মায়ের কান্না সেমিনারে বক্তারা ‘যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বড় মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী’

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব অডিটরিয়ামে ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অতীত এবং বাস্তবতা’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা।

মায়ের কান্না সেমিনারে বক্তারা ‘যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বড় মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী’

প্রথম নিউজ, অনলাইন: গত কয়েক মাস থেকে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলী বর্বরতায় ত্রিশ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। শতাধিক সাংবাদিক হত্যা করা হয়েছে। অথচ  অ্যামেনিষ্টি ইন্টারন্যাশনালসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলো একবারও বিবৃতিও দেয়নি। ফিলিস্তিনিদের হত্যা করার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইসরায়েলকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে অথচ বাংলাদেশে ১৯৭৭ সালে অসংখ্য সামরিক কর্মকর্তাকে বিনা বিচারে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছে। তখনও তথাকথিত এসব মানবাধিকার নিয়ে চিৎকার করা রাষ্ট্রগুলো কোন কথা বলেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী দেশ। বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব অডিটরিয়ামে ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অতীত এবং বাস্তবতা’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা। অনুষ্ঠানটি আয়োজনে সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশ আইন সমিতি।

বাংলাদেশ আইন সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এসএএম শওকত হোসেনের সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য রাখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েসনের মহাসচিব অ্যাডভোকেট মোল্লা মো. আবু কাওছার, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত লে. কর্ণেল (অবসরপ্রাপ্ত) সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক, সাবেক রাষ্ট্রদূত বীর মুক্তিযোদ্ধা সোহরাব হোসেন, দীপ্ত টিভির সিইও ফুয়াদ চৌধুরী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, বিএফইউজে- বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক ও সংগঠনের উপদেষ্টা খন্দকার বজলুল হক ছাড়াও ১৯৭৭সালে নিহত সামরিক কর্মকর্তা ও সম্প্রতি আন্দোলনের নামে নাশকতায় নিহতের স্বজনরা।

গত ২৮ অক্টোবর দায়িত্ব পালনকালে শহীদ পুলিশ কনস্টেবল আমীরুল ইসলাম পারভেজের সহধর্মিনী রাহেলা আক্তার পপি এবং তার তিনবছরের শিশু সন্তান ইয়াসিনকে নিয়ে সেমিনারে উপস্থিত হয়ে বলেন, আমার স্বামী সন্তানকে বড় পুলিশ অফিসার বানানোর স্বপ্ন দেখতেন। এখন আমার সন্তান তার বাবাকে খুঁজে ফিরে। আমি কি জবাব দেব? তাকে কেন হত্যা করা হলো? তার বিচার দাবি করেন তিনি।

গত ১৯ ডিসেম্বর রাজধানীর তেজগাঁওয়ে রেলওয়ে স্টেশনে দুবৃত্তদের অগ্নিকান্ডে ট্রেনে দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া পপির ভাই মো. হাবিব বলেন, আমি ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও আমার বোন তিন দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে হেরে গেলেন। আমরা ট্রেনে নিরাপদ ভেবে যাত্রা করেছিলাম কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই আমার বোন লাশ হয়েছে। বোন হত্যার বিচার দাবি করেন তিনি।

বক্তারা বলেন, ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর ঢাকা বিমানবন্দরে রেড আর্মি কর্তৃক জাপানি বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনায় বিমান বাহিনীতে বিদ্রোহ হয়। পরবর্তীতে তথাকথিত বিদ্রোহ দমনের নামে জিয়াউর রহমান একদিনের সামরিক আদালতে বিচার করে সেই রাতেই ফাঁসি সম্পন্ন করতেন ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, রংপুর, যশোর ও বগুড়া কেন্দ্রীয় কারাগারে।

রাতের আঁধারে কারফিউ দিয়ে ফাঁসি কার্যকর করা হতো। কোন প্রকার ধর্মীয় সৎকার ছাড়াই লাশগুলো ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানে, কুমিল্লার টিক্কারচর কবরস্থানে মাটিচাপা দেওয়া হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তড়িঘড়ি করে ফাঁসি দেয়ার আগে আত্মপক্ষ সমর্থন কিংবা আইনজীবি নিয়োগের কোন সুযোগ দেওয়া হয়নি। অথচ এই মানুষগুলোকে ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার ছিলো।

১৯৭৭ সালের অক্টোবর মাসে দীর্ঘদিন পরিবারগুলোর কাছে এই তথ্য অজানা ছিলো। হতভাগ্য সন্তানেরা জানেন না কোথায় তাদের সমাহিত করা হয়েছে। সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের শাসনামলে নিহত সামরিক সৈনিকদের প্রকৃত ইতিহাস এখনো অজানা।

বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশকে মানবাধিকারের বিবৃতি দেয়। অথচ তাদের নিজেদের দেশে মানবাধিকার নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায়ই বন্দুকধারীরা গুলি করে স্কুল শিক্ষার্থীদের হত্যা করছে। গত কয়েক মাস থেকে ৩০হাজার ফিলিস্তিনিকে ইসরায়েলী হত্যা করেছে। সেখানে ১০৬জন সাংবাদিক নিহত হলেও কোন সংগঠনের বিবৃতি নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওই হত্যাযজ্ঞকে সহায়তা করছে। তারাই বাংলাদেশে কিছু হলেই বিবৃতি দেয়। তারা বাংলাদেশে স্বাধীনতা বিরোধী ও খুনিদের আগেও আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়েছে। এখনও তাদের হত্যাকান্ডকে সমর্থন করছে। ফিলিস্তিনিদের হত্যা করার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইসরায়েলকে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। অথচ বাংলাদেশের ১৯৭৭ সালে অসংখ্য সামরিক কর্মকর্তাকে বিনা বিচারে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছে তখনও তথাকথিত এসব মানবাধিকার নিয়ে চিৎকার করা রাষ্ট্রগুলো কোন কথা বলেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী। তারা কারো স্বাধীনতাকে স্বীকার করেন না।

সেমিনার শেষে প্রেসক্লাব চত্তরে সংক্ষিপ্ত মানববন্ধন কর্মসূচীতে ১৯৭৭ সালে বিনাবিচারে ফাঁসি ও নিখোঁজের শিকার সামরিক অফিসারদের পরিবারের সদস্যরা তাদেরকে শহীদ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া এবং ওই সময় বিচারের নামে প্রহসনের বিচার দাবি করেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।