আট মাসে ৩৬১ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, স্কুলগামী মেয়েদের সংখ্যা বেশি
প্রথম নিউজ, ঢাকা : গত জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে ৩৬১ জন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে বেসরকারি সংস্থা ‘আঁচল ফাউন্ডেশন’। একই সময়ে ২০২২ সালে আত্মহত্যা করেছিল ৩৬৪ জন শিক্ষার্থী।
শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে অনলাইনে আয়োজিত ‘শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার ক্রমবর্ধমান: কোন পথে সমাধান’— শীর্ষক সমীক্ষার ফলাফল তুলে ধরে একথা জানান হয়।
২০২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে চালানো সমীক্ষায় আত্মহত্যার ঘটনা ছিল ১০১টি। আর ২০২২ সালে দেশে আত্মহত্যাকারী মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৫৩২। এরই ধারাবাহিকতায় এই বছর দেশের ১০৫টি জাতীয়, স্থানীয় পত্রিকা এবং অনলাইন পোর্টাল থেকে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার তথ্য সংগ্রহ করে সংস্থাটি।
সমীক্ষার তথ্য বলছে, গত আট মাসে গড়ে প্রতি মাসে প্রায় ৪৫ দশমিক ১৩ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে। যেখানে স্কুলের শিক্ষার্থী ১৬৯ জন, কলেজ শিক্ষার্থী ৯৬ জন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ৬৬ জন এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থী রয়েছেন ৩০ জন। ৩৬১ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ছেলে শিক্ষার্থী ১৪৭ জন, আর মেয়ে শিক্ষার্থী ছিল ২১৪ জন।
আত্মহত্যার শীর্ষে ঢাকা
এই বছরের আগস্ট পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। এই বিভাগে আত্মহত্যা করেছে ৩১ দশমিক ৩০ শতাংশ। এছাড়াও খুলনা বিভাগে ১৩ শতাংশ, চট্টগ্রামে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ, রংপুরে ৮ দশমিক ৯০ শতাংশ, ময়মনসিংহে ১০ শতাংশ, রাজশাহীতে ১১ দশমিক ৯০ শতাংশ, বরিশালে ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং সিলেটে আত্মহত্যা করেছে ২ দশমিক ৫ শতাংশ।
মেয়ে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার বেশি
আত্মহত্যার ক্ষেত্রে সংখ্যায় মেয়ে শিক্ষার্থীরা বেশি। ৩৬১ জনের মধ্যে গত আট মাসে আত্মহত্যা করেছে ৫৯ দশমিক ৩০ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী। বাকি ৪০ দশমিক ৭০ শতাংশ ছেলে শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে।
শুধু মেয়ে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার কারণ বিবেচনায় দেখা যায়— ২৬ দশমিক ৬০ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী অভিমানে, প্রেমঘটিত কারণে ১৮ দশমিক ৭০ শতাংশ, মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণে ৮ দশমিক ৪০ শতাংশ, পারিবারিক বিবাদের কারণে ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ, ৫ দশমিক ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী যৌন হয়রানির কারণে এবং পড়াশোনার চাপ ও ব্যর্থতার কারণে ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ আত্মহত্যা করেছে।
আত্মহত্যায় স্কুলগামী শিক্ষার্থী বেশি
আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষার স্তর বিবেচনায় দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছে স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা। মোট আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীদের ৪৬ দশমিক ৮ শতাংশই ছিল স্কুলগামী। এদের মধ্যে মেয়ে শিক্ষার্থী ছিল ১১২ জন এবং ছেলে শিক্ষার্থী ছিল ৫৭ জন।
এছাড়া আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে কলেজগামী শিক্ষার্থী ছিল ২৬ দশমিক ৬০ শতাংশ। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ছিল ১৮ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং আত্মহননকারীদের মাঝে মাদ্রাসার শিক্ষার্থী রয়েছে ৮ দশমিক ৩১ শতাংশ।
৮ মাসে ৩০ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
৩৬১ জন শিক্ষার্থীদের মাঝে ৩০ জন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী আত্মহনন করেছে। এদের মধ্যে মেয়ে শিক্ষার্থী ছিল ৫৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। আর ছেলে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার ছিল ৪৬ দশমিক ৭০ শতাংশ।
মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের ৪০ শতাংশের আত্মহত্যার পেছনে কারণ ছিল অভিমান। আর প্রেমঘটিত সম্পর্কের জন্য আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে ১৩ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং ১০ শতাংশের আত্মহত্যার পেছনে দায়ী যৌন নির্যাতন।
সংবাদ সম্মেলনে আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ বলেন, এর আগের আত্মহত্যার ডাটাগুলোতে আমরা দেখেছিলাম আত্মহত্যার পেছনে প্রেমঘটিত সম্পর্কের দায় বেশি থাকে, কিন্তু এবারে ভিন্ন তথ্য সামনে আসছে। আত্মহত্যার পেছনে মূল ভূমিকা রাখছে অভিমান। অভিমানের কারণে আত্মহত্যা পরিবারের সঙ্গে সন্তানদের সম্পর্ক কতটুকু মজবুত তা নিয়ে চিন্তার উদ্রেক করে। গতবছর আত্মহত্যার পেছনে করোনা একটা বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছিল। এ বছর করোনা না থাকলেও আত্মহত্যার সংখ্যা আমাদের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা হেলাল উদ্দীন আহমদ বলেন, ‘২০২২ এবং ২০২৩ সালে আত্মহত্যার সংখ্যাটি কাছাকাছি। অভিমান কিন্তু অনেকেই করে, সবাই কিন্তু আত্মহত্যা করে না। আবার অনেকেই প্রেমে ব্যর্থ হয় তারাও সবাই আত্মহত্যা করে না। তাহলে এসব বিষয়ের দিকে আমরা দৃষ্টিপাত দিব ঠিকই, কিন্তু বিবেচনায় নিবো একজন মানুষের ঘাত সহনশীলতার দিকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, কোনও প্রকার অলংকারিক শব্দ ব্যবহার না করে আত্মহত্যার বিষয়ে এড্রেস করা। এসব বিষয় মাথায় রাখতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের উচিত শারীরিক মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে মনযোগী হওয়া। পরিবারের পাশাপাশি শিক্ষকদেরও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি দায়িত্বশীল হতে হবে।’