বিদ্যুৎ আমদানি: ২৫ বছর মেয়াদি চুক্তিতে রাজি বাংলাদেশ-নেপাল
কাঠমান্ডু পোস্টের রিপোর্ট
প্রথম নিউজ, ডেস্ক: ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানিতে ২৫ বছর মেয়াদি একটি চুক্তিতে রাজি হয়েছে বাংলাদেশ ও নেপাল। নেপাল ইলেকট্রিসিটি কর্তৃপক্ষের (এনইএ) একজন কর্মকর্তা বলেছেন, কাঠমান্ডু ও ঢাকার কর্মকর্তারা দীর্ঘ মেয়াদের এই চুক্তির বিষয়ে একমত হয়েছেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন কাঠমান্ডু পোস্ট। এখনও আমদানি করা এই বিদ্যুতের যে শুল্ক সে বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা না হলেও, চুক্তির মেয়াদ স্থির হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশে নেপালের বিদ্যুতের দীর্ঘ মেয়াদি বাজার নিশ্চিত হবে। এনইএর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কুল মান ঘিসিং বলেছেন, বাংলাদেশে ২৫ বছরের জন্য বিদ্যুৎ বিক্রির একটি চুক্তিতে রাজি হয়েছি আমরা। বাংলাদেশকে দেয়া আমাদের প্রস্তাব অনুযায়ী এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কাঠমান্ডু পোস্ট আরও লিখেছে, নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহাল ৩১শে মে থেকে ৩রা জুন পর্যন্ত ভারত সফর করেন। এ সময়ে ভারতের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে আন্তঃসরকার বিদ্যুৎ বাণিজ্য বিষয়ক যে চুক্তির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, বাংলাদেশের সঙ্গেও সেই একই রকম বোঝাপড়া হয়েছে। এনইএর বিদ্যুৎ বাণিজ্য বিষয়ক পরিচালক প্রবাল অধিকারীর মতে, বিদ্যুৎ খাতে অনিশ্চয়তার কথা তুলে ধরে নেপাল বাংলাদেশকে আগেই একটি প্রস্তাব দেয়। তাতে বলা হয়, নেপাল ৫ বছর মেয়াদী চুক্তি পছন্দ করে। এটা নবায়ন করা যাবে। নেপালের সেই প্রস্তাবে সাড়া দিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু ঘিসিংয়ের মতে, চূড়ান্তভাবে ২৫ বছর মেয়াদি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ। তবে এই চুক্তি এখনও স্বাক্ষর হয়নি।
ঘিসিং বলেন, শুল্ক ছাড়া অন্য ইস্যুগুলোতে আমরা সমঝোতায় পৌঁছেছি। ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিক্রির জন্য নেপাল, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর হলেই এই সমঝোতা আনুষ্ঠানিকতা পাবে। নেপালি কর্মকর্তারা বলছেন, শুল্ক ছাড়া অন্য ইস্যুগুলোকে আগে মিটমাট করতে চায় বাংলাদেশ। এই চুক্তির প্রযুক্তি ও বাণিজ্যিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তার প্রেক্ষিতে উভয় পক্ষ সমঝোতায় এসেছে। রিপোর্টে আরও বলা হয়, শুল্কের বিষয়ে সমঝোতা করতে দৃশ্যত এনইএ উন্মুক্ত। ঘিসিং বলেন, শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে আমরা ভাল শুল্ক প্রস্তাবের পরিকল্পনা নিয়েছি। কারণ, চুক্তিটি হবে সরকারের সঙ্গে সরকারের।
বাংলাদেশে বিদ্যুতের বিদ্যমান দামের বিষয় হতে পারে একটি রেফারেন্স। তবে আমরা এখনও এর রেটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিইনি। প্রবাল অধিকারী বলেন, যখন সঞ্চালন চার্জ, সার্ভিস ফির বিষয় আসবে, তখন তা এনটিপিসি বিদ্যুৎ ভাইপার নিগাম লিমিটেডকে (এনভিভিএন) সরাসরি পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে। ভারত বর্তমানে বিদ্যুতের ক্রেতাদের কাছ থেকে যে চার্জ নিচ্ছে, সেই সমতুল্য চার্জ প্রযোজ্য হবে সঞ্চালনে। তিনি আরও বলেন, লোড সহ সঞ্চালন বিষয়ক অবকাঠামোর প্রযুক্তিগত অবস্থার ওপর নির্ভর করে প্রতি ইউনিটের সঞ্চালন চার্জ ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশকে পরিশোধ করতে হতে পারে ভারতীয় মুদ্রায় ৪০ থেকে ৫৫ পয়সা।
রিপোর্টে আরও বলা হয়, ভারতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন পেতে ভারতীয় কোম্পানিগুলো যে প্রচেষ্টা চালিয়েছে তার জন্য সার্ভিস ফি পরিশোধ করতে হতে পারে বাংলাদেশি সংস্থার। প্রবাল অধিকারী বলেন, এই সার্ভিস চার্জ হতে পারে প্রতি ইউনিট ভারতীয় মুদ্রায় ৪ থেকে ৭ পয়সা। এসব ফি সংগ্রহের দায়িত্বে থাকবে এনভিভিএন। নেপাল, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে এই ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে একটি পক্ষ হবে এনভিভিএন। একবার যখন নেপাল ও বাংলাদেশ শুল্কের বিষয়ে সমঝোতায় আসবে, তাতে ত্রিপক্ষীয় এই চুক্তির পথ খুলে যাবে। এতে আরও বলা হয়, মধ্য মে’তে বাংলাদেশে জ্বালানি বিষয়ক সচিব পর্যায়ের যৌথ কমিটির মিটিং হয়।
তখন এনইএ, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) এবং ভারতের এনভিভিএনের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরে সম্মত হয় নেপাল ও বাংলাদেশ। প্রতিবেশী এই দুই দেশের মধ্যে বিদ্যুৎ কেনাবেচায় সুবিধা দিতে প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়েছে ভারত। ভারত সরকার যে এই সুবিধা দিচ্ছে এর জন্য তাদেরকে স্বাগত জানিয়েছে নেপাল। উচ্চ ভোল্টেজের বহরামপুর-ভেড়ামারা আন্তঃসীমান্ত ট্রান্সমিশন লিঙ্কের মাধ্যমে এই বিদ্যুৎ বাণিজ্য অনুমোদন করতে ভারতের প্রতি অনুরোধ জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ও নেপাল।