শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঢামেকে বাড়ছে দগ্ধ রোগীর সংখ্যা
আগুনে পোড়ার ঘটনাও বাড়ছে। সরেজমিন এমনই চিত্র দেখা যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: শীতকাল আসলেই গ্রাম-গঞ্জে, শহর-মহল্লায় আগুন লাগার ঘটনা বৃদ্ধি পায়। আগুন জ্বালিয়ে শীতের তীব্রতা নিবারণের চেষ্টায় থাকে সাধারণ মানুষ। অনেকে আয়োজন করে কাবাব পার্টির। কেউ আবার গোয়ালঘরে পশুদের উষ্ণতা দিতেও জ্বালায় আগুন। এসব থেকেই আগুন ছড়ায়। বাসা-বাড়িতে কিংবা গোয়ালঘরে আগুন লাগে। উত্তাপ নিতে যাওয়া মানুষের কাপড়ে আগুন লেগে দগ্ধ হওয়ার ঘটনাও এসময় অহরহ ঘটে। এবছর শীতের আবহ এরইমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। আগুনে পোড়ার ঘটনাও বাড়ছে। সরেজমিন এমনই চিত্র দেখা যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে।
ঝিনাইদহের শৈলকূপা থানার ৫ বছর বয়সী ছোট শিশু নাবিলা। ছোট ভাই ও সমবয়সীদের নিয়ে খেলছিল সে। খেলার সময় আগুন জ্বালিয়ে মজা করতে গিয়ে পলিথিনের আগুন গায়ের জামায় লেগে পুড়ে গেছে তার হাত, পিঠ ও পায়ের বিভিন্ন অংশ। এসময় তার ছোট ভাইও আগুনে কিছুটা পুড়ে যায়। পোড়া শরীর নিয়ে ১০ দিন ধরে কাতরাচ্ছে শিশু নাবিলা। শতবর্ষী বৃদ্ধা মানিকগঞ্জের লাবণী ঘোষ। গ্যাসের চুলার উপর হাত দিয়ে হাত গরম করতে চাইছিলেন। এমন সময় কাপড়ে আগুন লেগে ঝলসে যায় পুরো শরীর। তিন দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি তিনি।
এছাড়াও গর্ভবতী শাহানার (ছদ্মনাম) প্রায় ৫৫ শতাংশ পুড়ে গেছে আগুনে। ঘরের সামনে আগুন জ্বালিয়ে পোহাতে গিয়েই এই দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানান তিনি। যদিও তার গর্ভের সন্তান সুস্থ আছে বলে জানান চিকিৎসকরা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) ৫০০ শয্যার বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারির ৫টি ইউনিটই আগুনে পোড়াসহ দুর্ঘটনা কবলিত নানা রোগীতে ভর্তি। তৃতীয় তলার ইউনিটটিতে দেখা যায় ৭৫ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই পোড়া রোগী।
এই ইউনিটে দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. আল মোনতাসির বিল্লাহ জানান, শীতকালে দগ্ধ রোগী অন্য সময়ের তুলনায় অনেক বেড়ে যায়। আর এসময়ে পোড়া রোগীদের মাঝে শিশু ও বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেশি। যেখানে দুই সপ্তাহ আগে এই ইউনিটে ৫৫ জন ছিল এখন তা বেড়ে ৭৫ জনে দাঁড়িয়েছে। সাধারণত আমরা যাদের সার্জারি প্রয়োজন হয় না তাদের ভর্তি নেই না। আর এই ক্ষেত্রে রোগীদের কমপক্ষে দেড় থেকে দুই মাস হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়। এতে করে নতুন রোগী আসতে থাকলেও জায়গা দিতে অনেক সময় কষ্ট হয়ে যায়। অনেক দূর থেকে আসায় এই ক্ষেত্রে ভর্তি না নিয়েও পারা যায় না। এজন্য অনেক সময় রোগীদের ফ্লোরে রেখেও চিকিৎসা দিতে হয়।
কেন এত দিন হাসপাতালে ভর্তি রাখতে হয় জানতে চাইলে তিনি জানান, পোড়া রোগীদের আগে অবজারভেশনে রাখতে হয়। সার্জারি করতে হলে তাদের শরীর এনেস্থেসিয়া নিতে পারবে কিনা সেটি নিশ্চিত করতে হয়। শরীরের অন্য জায়গা থেকে চামড়া নিয়ে লাগাতে হয়, সেক্ষেত্রে সেই জায়গায় চামড়া লাগানোর অবস্থা হয়েছে কিনা সেটাও দেখতে হয়। এসব কারণে দেখা যায় সার্জারির জন্য রোগীকে তৈরি করতে হয়। এজন্যই সময় বেশি লাগে। সবার আগে জীবন রক্ষা করতে হয় তারপর সার্জারি।
তিনি বলেন, দগ্ধ রোগীদের প্রথম ছয় ঘণ্টার মাঝেই চিকিৎসা দেওয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। কিন্তু জেলা শহরগুলোতে বার্ন ইউনিট না থাকায় দেখা যায় হাসপাতালে আসতে আসতেই তাদের ৭-৮ ঘণ্টা পার হয়ে যায়। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের কারণে ঢামেক হাসপাতালে এখন চাপ অনেক কমেছে। না হয় অনেক রোগীকে ফিরে যেতে হতো। জেলা ও বিভাগীয় শহরে বার্ন ইউনিট চালু হলে দগ্ধ রোগীদের কষ্ট কমে যেত।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews