শাপলা চত্বরেই জামায়াতের সমাবেশ হবে
জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান জানিয়েছেন, নির্দিষ্ট দিনে শাপলা চত্বরেই মহাসমাবেশ হবে।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: রাজধানীর শাপলা চত্বরেই মহাসমাবেশ করার প্রস্তুতি নিয়ে এগুচ্ছে জামায়াত। যদিও এ পর্যন্ত অনুমতি মেলেনি প্রশাসনের। দলটির নেতারা জানিয়েছেন মতিঝিলেই তারা সমাবেশ করতে চান। সমাবেশ শান্তিপূর্ণ হবে উল্লেখ করে নেতারা এজন্য সরকারের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন। পুলিশ প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, জামায়াতকে সমাবেশ করতে অনুমতি দেয়া হয়নি, হবেও না।
জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান জানিয়েছেন, নির্দিষ্ট দিনে শাপলা চত্বরেই মহাসমাবেশ হবে। এজন্য প্রশাসন সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। মহাসামবেশ ঘিরে সরকারের কোনো ধরনের উস্কানি, অসাংবিধানিক ও গণতন্ত্রবিরোধী অপতৎপরতায় বিভ্রান্ত না হতেও নেতাকর্মীদের সতর্কবার্তা দেন ভারপ্রাপ্ত আমীর। ইতিমধ্যে মতিঝিলে মহাসামবেশকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে দলটি। সারা দেশ থেকে ঢাকায় আসছেন নেতাকর্মীরা। কর্মসূচিকে ঘিরে দফায় দফায় বৈঠক করছেন নীতিনির্ধারকরা। মহাসমাবেশ সফল করতে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে দলের অঙ্গ-সংগঠন ও শীর্ষনেতাদের। যেকোনোভাবেই ২৮শে অক্টোবর শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ করার কথা জানিয়েছেন জামায়াতের নীতিনির্ধাকরা। তারা বলছেন, পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ২৮শে অক্টোবর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে জামায়াতের মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন তারা। সমাবেশের রোডম্যাপ প্রস্তুত করেছেন নেতারা।
জামায়াতের একাধিক শীর্ষনেতা বলেন, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে শাপলা চত্বরে মহাসামবেশের অনুমিত চেয়েছি। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত প্রশাসন অনুমতি দেয়নি। এই বিষয়ে নিয়মিত যোগাযোগ চলছে। সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে সারা দেশ থেকে আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় এসেছেন। শনিবার সকাল পর্যন্ত প্রশাসনের অনুমতির অপেক্ষা করা হবে। অনুমতি না পেলেও শাপলা চত্বরে মহাসাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
২৮শে অক্টোবর মহাসমাবেশকে সামনে রেখে গতকাল ভার্চ্যুয়ালি সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমানসহ রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও আলেম-ওলামাদের মুক্তি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের দাবিতে ২৮শে অক্টোবর মতিঝিল শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ করবে জামায়াত। রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে রাজনৈতিক দলসমূহের সভা-সমাবেশ ও মিছিল শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করা। মিছিল, মিটিং, সভা-সমাবেশ প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। এ অধিকার যাতে তারা প্রয়োগ করতে পারে, সে ব্যাপারে সহযোগিতা করা পুলিশের দায়িত্ব। তাতে বাধা দেয়া পুলিশের দায়িত্ব হতে পারে না।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গত ১৫ বছর ধরে বর্তমান সরকার দেশে হত্যা, নৈরাজ্য, গুম, খুন, দুর্নীতি ও দুঃশাসনের মাধ্যমে দেশকে এক অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। বিশ্বে বাংলাদেশ একটি গুম-খুন, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী এবং ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রবিহীন রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। আর মাত্র দুই মাস পরেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে অবাধ, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা, আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মী এবং সম্মানিত ওলামা-মাশায়েখের মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসার দাবিতে বারবার আহ্বান জানিয়ে আসছে জামায়াত। কিন্তু সরকার তা অগ্রাহ্য করে অব্যাহতভাবে গণগ্রেপ্তার চালিয়ে আসছে। এই পরিস্থিতিতে গোটা জাতি আজ একদফার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ। এমতাবস্থায় সংসদ ভেঙে দিয়ে সরকারের পদত্যাগ এবং কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে আমরা আগামী ২৮শে অক্টোবর রাজধানী ঢাকার মতিঝিলের শাপলা চত্বরে শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশের কর্মসূচি ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছি।
লিখিত বক্তব্যে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আর মাত্র কিছুদিন পরই অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। অথচ এখনো নির্বাচনের কোনো পরিবেশ তৈরি হয়নি। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি করা পূর্বশর্ত। কিন্তু সরকার লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি করার কোনো চিন্তাই করছে না। দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী এবং বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষসহ গোটা জাতি মনে করে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামীর ঐতিহাসিক ভূমিকা রয়েছে। অথচ জামায়াতে ইসলামীকে সভা-সমাবেশ ও মিছিল করতে দেয়া হচ্ছে না। প্রশাসনের নিকট বারবার লিখিতভাবে আবেদন জানানো সত্ত্বেও প্রশাসন সভা-সমাবেশ বাস্তবায়নে সহযোগিতা না করে উল্টো বাধা দিচ্ছে। দেশে যাতে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হয়, সেজন্য আমীরে জামায়াতসহ শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দকে এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে আটক করে রেখেছে। এটা জাতির জন্য একটি অশনি সংকেত। জামায়াতে ইসলামী তার সাংবিধানিক অধিকার অনুযায়ী আগামী ২৮শে অক্টোবর শনিবার রাজধানী ঢাকা মহানগরীর শাপলা চত্বরে শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ বাস্তবায়নে সহায়তা চেয়ে পুলিশ কমিশনারের নিকট লিখিতভাবে অবহিত করেছে। পক্ষপাতদুষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছে, ‘জামায়াতকে সমাবেশ করতে দেয়া হবে না।’ পুলিশের দায়িত্ব হলো শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা, বাধা দেয়া নয়। তার এই বক্তব্য অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক, এখতিয়ার বহির্ভূত ও বেআইনি।
ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আমীর আবদুর রহমান মুসা, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিবুর রহমান পলাশ প্রমুখ।