‘আমরা আর আলু লাগামু না’

দিন দিন কমছে আলুর দাম। ফলে লাভ তো দূরের কথা উৎপাদন খরচও মিলছে না। এতে চরম হতাশায় রয়েছে কৃষক ও হিমাগার কর্তৃপক্ষ।

 ‘আমরা আর আলু লাগামু না’

প্রথম নিউজ, মুন্সীগঞ্জ: হিমাগারে মজুতের সময়সীমা শেষ হয়ে আসলেও মুন্সীগঞ্জের হিমাগারগুলোতে এখনো অর্ধেকের বেশি আলু পড়ে রয়েছে। এদিকে দিন দিন কমছে আলুর দাম। ফলে লাভ তো দূরের কথা উৎপাদন খরচও মিলছে না। এতে চরম হতাশায় রয়েছে কৃষক ও হিমাগার কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে মুন্সীগঞ্জ সদর, টঙ্গিবাড়ী ও সিরাজদিখান উপজেলার বিভিন্ন হিমাগার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে ৫০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৭৫০ টাকা দরে। যা প্রতি কেজি পড়ে ১৪-১৫ টাকা। অথচ আলু উৎপাদন, হিমাগার ভাড়া, বস্তা কেনা, হিমাগারে নিতে যাতায়াত ভাড়াসহ কৃষকের খরচ পড়ে ১৮-২০ টাকা। তাই কমপক্ষে উৎপাদন খরচ পাওয়ার আশায় দীর্ঘ দিন ধরে হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করে রেখেছেন কৃষক। কিন্তু দিন দিন কমছে আলুর দাম। এতে হতাশা বাড়ছে কৃষকদের মধ্যে।

মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৩৫ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। আর আলু উৎপাদন হয়েছে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ মেট্রিক টন। জেলায় আলু সংরক্ষণের জন্য ৬৪টি সচল হিমাগার রয়েছে। এসব হিমাগারে সাড়ে পাঁচ লাখ মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করা হয়েছিল।   মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মোল্লাকান্দি এলাকার আলুচাষি গিয়াস উদ্দিন মোল্লা বলেন, গত বছর ১৪শ বস্তা আলু হিমাগারে রেখে ৯ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। এবার ৮শ বস্তা রাখছি। আলু উৎপাদন এবং হিমাগারে রাখতে খরচ ৫০ কেজির প্রতি বস্তা ৯৫০ টাকা করে। এখন আলুর বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা। এ অবস্থা চলতে থাকলে আমরা আর আলু লাগাতে পারব না।

সদর উপজেলার মহেশপুর গ্রামের আলুচাষি হাজী বাচ্চু মিয়া বলেন, সব জিনিসের দাম বাড়ছে। ৫ টাকার চা এখন ১০ টাকা হইছে। চিনি ১২০ টাকা কেজি অথচ আলুর দাম দিন দিন কমছে। এদিকে সারের দামও বেড়েছে। আমরা আর আলু খেতি করমু না। টঙ্গিবাড়ী কম্বাইড ফুড অ্যান্ড কোল্ড স্টোরের ব্যবসায়ী মাসুদ শেখ বলেন, আলুর দাম দিন দিনই কমছে। গত ১৫ দিন আগেও আলু ৮০০-৮৫০ টাকা বস্তা ছিল। এখন আলু ৭০০ টাকা বস্তা। আমি ঢাকার কারওয়ান বাজার ও নোয়াখালী জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আলু বিক্রি করে থাকি।  

কম্বাইড ফুড অ্যান্ড কোল্ড স্টোরের সহকারী ম্যানেজার হৃদয় ইসলাম বলেন, আমাদের স্টোরের ধারণক্ষমতা ১ লাখ ২০ হাজার বস্তা। ৫৫ হাজার বস্তার মতো বিক্রি হয়েছে। বাকি আলু এখনো হিমাগার আছে। তবে এর মধ্যে কিছু বীজ আলুও রয়েছে। আমরা প্রতি বস্তা ভাড়া ২২০ টাকা নিচ্ছি। বর্তমানে আলুর দাম কমছে। তাই আলু বিক্রি করতে কৃষক হিমাগারে আসছে না।

ইউনুস কোল্ডস্টোরের ম্যানেজার শফিউল আলম বলেন, ৩০ নভেম্বর আলু হিমাগারে মজুতের শেষ সময়। কিন্তু এখনো অর্ধেক আলু হিমাগারে রয়ে গেছে। এ বছর মনে হয় না সব আলু বিক্রি হবে। বর্তমানে ৭০০ টাকা বস্তা হিসেবে আলু বিক্রি হচ্ছে। টঙ্গীবাড়ীর মদিনা কোল্ডস্টোর প্রাইভেট লিমিটেডের ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের স্টোরের ধারণক্ষমতা সাড়ে চার লাখ বস্তা। আমরা এ বছর রাখছিলাম সাড়ে ৩ লাখ বস্তা। এ পর্যন্ত ২ লাখ ১৫ হাজার বস্তা বিক্রি হয়েছে। ৩০ নভেম্বর আলু মজুতের শেষ সময়। মনে হয় না এই সময়ের মধ্যে বাকি আলু বিক্রি হবে। বিদ্যুৎ সংকটের কারণে আমাদের অনেক বিপাকে পড়তে হচ্ছে। আগামী বছর যদি আমরা ঠিকমতো বিদ্যুৎ না পাই তাহলে হিমাগার ব্যবসা বিপর্যয়ে পড়বে। এতে কৃষক হিমাগার কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সিরাজদিখান উপজেলার সম্রাট কোল্ডস্টোরের ম্যানেজার মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের কোল্ডস্টোরে ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৯০ হাজার বস্তা। এ পর্যন্ত মাত্র ৬১ হাজার বস্তা আলু বিক্রি হয়েছে। এখনো ১ লাখ ৩৫ হাজার বস্তা আলু রয়ে গেছে। আমাদের হিমাগার বন্ধ হতে আর মাত্র এক মাস বাকি আছে। এই অল্প সময়ে এতো আলো কিছুতেই বিক্রি হবে না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. খুরশিদ আলম বলেন, দেশে আলুর ভবিষ্যৎ ভালো নয়। বাংলাদেশে আলুর চাহিদা ৮০ লাখ মেট্রিক টন আর উৎপাদন হচ্ছে ১ কোটি ১০ লাখ মেট্রিক টন। বিদেশে আলু রপ্তানি করা যাচ্ছে না। প্রয়োজনের তুলনায় আলু বেশি হওয়ায় দাম কমে যাচ্ছে। আমরা কৃষকদের অন্য ফসল উৎপাদনের পরামর্শ দিচ্ছি। কিন্তু মুন্সীগঞ্জে কৃষক পরিশ্রমী না, তারা বার বার আলু চাষ করেছে আর লোকসান দিচ্ছে।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom