শিশু নাঈমের চিকিৎসা-ক্ষতিপূরণের বিষয় মীমাংসার নির্দেশ
ওয়ার্কশপের মেশিনে হাত কাটা
প্রথম নিউজ,কিশোরগঞ্জ: কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ওয়ার্কশপে ডান হাত হারানো শিশু নাঈম হাসান নাহিদের চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত বিষয়ে আদালতের বাইরে সুরাহা (মিমাংসা) করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ সাইফুজ্জামান জামানকে বিষয়টি মধ্যস্থতা করতে বলেছেন আদালত। সেই সঙ্গে নুর ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের মালিকের কী ধরনের ব্যবসা ও কত টাকার অর্থসম্পদ রায়েছে সে তথ্য জানাতে বলেছেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে রিটের ওপর জারি করা রুলের পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী বুধবার (৯ আগস্ট) দিন ঠিক করেছেন হাইকোর্ট। শনিবার (৫ আগস্ট) ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ( এসকে) সাইফুজ্জামান জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানির নির্ধারিত দিনে বুধবার (২ আগস্ট) হাইকোর্টের বিচারপতি কেএম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে এদিন রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার অনিক আর হক। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ বাকীর উদ্দিন ভূইঁয়া। অন্যদিকে নুর ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মো. কামরুল ইসলাম। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট আব্দুল বারেক খোকন। আর রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ( এসকে) সাইফুজ্জামান জামান।
এর আগে শুনানিতে রিটকারী আইনজীবী উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় ভৈরবের কলকারখানা পরিদর্শক পরিদর্শন করে তার তদন্ত প্রতিবেদন, কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসির) পরিদর্শন করার পর তদন্ত করে দেওয়া প্রতিবেদন ও আহত শিশু শ্রমিকের বাবার এবং ভিকটিমের (শিশু নাঈম হাসান নাহিদের) গ্রহণ করা জবানবন্দি পেশ করেন। এরপর নুর ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের মালিকের পক্ষে ভিকটিমের বাবা, চাচা ও অন্যান্য প্রতিবেদন পড়ে শোনান সিনিয়র অ্যাডভোকেট মো. কামরুল ইসলাম। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৯ আগস্ট দিন ঠিক করেন। ওই দিন দুপুর ১২টার আবারও শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানান আইনজীবীরা।
এর আগে কিশোরগঞ্জের ভৈরব শহরের কমলপুর এলাকায় ওয়ার্কশপে ড্রিল মেশিনে কাজ করার সময় শিশু নাঈম হাসান নাহিদের ডান হাত হারানোর ঘটনায় নুর ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ মালিককে আপাতত চিকিৎসা খরচের টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। চিকিৎসার খরচ পরিশোধ করে গত বছরের ২৩ আগস্টের মধ্যে আদালতে হলফনামা আকারে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলেছিলেন আদালত। তারই ধারাবাহিকতায় বিষয়টি শুনানির জন্য আসে।
শিশু নাঈমের বাবা আনোয়ার হোসেনের করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জারি করা রুলের শুনানি নিয়ে ২০২২ সালের ১৭ আগস্ট হাইকোর্টের বিচারপতি একেএম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে ওইদিন রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার অনিক আর হক। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ বাকীর উদ্দিন ভূইঁয়া। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
আদেশের বিষয়ে ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার জানান, দুর্ঘটনায় হাত হারানোর ঘটনায় ওই শিশুর চিকিৎসা বাবদ নুর ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের মালিক এর আগে ৫৫ হাজারের মতো টাকা দিয়েছিলেন। আদালত বলেছেন, হিসাব অনুযায়ী আরও যত টাকা বাকি রয়েছে তা পরিশোধ করতে। তারপর এ বিষয়ে আবার শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। তবে আজ (১৭ আগস্ট, ২০২২) আদালতের মাধ্যমে জানা গেছে শিশু নাঈমের চিকিৎসার জন্যে নুর ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের মালিক সর্বমোট দেড় লাখ টাকা দিয়েছেন।
২০২০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর কিশোরগঞ্জের ভৈরব শহরের কমলপুর এলাকার নুর ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে কাজ করার সময় শিশু নাঈমের ডান হাত মেশিনে ঢুকে যায়। এরপর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কনুই থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয় তার হাত।
নাঈমের বাবার অভিযোগ, ঘটনার দিন ওয়ার্কশপের ম্যানেজার রাজু আহমেদ তার ছেলেকে জোর করে মেশিন চালাতে দিলে এমন দুর্ঘটনা ঘটে। পরে ১০ অক্টোবর নাঈমের চাচা ওয়ার্কশপ মালিক ও ম্যানেজারসহ পাঁচজনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় ওয়ার্কশপের মালিক ইয়াকুব হোসেন, ওয়ার্কশপের মিস্ত্রি স্বপন মিয়া, জুম্মান মিয়া, সোহাগ মিয়া ও ব্যবস্থাপক রাজু মিয়াকে আসামি করা হয়।
২০২১ সালের ২৭ ডিসেম্বর নাঈমের বাবা দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন করেন। এরপর চলতি বছরের গত ১৪ জানুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ শিশু নাঈমের এক হাত হারানোর ঘটনায় তাকে কেন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না সেই মর্মে জানতে চেয়ে রুল জারি করেন।
হাইকোর্টের মামলায় রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুছ কাজল ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ বাকির উদ্দিন ভূইঁয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কালিপদ মৃধা, অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাটর্নি জেনারেল ফারহানা পারভিন বিথি ও অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ শাহনওয়াজ।