সরকার পুরানো কায়দায় গ্রেফতার, গুম বাড়িয়ে দিয়েছে : মির্জা ফখরুল
আজ রবিবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: মানুষ যখন দিন দিন ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথের মিছিলে শরিক হচ্ছে ঠিক সেই সময় সরকার তার পুরনো কায়দায় গুম, গ্রেফতার, নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ রবিবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের মানুষের ভোট ও মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী সকল রাজনৈতিক দল, নানা শ্রেণী পেশার মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরক্ষোভাবে রাষ্ট্রের সকল কাঠামোকে ধ্বংসকরী ক্ষমতাসীন ফ্যাসীবাদী বর্বরোচিত সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষার জন্য শান্তিপূর্ন ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। মানুষ যখন দিন দিন ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথের মিছিলে শরিক হচ্ছে ঠিক সেই সময় সরকার তার পুরনো কায়দায় গুম, গ্রেফতার, নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে ২৮শে জুলাই এর পর থেকে প্রতিদিনই গ্রেফতার ও নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে সরকার নিজেদের প্রার্থীদেরকে বিজয়ী করার জন্য বিরোধী পক্ষকে নির্বাচনে অযোগ্য এবং নেতা-কর্মীদেরকে নির্বাচনী মাঠ থেকে তথাকথিত আইনী প্রক্রিয়ায় বিতাড়িত করার সকল অপকৌশল গ্রহণ করে চলেছে। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার দাবিতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে হবিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা নির্মমভাবে গুলি, টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে বিএনপি’র শত শত নেতা-কর্মীদেরকে আহত করেছেন। ঢাকায় দেশব্যাপী ঘোষিত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী শেষে নয়া পল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শত শত পুলিশ ও সাদা পোশাকধারী পুলিশ এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ঘিরে রেখেছে। দলীয় কার্যালয় থেকে বের হবার পর ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহম্মেদ রবিন সহ বেশ কিছু নেতা-কর্মীকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করেছে এবং বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়কে ঘিরে এক ভয়ংকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে যা কোন স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক আচরণ হতে পারে না।
তিনি বলেন, গত ১৮ আগষ্ট জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় শাখার সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মমিনুল ইসলাম জিসানকে তার আজিমপুরস্থ বাসভবন থেকে তুলে নিয়ে যায়, এ খবর শোনার পর তার বাসার সামনে তার সহকর্মী কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক শাহাদত হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মোঃ হাসানুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল রিয়াদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হল ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দীন মোহাম্মদ বাবর, শিক্ষানবিশ আইনজীবী আরিফ বিল্লাহ উপস্থিত হলে সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরা আকষ্মিকভাবে সেখানে হানা দিয়ে তাদেরকে তুলে নিয়ে যায়। তাদেরকে পুলিশের গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে অস্ত্র দিয়ে নাটক সাজিয়ে আবারও একই পথে অগ্রসর হচ্ছে। অবিলম্বে তাদের মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব জানান, কেন্দ্র ঘোষিত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার দাবীতে দেশব্যাপী পদযাত্রার কর্মসূচি চলাকালে গতকাল হবিগঞ্জে সরকারি বাহিনী তান্ডব চালিয়েছে, পুলিশ নেতা-কর্মীদের উপর নির্মমভাবে বৃষ্টির মত গুলি চালিয়েছে। এ সময় পৌর বিএনপি’র সভাপতি তাজুল ইসলাম চৌধুরী ফরিদ, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আউয়াল, জেলা যুবদল নেতা- অলিউর রহমান, আমিন শাহ, সদর থানা বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আজিজুর রহমান কাজল, হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শাহ রাজিব আহম্মেদ রিংগন, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মাহবুব, ছাত্রদল নেতা শেখ সাজিদুল হকসহ প্রায় দুই শতাধিক নেতাকর্মী পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হয়। আহত নেতাকর্মীদেরকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালেও যেতে বাধা প্রদান করেছে। জেলা বিএনপি’র ১ম যুগ্ম আাহŸায়ক ও সাবেক পৌর মেয়র জি কে গৌছ এর বাসভবনে আহত নেতাকর্মীরা আশ্রয় নিলে পুলিশ তার বাসভবনেও হামলা চালিয়ে প্রায় ২০/২৫ জন বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। এছাড়াও গতকাল নারায়ণগঞ্জ জেলায় বেলা ৩:৩০ মিনিটে পদযাত্রা চলাকালে পুলিশ বিনা উস্কানিতে নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করে। পুলিশ ও ছাত্রলীগের হেলমেট বাহিনী যৌথভাবে এই নারকীয় তান্ডব চালায়। পুলিশি হামলায় জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল মান্নানসহ অসংখ্য নেতা-কর্মী আহত হয়েছে। নেত্রকোনা জেলা বিএনপির শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা কর্মসূচিতে পুলিশ হামলা চালায়। এসময় জেলা ছাত্রদলের সহ সাধারণ সম্পাদক মোঃ রাকিব মিয়া, ছাত্রদল নেতা মোঃ রফিকুল ইসলাম রফিক, আমতলা ইউনিয়ন যুবদল নেতা বজলুর রাশেদ, ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতা রায়হান সোবাহান, ইউনিয়ন বিএনপি নেতা মোঃ ফরিদ, বিএনপি নেতা আল-আমিন, ৯নং ওয়ার্ড শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক খাইরুল ইসলাম হীরণ ও ৭নং ওয়ার্ড শ্রমিকদলের সভাপতি মোঃ শামসু মিয়া গুরুতর আহত হয়।
গতকাল বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের গেট থেকে বিশিষ্ট ডেন্টিস্ট জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি ডা. জাহিদুল কবির জাহিদসহ ৫ জনকে গত রাতে আগে বিনা কারণে সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর আগে গত ১৮ আগস্ট ২০২৩ বিএনপির শান্তিপূর্ণ গণমিছিল থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী থানাধীন ৬৪নং ওয়ার্ড (পূর্ব) বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইসমাঈল হোসেন ভূঁইয়া তুহিনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। গতকাল নেত্রকোনা জেলায় পদযাত্রার কর্মসূচীতে পুলিশ হামলা চালিয়ে শতাধিক নেতা-কর্মীকে আহত এবং ২০ জনেরও অধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। জামালপুর জেলা সদর সহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে ৫০ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার এবং ৮টি মামলায় শতাধিক নেতা-কর্মীকে আসামী করা হয়েছে। নাটোর জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজকে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত করেছে।
এছাড়াও প্রতিদিনই সারা দেশে নেতা-কর্মীদের নামে মামলা, হামলা, গ্রেফতার অব্যাহত রেখেছে। সরকার প্রধানের নির্দেশে কিছু সংখ্যাক অতিউৎসাহি দলবাজ পুলিশ কর্মকর্তা এহন বেআইনী কর্মকান্ড চালানোর জন্য মাঠ পর্যায়ের আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান, বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. জুবাইদা রহমানকে প্রহসনের বিচারে ফরমায়েসী রায়ে সাজা দিয়ে জিয়া পরিবারকে নিঃশেষ করার সকল হীন অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এছাড়াও বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে বিভিন্ন মামলায় সাজানো সাক্ষীদের সরকারি বাহিনীদ্বারা বাড়ি থেকে ধরে এনে গায়েবী মামলায় বিএনপিসহ বিরোধী মতের নেতা-কর্মী, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষকে সাজা দিয়ে রাজনীতি থেকে বিতাড়িত এবং তাদের কণ্ঠ স্তব্ধ করার লক্ষ্যে সাক্ষ্য প্রদানে করার সকল কৌশল গ্রহণ করেছে। উচ্চতর আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর নি¤œ আদালতে হাজির হলে জামিন না মঞ্জুর করে তাদেরকে জেল হাজতে পাঠানো হচ্ছে, আবার জামিন লাভের পর নতুন আসামী বানিয়ে জেল গেটেই অনেকই গ্রেফতার দেখিয়ে আটক রাখা হচ্ছে যা আইনের সুষ্পষ্ট লংঘণ।
তিনি বলেন, সরকার প্রধানের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও নির্যাতন থেকে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গরাও রেহাই পাচ্ছেন না। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি দেশের বিশিষ্ট লেখক ও খ্যাতিমান সাংবাদিক শফিক রেহমান এবং বিশিষ্ট কলম যোদ্ধা মজলুম সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়েছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের আজ্ঞাবহ আদালত। এদিকে একই মিথ্যা বানোয়াট মামলায় বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মিজানুর রহমান ভূঁইয়া মিল্টন, জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুন ও তার ছেলে রিজভী আহম্মেদ সিজারকে আদালত ৭ বছরের সাজা দেয়। আমি এই পরিকল্পিত এবং ষড়যন্ত্রমূলক রায়ের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অবৈধ সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে একদিকে দেশের নিরিহ গণতন্ত্রকামী মানুষের উপর তার নিজস্ব বাহিনীদ্বারা গুলি করে হত্যা, গুম, খুনসহ সকল প্রকার নির্যাতন চালাচ্ছে। এই থেকেই বোঝা যায় সরকার বিরোধী মতের আন্দোলনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে এই সরকারের বিদায় এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। তাই সরকারকে আহŸান জানাচ্ছি ঐ সকল অপকৌশল বন্ধ করে, জনগণের মনোভাব অনুধাবন করে অবিলম্বে পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে আসার আহŸান জানাচ্ছি। অন্যথায় জনতার উত্থাল তরঙ্গের ন্যয় আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন নিশ্চিত করে সকল নির্যাতনের জবাব দিয়ে দেশের মানুষের মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনা হবে।