সরকার মধ্যযুগীয় ‘ডাইনী শিকার’ নীতি গ্রহণ করেছে:রিজভী 

নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। 

সরকার মধ্যযুগীয় ‘ডাইনী শিকার’ নীতি গ্রহণ করেছে:রিজভী 

প্রথম নিউজ, ঢাকা: আওয়ামী লীগ সরকার এখন মধ্যযুগীয় ‘ডাইনী শিকার’ নীতি গ্রহণ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। 

তিনি বলেন,'মধ্যযুগে ইউরোপে যেমন নারীদেরকে ডাইনী হিসেবে অভিহিত করে হত্যা ও জুলুম—নির্যাতন করা হতো ঠিক তেমনি বাংলাদেশে বিএনপি এবং গণতন্ত্রকামী বিরোধী দল ও ভিন্ন মতের মানুষদের অবরুদ্ধ করে নানা কায়দায় নারকীয় নির্যাতন চালানো হচ্ছে। যতই এক দফার আন্দোলন দ্রুতগতিতে ধাবিত হচ্ছে ততই শেখ হাসিনার আগ্নেয়গিরির অগ্নুদ্গমের ন্যায় ক্রোধাগ্নি জ¦লে উঠছে। তিনি বাংলাদেশকে বিরোধীদল—শুণ্যপ্রান্তরে পরিণত করতে চান। এই কারণেই ‘৭৫ এর বাকশালের সুযোগ্য উত্তরাধিকার হিসাবে শেখ হাসিনার নব্য বাকশালী শাসনে দেশ এক সর্বগ্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। এদের প্রলয়ংকারী দুঃশাসনের আঘাতে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সকল বৈশিষ্ট্যকে মুছে দেয়া নিশ্চিত করতেই আবারও বিরোধী নেতাকর্মীদেরকে গায়েবী মামলায় গ্রেফতার ও কারান্তরীণ করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার(৩ জুলাই)বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। 

রিজভী বলেন,'আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী ‘গণতন্ত্রের মা’ বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দী এবং দেশনায়ক তারেক রহমান ও তাঁর সহধর্মিনীকে সাজা দেয়ার পরেও নিজেরা স্বস্তি পাচ্ছে না, অজানা আতঙ্কে ভুগছে। তাদের গদি এখন নড়বড়ে অবস্থায়, যেকোন সময় হুড়মুড় করে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় গুম, গ্রেফতার এবং জামিন না দিয়ে কারাগারে আটকিয়ে রাখার মতো অমানবিক আচরণে লিপ্ত রয়েছে। আওয়ামী লীগ কখনোই সদিচ্ছাপ্রসূত রাজনৈতিক কর্মকান্ড করেনি। 

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন,'ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় এসেই ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য নিজেদেরকে নানামূখী চক্রান্তে নিয়োজিত রাখে। ইতোমধ্যে বিএনপি’র কর্মসূচিতে বিপুল লোক সমাগম হওয়ায় অবৈধ সরকার বিচলিত হয়ে গভীর চক্রান্তে মেতে উঠেছে। একদিকে রাষ্ট্রশক্তি দিয়ে বিরোধী দলের কর্মসূচিকে নৃশংস পন্থায় করা বানচাল করা অন্যদিকে পর্দার আড়ালে গণতন্ত্রের সর্বশেষ নাম নিশানা মুছে দিতে চলছে সর্বনাশা চক্রান্তের নানামূখী রোডম্যাপ। তাই এরা এখন গায়েবী মামলা কিংবা মামলা ছাড়াই গ্রেফতার করার নতুন তামাশা শুরু করেছে। বিভিন্ন এলাকার বিএনপি’র যেসব নেতৃবৃন্দ জনপ্রিয়, বারবার সকলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন এবং আগামী নির্বাচনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হতে পারেন এ ধরণের নেতৃবৃন্দকে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রহসনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাতে গ্রেফতার ও মিথ্যা মামলায় জড়ানো হচ্ছে। এটি বিএনপি’র জনপ্রিয় নেতৃবৃন্দকে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের স্বীয় উদ্দেশ্য হাসিলে অবৈধ সরকারের একটি হীন কৌশল।

