মোদির বিরুদ্ধে কথা বলে ‘পাপ’ : সত্যপাল
জম্মু–কাশ্মীরের সাবেক রাজ্যপাল সত্যপাল মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করতে নোটিশ পাঠিয়েছে সিবিআই।
প্রথম নিউজ, ডেস্ক: জম্মু–কাশ্মীরের সাবেক রাজ্যপাল সত্যপাল মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করতে নোটিশ পাঠিয়েছে সিবিআই। জম্মু–কাশ্মীরে এক বেসরকারি বিমা প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প নিয়ে সত্যপাল দুর্নীতির যে অভিযোগ এনেছেন, সে বিষয়েই সিবিআই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায়। তাঁকে তলব করার খবর সাবেক রাজ্যপাল নিজেই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
গত শুক্রবার সিবিআই সত্যপালকে তাদের দপ্তরে আসতে নোটিশ পাঠায়। পরে মন বদল করে জানায়, সত্যপাল মালিকের দিল্লির ঠিকানাতেই তারা যাবে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে। এই খবরও সত্যপাল জানিয়েছেন।
জম্মু–কাশ্মীর ছাড়া গোয়া ও মেঘালয়ের এই সাবেক রাজ্যপাল ও বিজেপি নেতা সম্প্রতি একাধিক সাক্ষাৎকারে নির্দিষ্ট কয়েকটি অভিযোগ আনেন। অভিযোগগুলোর দুটি দুর্নীতিসংক্রান্ত। সেই কথা জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুর্নীতিকে ঘৃণা করেন না। করলে তাঁর দফতর থেকে ফোন করে দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা প্রকল্প অনুমোদনের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে পারতেন না।
অন্য অভিযোগটি জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত। সত্যপাল রাজ্যপাল থাকাকালীন ২০১৯ সালে ঘটেছিল পুলওয়ামা–কাণ্ড। সন্ত্রাসবাদীদের বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি সেনা জওয়ানদের কনভয়ে ধাক্কা দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটানোর ফলে ৪০ জওয়ানের মৃত্যু হয়েছিল। ওই ঘটনার দায় তিনি সম্পূর্ণ সরকারের ওপর চাপিয়ে বলেছিলেন, জওয়ানদের আসা–যাওয়ার জন্য ৫টি বিমান চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা মঞ্জুর করেনি। প্রধানমন্ত্রীকে তিনি সে কথা জানালে মোদি তাঁকে চুপ থাকতে বলেছিলেন। পরে ওই ঘটনাই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পরিচালিত করে ওই বছর বিজেপি নির্বাচনে জিতেছিল।
জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত গাফিলতির অভিযোগ নিয়ে কোনো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা অবশ্য সত্যপালকে জিজ্ঞাসাবাদে আগ্রহ দেখায়নি। সিবিআইয়ের তলব শুধু বিমা প্রকল্প নিয়ে। অথচ সত্যপাল বলেছিলেন, দুটি প্রকল্পের অনুমোদনের জন্য তাঁকে ৩০০ কোটি টাকা ঘুষের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।
সত্যপাল নিজেই এ খবর জানিয়ে টুইট করে বলেছেন, ‘সত্য কথা বলে কিছু মানুষের পাপ প্রকাশ করেছি। মনে হয় সে কারণেই ডাক এসেছে। আমি কৃষকের সন্তান। ভয় পাই না। সত্যের পাশে আছি সব সময়।’
বিমা প্রকল্পটি ছিল অনিল আম্বানির রিলায়েন্স জেনারেল ইনস্যুরেন্সের। রাজ্যের সরকারি কর্মীদের ওই স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করার কথা ছিল। সে জন্য অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের বছরে দিতে হতো ২০ হাজার ও কর্মরতদের বছরে ৮ হাজার ৫০০ টাকা। এতে রাজ্যের সাড়ে ৩ লাখ সরকারি কর্মীর মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছিল। কারণ, সরকারি প্রকল্পে কোনো কর্মীকে স্বাস্থ্য বিমার জন্য এক টাকাও দিতে হয় না। সত্যপালের অভিযোগ, বিজেপি ও আরএসএস নেতা রাম মাধব ব্যক্তিগতভাবে তাঁকে সে জন্য প্রভাবিত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি প্রকল্পটির অনুমোদন না দিয়ে তা বাতিল করে দেন।
দুর্নীতির দ্বিতীয় বিষয়টি ছিল এক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে। সেটারও অনুমোদন দিলে ১৫০ কোটি টাকা তাঁকে দেওয়া হতো বলে সাবেক রাজ্যপালের অভিযোগ। তিনি সেই প্রকল্পও বাতিল করে দেন। তবে দ্বিতীয় ওই অভিযোগ নিয়ে সিবিআই কিছু জানার আগ্রহ দেখায়নি। যেমন কোনো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা পুলওয়ামা নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদের আগ্রহ দেখায়নি। অথচ, পুলওয়ামা নিয়ে তিনি সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে দোষারোপ করেছেন। দোষ দিয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালকেও। তিনি এ কথাও বলেছিলেন, জওয়ানদের মোতায়েন করার জন্য তাঁর কাছে বিমান চাওয়া হলে তিনি তা মঞ্জুর করতেন।
কিছুদিন আগেই দেশের ১৪টি বিরোধী দল একযোগে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়ে বলেছিল, বিরোধীদের নিশানা করতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলো ব্যবহার করছে সরকার। ক্ষমতার অপব্যবহার করছে। এই প্রবণতা রুখতে সুপ্রিম কোর্টকে অনুরোধ জানানো হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট সেই আবেদন খারিজ করে বলেছিলেন, রাজনৈতিক পরিসর সংকুচিত হলে রাজনৈতিকভাবেই তার মোকাবিলা করতে হবে। আদালতের মাধ্যমে নয়।
সত্যপালকে সিবিআই তলব করার সঙ্গে সঙ্গে বিরোধীরা আবার সরব হয়েছে। কংগ্রেস নেতা কে সি বেনুগোপাল বলেছেন, ‘ক্ষমতালোভী, দুর্নীতিগ্রস্ত অযোগ্য প্রধানমন্ত্রীর মুখোশ যেদিন সত্যপাল মালিক খুলে দিয়েছেন, সেদিনই বোঝা গিয়েছিল, প্রধানমন্ত্রীর পোষা সংস্থাগুলো তাঁকে নিশানা করবে।’ প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বেনুগোপাল টুইটে লেখেন, ‘এসব সংস্থা প্রকৃত অপরাধী ধরার জন্য, আপনার রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য নয়।’ সুর চড়িয়েছেন আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালও। সত্যপালের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সারা দেশ আপনার সঙ্গে আছে। আতঙ্কের আবহে আপনি সাহস দেখিয়েছেন। যাঁরা সিবিআইয়ের পেছনে লুকিয়ে আছেন, তাঁরা কাপুরুষ, অশিক্ষিত, দুর্নীতিগ্রস্ত ও বিশ্বাসঘাতক।’
সিবিআই অবশ্য দাবি করেছে, সত্যপাল মালিকের অভিযোগের ভিত্তিতে গত এপ্রিল মাসেই তারা তদন্ত শুরু করেছে। তাদের এফআইআরে রিলায়েন্স জেনারেল ইনস্যুরেন্স সংস্থার নাম আছে।