ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র চালু

এছাড়া ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বাইরে প্রথমবারের মতো উদযাপিত হলো এনআরবি (নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশি) ডে।

ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র চালু

প্রথম নিউজ, প্রবাস ডেস্ক: ব্রিটিশ-বাংলাদেশি প্রবাসীদের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) চালুর মধ্য দিয়ে ‘প্রবাসী দিবস’ উদযাপন করেছে বাংলাদেশ হাই কমিশন, লন্ডন। এছাড়া ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বাইরে প্রথমবারের মতো উদযাপিত হলো এনআরবি (নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশি) ডে। এদিকে একই দিনে এনআরবি ডে উপলক্ষে গত শনিবার বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ পরিষদ ইউকে’র উদ্যোগে এনআরবি ডে উদযাপিত হয়েছে পূর্ব লন্ডনের রয়েল রিজেন্সি হলে।

এনআরবি (নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশি) তারাই যারা বিদেশে স্থায়ীভাবে অথবা শিক্ষা বা চাকরির কারণে অস্থায়ীভাবে দেশের বাইরে বাস করেন। ২০১৭ সাল থেকে বেসরকারিভাবে ৩০ ডিসেম্বর এনআরবি ডে উদযাপিত হয়ে আসছে। তবে এ বছর প্রথমবারের মতো সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ৮১টি মিশনে একসাথে প্রবাসী দিবস (এনআরবি ডে) উদযাপিত হয়েছে।

যুক্তরাজ্য প্রবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা, বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতা, বিভিন্ন বারা ও কাউন্সিলের মেয়র ও কাউন্সিলর, ব্যবসায়ী ও রেমিট্যান্স প্রেরণকারী প্রবাসী, পেশাজীবী সংগঠনের নেতা ও সাংবাদিকসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবাসী বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতিতে জাতীয় প্রবাসী কল্যাণ দিবস, ২০২৩ উদযাপন করেছে বাংলাদেশ হাই কমিশন, লন্ডন।

এ উপলক্ষে শনিবার দূতাবাসে এক বিশেষ মতবিনিময় সভায় যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম ব্রিটিশ-বাংলাদেশি প্রবাসীদের সঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক বন্ধনের কথা স্মরণ করে বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধসহ গত ৫২ বছরে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি প্রবাসীদের উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

হাইকমিশনার প্রবাসী-বান্ধব বিভিন্ন জাতীয় নীতিমালা গ্রহণ এবং ৩০ ডিসেম্বরকে জাতীয় প্রবাসী দিবস ঘোষণার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। প্রবাসী নাগরিকদের সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকারের কল্যাণমূলক নীতিমালা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকে সদা তৎপর রয়েছে উল্লেখ করে হাইকমিশনার বলেন, গত পাঁচ বছরে যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের মর্যাদা ও সম্মানের সাথে রেকর্ডসংখ্যক কনস্যুলার এবং ওয়েলফেয়ার সেবা প্রদান করেছে বাংলাদেশ হাই কমিশন, লন্ডন।

২০২৩ সালেই কোভিড পূর্ববর্তী ২০১৯ এর তুলনায় ৫৬ শতাংশ বেশি এনভিআর, ২৫ শতাংশ বেশি এমআরপি এবং ২,৫০০ এর বেশি ওয়েলফেয়ার সংক্রান্ত সার্ভিস দেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে লন্ডন থেকে ই-পাসপোর্ট এবং এনআইডি যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের হাতে তুলে দিতে পেরে হাই কমিশন গর্বিত বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যুক্ত্যরাজ্য ও আয়ারল্যান্ডে প্রবাসীদের সর্বপ্রকার সহায়তা এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের কাজে সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ হাই কমিশন, লন্ডন সদা অঙ্গীকারবদ্ধ।

এফডিআই, রেমিট্যান্স প্রেরণ ও যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্য সিআইপি নির্বাচিত ব্রিটিশ-বাংলাদেশীদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি এই তিন ক্ষেত্রে আরও বেশি অবদান রাখতে প্রবাসীদের আহ্বান জানান।

হাইকমিশনার যুক্তরাজ্যের মূলধারার রাজনীতি, অর্থনীতি, বাণিজ্য, আইন, শিক্ষকতা, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন পেশায় কর্মরত সফল এবং মেধাবী নতুন প্রজন্মের ব্রিটিশ ও আইরিশ প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভূয়সী প্রশংসা করে এ বিশেষ দিনে তাদের বিশেষভাবে অভিনন্দন জানান।

মতবিনিময় অনুষ্ঠানের পরে হাইকমিশনার একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিকের হাতে ই-পাসপোর্ট তুলে দেন। এরপর তিনজন বিশিষ্ট কমিউনিটি ব্যক্তিত্বের এনআইডি আবেদন গ্রহণের মাধ্যমে এনআইডি পাইলট প্রজেক্ট কার্যক্রমের উদ্বোধন করে হাইকমিশনার জানান, আগামী জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারি মাসে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের উপস্থিতিতে লন্ডনে পূর্ণাঙ্গ এনআইডি সেবা কার্যক্রম চালু করা হবে।

এ প্রসঙ্গে হাইকমিশনার উল্লেখ করেন, এনআইডি কার্ডের জন্য বাংলাদেশি জন্ম নিবন্ধন সনদ এবং বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকা বাধ্যতামূলক। প্রবাসীদের মধ্যে যাদের বাংলাদেশি জন্ম-নিবন্ধন সনদ নেই, তারা বাংলাদেশ হাইকমিশন লন্ডনের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আবেদন করলে তাদের শিগগিরই বাংলাদেশের জন্ম-নিবন্ধন সনদ দেওয়া হবে, যার মাধ্যমে তারা বাংলাদেশ হাইকমিশন লন্ডন হতে ই-পাসপোর্ট এবং এনআইডি গ্রহণ করতে পারবেন।

এদিকে শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) এনআরবি ডে উপলক্ষে গত শনিবার বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ পরিষদ ইউকে’র উদ্যোগে মহা সমারোহে এনআরবি ডে উদযাপিত হয়েছে পূর্ব লন্ডনের রয়েল রিজেন্সি হলে। সংগঠনের সভাপতি জাহাঙ্গীর খানের সভাপতিত্বে ও সৈয়দ আহবাব হোসেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এ উৎসবে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য দেন যথাক্রমে হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম, স্টিফেন টিমস এমপি, চ্যানেল এস চেয়ারম্যান আহমেদুস সামাদ চৌধুরী, সাংবাদিক ও কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব কে এম আবুতাহের চৌধুরী, বিবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট সাইদুর রহমান রেনু ,ব্যারিস্টার আতাউর রহমান, সাংবাদিক তাইছির মাহমুদ ও নাহাস পাশা, রাজনীতিবীদ আব্দুল আহাদ চৌধুরী, সংগঠনের সাবেক সভাপতি আশিকুর রহমান।

অনুষ্ঠানে বিশেষ এনআরবি অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। কমিউনিটি নেতা মরহুম মিয়া মনিরুল আলম (মরণোত্তর), কমিউনিটি নেতা শাহগীর বখত ফারুক, ব্যবসায়ী জিল্লুর রহমান এমবিই ওই অ্যাওয়ার্ডে অভিষিক্ত হন। অনুষ্ঠানের এ পর্ব পরিচালনা করেন টিভি প্রেজেন্টার ফারহান মাসুদ খান। অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ বাংলাদেশি কাউন্সিলার, সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা, কমিউনিটি ও ব্যবসায়ী নেতাসহ বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি উপস্থিত ছিলেন।