বিদ্যুৎতের লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ জন জীবন,  কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও

প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ বার বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করে। রাত দিন ২৪ঘন্টায় ১৪-১৫ ঘন্টায় লোডশেডিং। প্রচণ্ড তাপদাহে শিশু, বয়োবৃদ্ধসহ মানুষের কষ্টের সীমা নেই।

বিদ্যুৎতের লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ জন জীবন,  কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও

প্রথম নিউজ, (হাসানুল কবির নাজির) কুষ্টিয়া: সাংস্কৃতিক রাজধানী খ্যাত কুষ্টিয়া জেলার অন্তর্গত সদর উপজেলার  হাটশ হরিপুর ইউনিয়ন। ইতিহাস ঐতিহ্যে ভরপুর ও জ্ঞানী-গুণীদের বিশেষ অবদানের জন্য এ উপজেলা বাংলাদেশে সর্বাধিক পরিচিত। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অগ্রযাত্রায় উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে এ উপজেলাতেও। ইতোমধ্যে কুষ্টিয়া সদর উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়ন উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তার পরেও এই হাটশ হরিপুর ইউনিয়নে পল্লী বিদ্যুতের তালবাহানা ও বিদ্যুৎ বিভ্রাট এখন চরমপর্যায়ে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ বার বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করে। রাত দিন ২৪ঘন্টায় ১৪-১৫ ঘন্টায় লোডশেডিং। প্রচণ্ড তাপদাহে শিশু, বয়োবৃদ্ধসহ মানুষের কষ্টের সীমা নেই। নীল আকাশে কালো মেঘের আভাস পেলেই পল্লী বিদ্যুৎতের বিদ্যুৎ  উধাও , সামান্য ঝড় কিংবা বৃষ্টিতে  বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেয়। পল্লী বিদ্যুতের তার ছিঁড়তে কোনো ঝড়ঝাপটা বা বিশাল আকারের বাতাস কিংবা টর্নেডোর প্রয়োজন হয় না।

এছাড়াও রক্ষণাবেক্ষণের দোহায় দিয়ে মাইকিং করে মাসে ৫-৭দিন বিদ্যুৎ সরবারহ বন্ধ থাকে। অল্প বাতাসে তার ছিঁড়ে যাওয়া বা সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া এমন বাজে অজুহাত পল্লী বিদ্যুতের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। তাদের এমন ভেলকিবাজিতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রিক সব ব্যবসায়ীর লোকসান গুনতে হচ্ছে। বোয়লাদাহ বাজিতপুর সড়কের দুপাশে গড়ে উঠেছে অর্ধ শতাধিক দোকান ঘিরে বিভিন্ন কাঠের বাহারি আসবাবপত্র তৈরির  ছোট বড় কারখানা যেখানে কর্মরত আছে ২০০-৩০০জন শ্রমিক। কয়েক দিন ধরেই পল্লী বিদ্যুৎতের লোডশেডিং চরম পর্যায়ে যার ফলে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। দোকান মালিকরা চরম লোকসানে পড়েছে।

ফার্নিচার ব্যবসায়ী  মোঃ শাখাওয়াত হোসেন  জানান, ৭-৮জন কর্মচারি সকাল থেকে তাদের সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে কিন্তু পল্লী বিদ্যুৎতের লোডশেডিংয়ের কারণে শ্রমিকদের বসে থাকতে হয়। প্রতিদিন কমপক্ষে ৫-৭ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হয়। এছাড়াও সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ, সার্কিট হাউজ সহ বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ স্থাপনায় কাঠের আসবাব পত্রের অর্ডার থাকলেও সেটা ডেলিভারি নিয়ে চরম দুঃশ্চিন্তায় আছি। এছাড়াও হরিপুরে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের তীব্র গরমে বিদ্যুৎ না থাকায় ক্লাসে মনোযোগী হতে পারছে না। হাটশ হরিপুরে দি ওল্ড কুষ্টিয়া হাইস্কুলের নব নিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মোঃআশরাফুল হক উজ্জ্বল জানান, বর্তমানে হাইস্কুলে ১৩৪৭ জন ছাত্র ছাত্রী অধ্যায়ণরত আছে। আসন্ন বোর্ড ফাইনাল পরীক্ষা আর কয়েকদিন পরই। কিন্তু তীব্র লোডশেডিংয়ে ছাত্র ছাত্রীদের ক্লাসে পাঠদান ঠিক ভাবে হচ্ছে না।
দীর্ঘদিন এমন জনদুর্ভোগের কোন সমাধান না হওয়ায় হরিপুরের কয়েক শত ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দারা হরিপুর বোয়ালদাহ মোড়ে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় হরিপুর পল্লী বিদ্যুৎতের অভিযোগ কেন্দ্র অফিস ঘেরাও করে। পল্লী বিদ্যুৎতের কর্মরত লাইনম্যান সহ অফিসের সকলকে অবরুদ্ধ করে, বাইরে বিদ্যুৎতের দাবীতে স্লোগান দেয়। পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আশংকায় কুষ্টিয়া মডেল থানা খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় এবং বিক্ষুদ্ধ বিদ্যুৎ গ্রাহকদের শান্ত করেন।
এই ব্যাপারে কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎতের জিএম (জেনারেল ম্যানেজার ) মোঃনাসির উদ্দিন জানান, তীব্র গরমে যে হারে চাহিদা বাড়ছে সে হারে সরবারহ বাড়ছে না তাই বিদ্যুৎতের লোডশেডিং চলমান রয়েছে। তবে খুব শীঘ্রই কয়া সাব ষ্টেশন কাজ শেষ হলে ডাবল লাইনে জনদুর্ভোগ অনেকটাই কমে যাবে। তাই সকলকে পরিস্থিতি বিবেচনায় কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।