মজুরি বৃদ্ধি ও হামলার প্রতিবাদে গার্মেন্ট শ্রমিকদের দিনভর বিক্ষোভ

গতকাল সড়ক অবরোধ করে রাখায় মিরপুরজুড়ে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

মজুরি বৃদ্ধি ও হামলার প্রতিবাদে গার্মেন্ট শ্রমিকদের দিনভর বিক্ষোভ

প্রথম নিউজ, অনলাইন: মজুরি বৃদ্ধি ও হামলার প্রতিবাদে গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলন করেছেন মিরপুরের বিভিন্ন গার্মেন্টসে কর্মরত পোশাক শ্রমিকরা। গতকাল সড়ক অবরোধ করে রাখায় মিরপুরজুড়ে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন ২৩ হাজার টাকা করার দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলনে স্থানীয় কাউন্সিলরের লোকজনের হামলার বিচার দাবি করে শ্রমিকরা। 

সরজমিন মিরপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সকাল ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত পোশাক শ্রমিকরা মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে লাঠিসোঁটা নিয়ে জড়ো হতে থাকেন। এ সময় ওই এলাকায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। পরে সকাল ৯টার দিকে আশেপাশের সকল গার্মেন্টস শ্রমিকরা এক হয়ে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর থেকে ১৪ নম্বরের দিকে চলে যান তারা। সেখান থেকে আবারো মিরপুর ১০ নম্বর হয়ে লাঠি হাতে শ্রমিকরা মিরপুর-১ নম্বর গোলচত্বরে অবস্থান নেন। এ সময় টেকনিক্যাল থেকে আসা সব ধরনের যানবাহন ঘুরিয়ে দেন তারা। পরে কয়েকটি গার্মেন্টসের ফটকও ভাঙচুর করতে দেখা যায় শ্রমিকদের।  ১২টা নাগাদ ১ নম্বর এলাকা ছেড়ে আন্দোলনকারীরা আবারো ১০ নম্বরে অবস্থান নেন। দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে আওয়ামী লীগ নেতাদের একটি মিছিল নিয়ে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে দেখা করতে সেখানে যান শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। 

একপর্যায়ে উত্তেজিত শ্রমিকরা তার বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। তোপের মুখে প্রতিমন্ত্রী দুপুর ১টার দিকে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এ সময় ১০ নম্বর শাহ্‌ আলী প্লাজার উল্টোপাশের রাস্তায় অবস্থান নেয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা তখন মিছিল নিয়ে মিরপুর-১২ নম্বরের দিকে রওনা হয়ে মিরপুর-১১ নম্বর মেট্রোরেল স্টেশনের নিচের রাস্তায় অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। এরই মাঝে আন্দোলনরত স্থানে যায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এর একটি দল। এ সময় পোশাক শ্রমিকদের দাবি দাওয়ার বিষয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ আবদুর রহমান। 

শ্রমিকরা র?্যাব’র কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলছেন, আমাদের দাবি অধিকার আদায়ের। আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী না। গত পাঁচবছর ধরে বেতন বাড়ে না তাই বেতন বাড়ানোর দাবিতে আমরা আন্দোলন করছি। কোনো রাজনৈতিক দল আমাদের দেখে না। র?্যাব’র কর্মকর্তাদের সামনে নিজেদের দাবির বিষয়ে শ্রমিকরা বলেন, গত কয়েক দিন ধরে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কারখানার সামনে আন্দোলন করছিলাম। গতকাল স্থানীয় কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা আমাদের ওপর হামলা চালায়। বেতন বাড়ানোর দাবি করা কি অন্যায়? অথচ তারা আমাদের ওপর গুলি করলো, নির্যাতন করলো। কেউ এই বিষয় নিয়ে কথা বলছে না। আমরাই শুধু মার খেলাম। মালিকপক্ষ তো এলো না। মারও খেলো না। তারাই আমাদের আন্দোলন থামাতে এই হামলা করিয়েছেন। এ সময় শ্রমিকরা রাজনৈতিক নেতাদের হামলায় দু’জন শ্রমিক নিহতের কথা র?্যাবকে জানায়। হাছান নামে আন্দোলনরত এক শ্রমিক বলেন, একজন শ্রমিক যদি ৮ হাজার টাকা বেতন পায়। তার পরিবারে যদি পাঁচজন সদস্য থাকে, বাসা ভাড়াতেই তো চলে যায় ৫ হাজার টাকা। বাকি টাকায় কীভাবে সংসার চলবে। বাজারদরের যে অবস্থা। তাতে তো দু’বেলা ভাত খাওয়ার অবস্থা নেই। আমরা কীভাবে বাঁচবো। কয়েক টাকা বেতন বাড়ানোর দাবিতে রাস্তায় নেমেছি। কিন্তু এখন জীবন নিয়ে টানাটানি।

পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) জসিম উদ্দিন জানান, শ্রমিকেরা তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করছেন। এটা তাদের ন্যায্য দাবি। এই দাবি পূরণে সংশ্লিষ্টরা কথাও বলেছেন।