ক্রিমিয়া আক্রমণ করেছিল রাশিয়া। ক্রেমলিন স্বীকার না করলেও সে সময় একের পর এক ইউক্রেন বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান এবং হেলিকপ্টার ধ্বংস করেছিল তারা। এত দ্রুততার সঙ্গে সে কাজ করা হয়েছিল যে, ইউক্রেন বাধ্য হয়েই বিমানবাহিনীর ব্যবহার বন্ধ করে দেয়। রাশিয়া এবারেও ইউক্রেনের বিমানবাহিনীকে একইরকম ভেবেছিল। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। শুধু তা-ই নয়, রাশিয়া ভাবতে পারেনি, গত কয়েকবছরে ইউক্রেনের মিসাইল সিস্টেম কতটা উন্নত হয়েছে।
আকাশে এবং স্থলে রাশিয়ার বাহিনীকে আটকে দিয়েছে ইউক্রেনের সেনা। রাশিয়ার বিরাট সেনা কনভয় কিয়েভ পৌঁছাতে পারেনি। সেই থেকেই রাশিয়ার অংক ভুল হতে শুরু করে। স্বীকার না করলেও ডিসেম্বরে পৌঁছে প্রেসিডেন্ট পুতিন লম্বা যুদ্ধের পরিকল্পনা করতে শুরু করেছেন। আগে যে অংক তার মাথায় ছিল না। ক্রেমলিন বুঝতে পারছে, এত সহজে ইউক্রেন যুদ্ধ জেতা সম্ভব হবে না।
চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার বিমানবাহিনী জানিয়েছিল, গোটা ইউক্রেনের আকাশসীমা তারা দখল করে নিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, তাদের দাবি অসত্য। একের পর এক বিমান হামলা এবং গোলাবর্ষণ হলেও ইউক্রেনের সেনাবাহিনী তার জবাব দিয়েছে।
২০১৪ সালের মতো ভেঙে পড়েনি। তারা পাল্টা আঘাতও করেছে। ইউক্রেনের দাবি, যুদ্ধে এখনও পর্যন্ত তারা শতাধিক রাশিয়ার যুদ্ধবিমান এবং হেলিকপ্টার ধ্বংস করেছে। যদিও এই তথ্য যাচাই করা সম্ভব হয়নি। পশ্চিমা গোয়েন্দারাও একই দাবি করেছে।
বস্তুত, ইউক্রেনে বিমানহামলা কমিয়ে দিয়েছে রাশিয়া। তারা সীমান্তে হামলা চালালেও ইউক্রেনের ভেতরে ঢুকে আর সেভাবে হামলা চালাচ্ছে না। এর পরিবর্তে ড্রোন ব্যবহার করছে রাশিয়া। কিন্তু ইউক্রেনের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম একের পর এক রাশিয়ার ড্রোনও ধ্বংস করেছে।
রাশিয়ার সেনার সংখ্যা বিরাট। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু আগেই রাশিয়া বিপুল পরিমাণ নৌবহর পূর্ব ইউক্রেন সীমান্তে পাঠিয়ে দিয়েছিল।ক্রিমিয়ায় ঢুকে রীতিমতো মহড়া চালিয়েছিল রাশিয়ার সেনা। কিন্তু বাস্তব যুদ্ধে তার প্রভাব খুব বেশি চোখে পড়েনি।
এত রণতরী পাঠিয়েও রাশিয়া শুধুমাত্র স্নেক আইল্যান্ড দখল করতে পেরেছে। কৃষ্ণসাগরে স্নেক আইল্যান্ড কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপ। কিন্তু তারচেয়ে বেশি কিছু নয়। স্নেক আইল্যান্ড দখল করলেও সেখান থেকে বিরাট কোনও লড়াই চালাতে পারেনি রাশিয়া।
উল্টোদিকে রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ দুই জাহাজ মিসাইল দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইউক্রেন। দুইটি জাহাজই ডুবে গেছে। ইউক্রেনের কাছে যা বিরাট জয়। ওই দুই জাহাজ ডুবে যাওয়ার পরে জলপথে রাশিয়ার প্রভাব কার্যত অনেকটাই কমে গেছে। গভীর সমুদ্রে রাশিয়ার নৌঘাঁটিতে ড্রোন আক্রমণ চালিয়েছে ইউক্রেন। ফলে ওই ঘাঁটিও আর খুব সুরক্ষিত নয়।
রাশিয়া প্রাথমিকভাবে কৃষ্ণসাগরে অবরোধ করেছিল। কিন্তু পরে তুরস্ক এবং জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় তারা সেই অবরোধ তুলে নেয় ও খাদ্যশস্যের জাহাজ ছাড়তে বাধ্য হয়। অক্টোবরে তাদের জাহাজে আক্রমণের পর রাশিয়া এই চুক্তি থেকে সরে যেতে চেয়েছিল।
কিন্তু তুরস্ক ও জাতিসংঘের চাপে তা সম্ভব হয়নি। সে সময় তারা ইউক্রেনের সঙ্গে সমঝোতায় যায় যে, ওই করিডোর থেকে ইউক্রেন তাদের নৌবহরের উপর হামলা চালাবে না। এর থেকেই প্রমাণ হয়, ওই অঞ্চলে রাশিয়ার নৌসেনা কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
চলতি যুদ্ধে ইউক্রেন অনেকটা এগিয়ে গেছে সাইবার লড়াইয়ে। পশ্চিমা দেশের সহযোগিতায় রাশিয়ার সাইবার স্পেস তছনছ করে দিতে পেরেছে ইউক্রেন। গত ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়ার সার্ভার, ইন্টারনেট স্পেসে একের পর এক হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। যুদ্ধে তার বড় ফলও মিলেছে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews