শৃঙ্খলা ফেরাতে আরএমপির ট্রাফিক বিভাগে বড় রদবদল

রাজশাহী মহানগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নে নতুন করে কাজ করছে মহানগর পুলিশ। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি আরএমপির ট্রাফিক বিভাগের সব শাখায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছেন আরএমপি কমিশনার এম আনিসুর রহমান।

শৃঙ্খলা ফেরাতে আরএমপির ট্রাফিক বিভাগে বড় রদবদল
শৃঙ্খলা ফেরাতে আরএমপির ট্রাফিক বিভাগে বড় রদবদল

প্রথম নিউজ, রাজশাহী : রাজশাহী মহানগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নে নতুন করে কাজ করছে মহানগর পুলিশ। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি আরএমপির ট্রাফিক বিভাগের সব শাখায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছেন আরএমপি কমিশনার এম আনিসুর রহমান। এই পরিবর্তনের ফলে নগর পুলিশের ট্রাফিক ব্যবস্থায় একদিকে যেমন স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে, তেমনি নগরীর সড়কগুলোতে ট্রাফিক সমস্যার সমাধান সহজ হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ডিসেম্বরের শেষে আরএমপির দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই পুলিশ কমিশনার আনিসুর রহমান নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগকে ঢেলে সাজাতে উদ্যোগী হন। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে তিনি আরএমপির ট্রাফিক বিভাগের প্রশাসনকে বিকেন্দ্রীকরণে সক্রিয় উদ্যোগ নেন। এতে দীর্ঘদিন দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক বিভাগের কিছু সদস্যের অবৈধ সুবিধায় ভাটা পড়ে। এখন তারা আরএমপির ট্রাফিক বিভাগের নামে নানারকম গুজব ছড়াতে তৎপর হয়ে উঠেছেন। বিশেষ করে টিআই প্রশাসন পদ থেকে আতাউল আল কোরাইশীকে সরিয়ে দেওয়ার পর তার অনুসারীরা ট্রাফিক বিভাগে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন বলে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ।

আরএমপির সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রমতে, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ইতোমধ্যে পুলিশ কমিশনার স্থানীয় পরিবহণ মালিকদের সঙ্গে বসেছেন ও দিয়েছেন প্রয়োজনীয় নির্দেশনা। কথা বলেছেন এলাকার জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গেও। সমালোচনা এড়াতে সার্জেন্টদের তিনি বডিওন ক্যামেরার ব্যবহার ও সচল রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

এদিকে মহানগরবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারা দেশের মতো উন্নতির ধারায় রাজশাহীর সর্বত্র উন্নয়নের ছোঁয়া দৃশ্যমান। রাজশাহী মহানগরীতে অবকাঠামো সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে নগরীতে বেড়েছে যানবাহনের চাপ। যানবাহনের বাড়তি চাপ সুষ্ঠুভাবে মোকাবিলায় ট্রাফিক বিভাগকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ভুক্তভোগীদের মতে, ক্রমবর্ধমান নগরায়নের কারণে গণভোগান্তি যাতে না বাড়ে সেজন্য ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় পুলিশকে আরও তৎপর হওয়া প্রয়োজন। বর্তমানে রাজশাহী মহানগরজুড়ে অটোরিকশার দাপটে ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।

সূত্রমতে, আরএমপির ট্রাফিক বিভাগের পুলিশ সার্জেন্টের সংখ্যা ২২ জন। এ ছাড়া ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) রয়েছেন ৫ জন। সড়কে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে যানবাহন ও চালকের বিরুদ্ধে সার্জেন্টরা আর্থিক জরিমানা করে থাকেন প্রতিদিন। এই জরিমানা আদায়ে যে ব্যবস্থাপনা এখন তার পুরোটাই ডিজিটাল। এ বিষয়টিকে আরও স্বচ্ছ করতে টিআই প্রশাসনকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে সম্প্রতি উদ্যোগ পুলিশ কমিশনার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এতদিন নির্ধারিত একজন টিআই ট্রাফিক বিভাগের গোটা প্রশাসনের দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ইতিবাচক পরিবর্তনের লক্ষ্যে সেই দায়িত্ব চলতি মার্চ মাস থেকে বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। আরএমপিতে দায়িত্বরত ৫ জন টিআই পর্যায়ক্রমে ট্রাফিক প্রশাসন পদে দায়িত্ব পালন করবেন। এর ফলে জিম্মিদশা থেকে মুক্ত থাকবে ট্রাফিক বিভাগ।

আরও জানা গেছে, ট্রাফিক প্রশাসনে সংস্কারে নেওয়া পুলিশ কমিশনারের উদ্যোগে সন্তুষ্ট হতে পারেনি ইতোপূর্বে একচেটিয়া সুবিধাভোগী কিছু সদস্য। আরএমপির ট্রাফিক বিভাগে থাকা সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ সুবিধা পেয়ে আসছিলেন। প্রশাসনিক ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের ফলে তারা ক্ষুদ্ধ হয়েছেন বলে জানা গেছে। সিন্ডিকেটে থাকা কতিপয় ট্রাফিক সদস্য নানারকম গুজব ছড়াতে ও ট্রাফিক বিভাগে অস্থিরতা সৃষ্টিতে তৎপর বলে ট্রাফিকের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

আরএমপির ট্রাফিক বিভাগের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টিআই প্রশাসন পদটি ট্রাফিক বিভাগের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। টিআই প্রশাসন সকল ট্রাফিক সার্জেন্টের দায়িত্ব বণ্টন ছাড়াও যানবাহন চালকদের করা জরিমানার স্লিপ তার তত্ত্বাবধানেই থাকে। বিভিন্ন পরিবহণ সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করেন। অবৈধ যানবাহন নিয়ন্ত্রণও তার নেতৃত্বে হয়ে থাকে। সদ্য বদল হওয়া আতাউল আল কোরাইশী টিআই প্রশাসন দীর্ঘদিন ধরে থেকে বিস্তর ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। পুরো ট্রাফিক বিভাগকে জিম্মি করে রেখেছিলেন।

আরএমপির একাধিক পুলিশ সার্জেন্ট ও কনস্টেবল নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রায় দুই বছর ধরে টিআই প্রশাসন পদটি দখলে রেখেছিলেন আতাউল আল কোরাইশী। পুলিশ কমিশনারের নতুন সিদ্ধান্তে তাকে তার পদ থেকে সরে যেতে হয়েছে। এর ফলে টিআই কোরাইশীর সহযোগীরা ক্ষিপ্ত হয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, কোরাইশীর সহযোগীরা এসব নিয়ে পুলিশের ভেতরে মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে আরএমপির ট্রাফিক বিভাগে অস্থিরতা সৃষ্টিতে তৎপরতা চালাচ্ছেন। বিষয়টি আরএমপির কমিশনারসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও অবগত আছেন।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে আএমপির সদ্য বদলি হওয়া ট্রাফিক বিভাগের টিআই আতাউল আল কোরাইশী বলেন, টিআই প্রশাসন পদে বাইরোটেশনে দায়িত্ব পালনের কারণে সমস্যা আরও বাড়বে। বিভিন্ন বিভাগ ও সংগঠনের সঙ্গে ট্রাফিকের লিয়াজোঁ থাকে। একেক মাসে একেকজন টিআই প্রশাসনের দায়িত্বে থাকলে এ সমন্বয়ে সমস্যা আরও বাড়বে। টিআই প্রশাসন পদে বদল আনার বিরোধিতা করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযোগটি ঠিক নয়। গত মাসে আরেকজনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে এসেছি।

অন্যদিকে আরএমপির ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) অনির্বাণ চাকমা বলেন, ট্রাফিক বিভাগ পুলিশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফেরাতে পুলিশ কমিশনার মহোদয় নির্দেশ দিয়েছেন। এতে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা আরও গতিশীল হবে। ডিসি-ট্রাফিক আরও বলেন, একজন দীর্ঘদিন এক জায়গাতে দায়িত্বে থাকলে সিন্ডিকেট তৈরি হয়। পর্যায়ক্রমে একেকজন দায়িত্ব পালন করলে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে। টিআই প্রশাসনে বদলের সিদ্ধান্তটি যুগোপযোগী। পুলিশ কমিশনার সাহেব টিআই প্রশাসন পদের জন্য নতুন যে নিয়ম করেছেন তার সুফল পাবেন নগরবাসী।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: