সিটিতে চ্যালেঞ্জ থাকলেও ভিসানীতিতে স্বস্তি

চার সিটিতে নৌকা নিয়ে বেশ সতর্ক আওয়ামী লীগ, জাতীয় নির্বাচনে আশা জাগাবে চার সিটির নির্বাচন, বিশ্বাস ভঙ্গ আর নেতাদের বেইমানিতে গাজীপুরে হার, ভিসানীতিতে বেকায়দায় পড়েছে বিএনপি : আ. লীগ

সিটিতে চ্যালেঞ্জ থাকলেও ভিসানীতিতে স্বস্তি

প্রথম নিউজ, ঢাকা: গাজীপুর সিটিতে পরাজয় বরণ করেছেন নৌকার প্রার্থী। ফলে আসন্ন চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। গাজীপুরে নৌকার প্রার্থীর পরাজয়ের কারণ কী, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন দলের হাইকমান্ড। পাশাপাশি সেসব অসংগতি দূর করে চার সিটিতে আরও বেশি সতর্ক হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসন্ন চার সিটি নির্বাচন অত্যন্ত চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিলেও সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত নতুন ভিসানীতিতে বেশ স্বস্তিতে আছে ক্ষমতাসীন দলটি। ওই ভিসানীতি শুধু আওয়ামী লীগের জন্য নয়, বিএনপিসহ যারাই নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বাধা হয়ে দাঁড়াবেন তারা এর আওতায় পড়বেন। এটাই আওয়ামী লীগের স্বস্তির কারণ— মনে করছেন দলটির সিনিয়র নেতারা।

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে তেমন চিন্তিত নয় আওয়ামী লীগ। প্রথম দফায় দেশটির নিষেধাজ্ঞায় বেশ চিন্তিত ছিল সরকার। এবার তেমনটি দেখা যাচ্ছে না। কারণ হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে, এবার নিষেধাজ্ঞা না দিয়ে নতুন ভিসানীতি আরোপ করা হয়েছে। ফলে কিছুটা স্বস্তিতে আছে দলটি। তবে, আগামী নির্বাচনগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার তাগাদা রয়েছে ক্ষমতাসীন দলটির মধ্যে।

গত ২৫ মে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খান হেরে যান। তার প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন জয়ী হন। কী কারণে ঢাকার নিকটবর্তী সিটিতে নৌকাকে হারতে হলো তা খতিয়ে দেখার নির্দেশনা দেন দলের হাইকমান্ড। ওই পরাজয়ের পেছনে নিজেদের অনৈক্য এবং থানার নেতাদের বিশ্বাসভঙ্গকে দায়ী করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

হারলেও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে বলে দাবি করছেন দলটি নেতারা। গাজীপুরে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ায় গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘গাজীপুর সিটি নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে বর্তমান সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব। গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও রংপুর সিটিতে যে নির্বাচন হয়েছে, আগামীতে আরও চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ও জাতীয় নির্বাচন একইভাবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে।’

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, ‘গাজীপুরে আমরা হারি নাই। গাজীপুরে একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে। বিএনপি থেকে বলা হচ্ছে এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। গাজীপুরের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটা বার্তা প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারে থাকলে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়। নির্বাচন কমিশনে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো হস্তক্ষেপ করা হয় না। এর মধ্য দিয়ে আগামী নির্বাচনেও একটা সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি হবে।’

‘আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী থাকছেন শেখ হাসিনা। বিরোধী দলগুলো যেসব কথাবার্তা বলেছে তা অসত্য, বানোয়াট ও বিভ্রান্তমূলক। গাজীপুর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তাদের কথাবার্তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। বিএনপি মানুষকে বিভ্রান্ত করে ফায়দা লুটতে চায়। আজমত উল্লা খান হেরেছেন, নৌকা হেরেছে কিন্তু এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমাদের জয় হয়েছে। যিনি জিতেছেন তিনি কিন্তু বিএনপির নন। বাকি চার সিটি নির্বাচনে যত চ্যালেঞ্জই আসুক, আশা করি সব চ্যালেঞ্জই আমরা জয়ী হব’— উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।

দলীয় সূত্র বলছে, আসন্ন সিলেট, বরিশাল, খুলনা ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নৌকাকে বিজয়ী করতে বিভিন্ন কৌশল খুঁজছে আওয়ামী লীগ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি, বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলা, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ এবং সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন করা নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে ক্ষমতাসীনরা। অন্যদিকে, বিএনপি সরকার পতনসহ ১০ দফা দাবিতে লাগাতার কর্মসূচি দিয়ে আসছে। তারা সরকার পতন ছাড়া ঘরে না ফেরারও ঘোষণা দিয়েছে। ফলে তাদের এ আন্দোলন মোকাবিলায় কোন পথে এগোবে আওয়ামী লীগ, সেটিও এখন সামনে এসেছে।

জাতীয় নির্বাচনের আগে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটি। গাজীপুরে পরাজয় বাকি চার সিটির জন্য কী বার্তা— এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘ঐক্যবদ্ধ থাকলে ইনশাল্লাহ আমরা জিতব। গাজীপুরে আমার বিশ্বাস হেরে গেছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকেন, যে দলের নেতা শেখ হাসিনা, যে দলের প্রতীক নৌকা, সেই দলকে কেউ হারাতে পারবে না।’

গাজীপুর আওয়ামী লীগে কি ঐক্যের সমস্যা ছিল— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস হেরে গেছে। বিশ্বাস ভঙ্গ হয়েছে। কোনো চ্যালেঞ্জই চ্যালেঞ্জ না, যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি আমরা।জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী  বলেন, ‘নির্বাচন একটা চ্যালেঞ্জ। আগামী চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছি। আমরা এ ব্যাপারে খুবই সিরিয়াস। দলের সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীদের জিতিয়ে আনবে।’


এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে তেমন চিন্তিত নয় আওয়ামী লীগ। প্রথম দফায় দেশটির নিষেধাজ্ঞায় বেশ চিন্তিত ছিল সরকার। এবার তেমনটি দেখা যাচ্ছে না। কারণ হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে, এবার নিষেধাজ্ঞা না দিয়ে নতুন ভিসানীতি আরোপ করা হয়েছে। ফলে কিছুটা স্বস্তিতে আছে দলটি। তবে, আগামী নির্বাচনগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার তাগাদা রয়েছে ক্ষমতাসীন দলটির মধ্যে।

নতুন ভিসানীতি নিয়ে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা জানান, নিষেধাজ্ঞা আসলে সরকারের ওপর একপেশে চাপ পড়ত। কিন্তু ভিসানীতি শুধু যে আওয়ামী লীগের জন্য, এটা ঠিক নয়। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, যারাই সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দেবে তারাই এ নীতির আওতায় পড়বে। তার মানে আওয়ামী লীগ তো সুষ্ঠু নির্বাচন চায়, বিএনপি নির্বাচনই করতে চায় না। তারা নির্বাচন করতে দেবে না— এমন ঘোষণাও দিয়েছে। এটি হলে বিএনপির নেতারাই নতুন ভিসানীতির খড়গে পড়বে।

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রতিদিনই ভিসানীতি নিয়ে কথা বলছেন। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি নিয়ে বিএনপি বেকায়দায় আছে। এতে আওয়ামী লীগের কোনো ক্ষতি নেই। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি ঘোষণার পর বিএনপির গলা বসে গেছে। তাদের মুখ শুকিয়ে গেছে। বিএনপি নির্বাচনকে ভয় পায় না, ভয় পায় এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগকে।’ যারা ভোটে বাধা দেবে, নির্বাচন করতে দেবে না, তাদের ক্ষেত্রে এটি প্রয়োগ হবে। বিএনপির কথা ছিল তারা নির্বাচনে আসবে না, নির্বাচন করতেও দেবে না। নতুন ভিসানীতির ফলে এটি মার খেয়েছে। বিএনপি এখন গ্যাঁড়াকলে পড়েছে। নির্বাচনে না এসে তারা যদি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যায়, তাহলে এ ভিসানীতি তাদের ওপর পড়বে। 
‘নতুন ভিসানীতিতে আমাদের একটা লাভ হয়েছে, এত দিন তারা নালিশ করেছে আমেরিকার দরবারে, নিষেধাজ্ঞা আসবে... নিষেধাজ্ঞা কই? নিষেধাজ্ঞা এখন তাদের বিরুদ্ধে, নতুন ভিসানীতিতে। নির্বাচনে গোলমাল করলে, ভাঙচুর করলে, মানুষ পোড়ালে, বাস পোড়ালে, যারাই জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতি করবে, আগুন সন্ত্রাস করবে, তারাই আজ ভয় পাচ্ছে।’

অংশগ্রহণ করতে হবে বা সবার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে নির্বাচন করতে হবে, বলছে আওয়ামী লীগ / ঢাকা পোস্ট
ভিসানীতি নিয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, ‘যারা ভোটে বাধা দেবে, নির্বাচন করতে দেবে না, তাদের ক্ষেত্রে এটি প্রয়োগ হবে। বিএনপির কথা ছিল তারা নির্বাচনে আসবে না, নির্বাচন করতেও দেবে না। নতুন ভিসানীতির ফলে এটি মার খেয়েছে। বিএনপি এখন গ্যাঁড়াকলে পড়েছে। নির্বাচনে না এসে তারা যদি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যায়, তাহলে এ ভিসানীতি তাদের ওপর পড়বে। এক্ষেত্রে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই। বিএনপি এখন দূতাবাসে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছে, আমাদের নাই। আমরা দূতাবাসে দৌড়ঝাঁপ করি না, আমরা বাংলাদেশের মানুষের কাছে যাই।’

ভিসানীতি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘সরকার বা সরকারি দলের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না এটি। ভিসানীতিতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। এখানে বলা হয়নি যে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে বা সবার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচনে যারা অনিয়ম করবে, যারা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে, তাদের জন্য এ ভিসানীতি কার্যকর হবে। আমরা তো কোনো অনিয়মে বিশ্বাস করি না। আমরা মনে করি, জনগণের ভোট জনগণ দেবে। যারা জনগণের ভোটে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা প্রযোজ্য হবে।’