বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে দল পাঠাতে নারাজ পাকিস্তানের ক্রীড়ামন্ত্রী
প্রথম নিউজ, স্পোর্টস ডেস্ক: এশিয়া কাপ আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটে গেছে। পাকিস্তানের প্রস্তাব করা হাইব্রিড মডেলেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এশিয়া কাপ। এই এশিয়া কাপে ভারত তাদের ম্যাচগুলো খেলবে শ্রীলঙ্কার মাটিতে।
এশিয়া কাপ নিয়ে জটিলতা কেটে যাওয়ার পর বিশ্বকাপ নিয়েও জটিলতার অবসান হবে ভেবেছিলো সবাই। কিন্তু আদৌ সেই জটিলতা কাটেনি। বরং, ভারতের মাটিতে বাবর আজমদের খেলতে পাঠানো হবে কি না তা নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তা, সংশয়ে রয়েছে পাকিস্তান সরকার। বিশেষ করে, পাকিস্তানের ক্রীড়ামন্ত্রী এহসান মাজারির একটি মন্তব্য ঘিরে তৈরি হয়েছে নতুন অনিশ্চয়তা। তিনি জানিয়েছেন, প্রয়োজন হলে পাকিস্তান বিশ্বকাপ থেকে সরে দাঁড়াবে।
বিশ্বকাপের চূড়ান্ত সূচি এরই মধ্যে ঘোষণা হয়ে গেছে। সূচি ঘোষণা হওয়ার পরই পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) তাদের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ আহমেদ ছাড়াও পাকিস্তান অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয় এবং বিদেশ মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাছিয়ে ভারতের মাটিতে ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলার প্রয়োজনীয় অনুমতি চাওয়া হয়।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তান ক্রীড়ামন্ত্রীর এহসান মাজারির বক্তব্য, আহমেদাবাদে খেলতে পাকিস্তানের তেমন সমস্যা নেই। তবে ভারত এশিয়া কাপ নিয়ে নিরপেক্ষ ভেন্যুর ব্যাপারে অনড় থাকলে পাকিস্তানও বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে যাবে না। মাজারি বলেছেন, ‘পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড আমার মন্ত্রণালয়ের অধীন। আমার ব্যক্তিগত মতামত, ভারত যদি এশিয়া কাপ খেলার ব্যাপারে নিরপেক্ষ ভেন্যুর দাবিতে অনড় থাকে, তাহলে বিশ্বকাপ নিয়ে পাকিস্তানও সমান সুবিধা দাবি করতে পারে।’
বিশ্বকাপের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ প্রসঙ্গে মাজারি বলেন, ‘প্রথম যখন শুনলাম ভারতের সঙ্গে আহমেদাবাদে খেলতে হবে, তখন মনে মনে হেসেছিলাম। নিজেকে বলেছিলাম, আমাদের ভারতে না যাওয়াটাই নিশ্চিত করা হচ্ছে।’ যদিও আহমেদাবাদ নিয়ে তার ব্যক্তিগত আপত্তি নেই। মাজারি বলেছেন, ‘আহমেদাবাদ কোনও বিষয় নয়। পাকিস্তান আগেও সেখানে খেলেছে। সবই সম্ভব; কিন্তু আগে ভারতের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া প্রয়োজন। ভারতের উচিত পাকিস্তানে এসে খেলা। পিসিবি চেয়ারম্যান দক্ষিণ আফ্রিকায় গেছেন। আগে দেখি তিনি ফিরে এসে কী জানান।’
ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের অংশগ্রহণ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য পাকি প্রধানমন্ত্রী গত শুক্রবার একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছেন। এরপর শনিবার এ মন্তব্য করেন পাক ক্রীড়ামন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি। সদস্য হিসাবে রয়েছেন ১১ জন মন্ত্রী। তাদের মধ্যে আমি একজন। আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে প্রধানমন্ত্রীকে সুপারিশ করব। প্রধানমন্ত্রী পিসিবির প্যাট্রন ইন চিফ। তিনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।’ আগামী সপ্তাহে পাক প্রধানমন্ত্রীকে রিপোর্ট দিতে পারে কমিটি।
অন্য দিকে, আগামী সপ্তাহে দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) বৈঠক রয়েছে। সেখানে এশিয়া কাপ এবং বিশ্বকাপ নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সচিব জয় শাহ’র সঙ্গে কথা বলতে পারেন পিসিবির নতুন চেয়ারম্যান জাকা আশরফ। এশিয়া কাপের চূড়ান্ত সূচি এখনও প্রকাশ হয়নি।
এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি) সূত্রে খবর, এশিয়া কাপ হতে পারে পাকিস্তান এবং শ্রীলংকায়। ভারতের ম্যাচগুলি হতে পারে শ্রীলংকার মাটিতে। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচও হতে পারে এই দেশটিতে। এ প্রসঙ্গে পাকিস্তান ক্রীড়ামন্ত্রী বলেন, ‘এশিয়া কাপের আয়োজক পাকিস্তান। সব ম্যাচ আয়োজনের অধিকার রয়েছে পাকিস্তানের। ক্রিকেটপ্রেমীরাও সেটাই চান। আমি কোনও হাইব্রিড মডেলের পক্ষে নই।’
তবে ভারতের বিপক্ষে খেলায় রাজনীতি প্রবেশ করানোর গুরুতর অভিযোগ তোলেন মাজারি। তিনি বলেন, ‘ভারত ক্রিকেটের মধ্যে রাজনীতি নিয়ে এসেছে। আমি বুঝতে পারছি না ভারত সরকার কেন তাদের ক্রিকেট দলকে পাকিস্তানে খেলতে পাঠাতে রাজি নয়। অথচ কয়েকদিন আগে ভারতের বেজবল দল ইসলামাবাদে খেলে গেছে। ব্রিজ খেলতেও ভারতের খেলোয়াড়রা পাকিস্তানে এসেছিলেন। ওই প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথি হিসাবে আমি গিয়েছিলাম। ভারতই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। পাকিস্তানের হকি, ফুটবল, দাবা দল ভারতে গিয়ে খেলে এসেছে।’
পাকি ক্রীড়ামন্ত্রীর মতে, ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা নিয়ে ভারতের উদ্বেগ অর্থহীন। তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা নিয়ে ভারতের বক্তব্য যুক্তিপূর্ণ নয়। নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ডের মতো দল পাকিস্তানে এসে খেলে গেছে। তারা রাষ্ট্রপতির সমান নিরাপত্তা চেয়েছিল। আগে যখন ভারতীয় দল এসেছিল, তখন ক্রিকেটপ্রেমীরা তাদের দারুণভাবে স্বাগত জানিয়েছিলেন। নিরাপত্তা আসলে ভারতের একটা অজুহাত। আমরা তো পাকিস্তান সুপার লিগও সফলভাবে আয়োজন করি। এই প্রতিযোগিতায় অনেক বিদেশি ক্রিকেটার খেলতে আসেন।’
ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক ক্রিকেট শুরু করারও পক্ষে মাজারি। তার বক্তব্য, ‘টেলিভিশনে সবচেয়ে বেশি মানুষ পাকিস্তান-ভারত ম্যাচ দেখেন। আমরা চাই সুস্থভাবে ক্রিকেট খেলা হোক। এ জন্য ভারতের ইতিবাচক ভূমিকা প্রয়োজন।’