রিজভী বলেন,' বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর পাতা ফাঁদে কেউ পা দিবে না। শেখ হাসিনার পদত্যাগসহ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী মানুষের অঙ্গীকার কখনোই নিস্ফল হবে না।এই নিষ্ঠুর সরকার ক্ষমতায় থাকলে জাতির দুর্দিন কখনোই শেষ হবে না। চরম মুদ্রাস্ফিতিতে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা থাকছে না। মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষরা নিজেদের আয় দিয়ে পেট ভরানোর মতো খাবার কিনতে পারছে না।

তিনি বলেন,'সারাদেশেই এক ধরণের প্রায়—দুর্ভিক্ষাবস্থা বিরাজ করছে। তথাকথিত উন্নয়নের ভেল্কিবাজিতেও ক্ষুধার্ত মানুষের আহাজারী আড়াল করতে পারছে না সরকার। তাই প্রতিবাদী রাজনৈতিক কর্মসূচিতে রক্ত ঝরানো হচ্ছে, করা হচ্ছে বেপরোয়া গ্রেফতার। মিথ্যা ও গায়েবী মামলয় বিএনপি’র হাজার হাজার নেতাকর্মীরা বাড়ী—ঘর, এলাকাছাড়া। 

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন,'আজ দুপুর ১টার সময় বিএনপি’র বানিজ্য বিষয়ক সম্পাদক আলহাজ¦ সালাহউদ্দিন আহমেদসহ ৭ জন নেতাকর্মী সরকারের চলমান হামলা, গ্রেফতার ও জুলুমের সর্বশেষ শিকার। তাদেরকে অন্যায়ভাবে আজ ডিবি পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। গ্রেফতার, হিংসা ও হানাহানি দিয়ে অবৈধ সরকার নিজেদের অনাচারগুলো ঢাকতে চায়। শেখ হাসিনা যেহেতু অকৃত্রিম নিপীড়ক ফ্যাসিষ্ট, তাই তিনি সারাক্ষণ পথের কাঁটা দুর করতেই ব্যস্ত রয়েছেন। যারা গণতন্ত্রের পক্ষে, যারা আইনের শাসনের পক্ষে, যারা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পক্ষে, যারা ন্যায় ও সত্যের পক্ষে তাদেরকেই তিনি পথের কাঁটা বলে মনে করেন।

তিনি বলেন,'আজ দুপুর ১টায় একটি মিথ্যা মামলার জামিন শুনানী শেষে ‘মোহাম্মদ হানিফ—ফ্লাইওভার’ দিয়ে যাওয়ার পথে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বিএনপি’র বানিজ্য বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা—৪, ৫ আসন থেকে বারবার নির্বাচিত সাবেক এমপি আলহাজ¦ সালাহউদ্দিন আহমেদ এবং তাঁর গাড়ী চালকসহ ৭ জন নেতাকর্মীকে আটক করে নিয়ে যায়। আমি ডিবি পুলিশ কর্তৃক আলহাজ¦ সালাহউদ্দিন আহমেদসহ ৭ জন নেতাকর্মীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তাদের মুক্তি দাবি করছি।

গত ২৮ ও ২৯ জুলাই মহাসমাবেশ এবং অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আহত গ্রেফতারের বিবরণ তুলে ধরে তিনি জানান,আহত প্রায় ৮০০ জন, গ্রেফতার প্রায় ৪০৬ জন।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা.সিরাজুল ইসলাম,স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা.রফিকুল ইসলাম,সহ-সাংগঠনিক সম্পদক সেলিমুজ্জামান সেলিম,নির্বাহী কমিটির সদস্য আকরামুল হাসান মিন্টু,কৃষকদলের যুগ্ম-সম্পাদক কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।