‘বেতনভোগী কর্মকর্তা কীভাবে শতকোটি টাকার মালিক হন’

বিচারপতি মুহাম্মদ আব্দুল হাফিজ বৃহস্পতিবার বিচারিক কর্মদিবসের শেষ দিনে বিদায় সম্ভাষণের সময় তিনি একথা বলেন

‘বেতনভোগী কর্মকর্তা কীভাবে শতকোটি টাকার মালিক হন’

প্রথম নিউজ, অনলাইন: সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে ১ মাসের কিছু বেশি সময় দায়িত্ব পালন শেষে অবসরে গেলেন বিচারপতি মুহাম্মদ আব্দুল হাফিজ। বৃহস্পতিবার বিচারিক কর্মদিবসের শেষ দিনে বিদায় সম্ভাষণের সময় তিনি বলেন, সম্পদ-সম্পত্তি, অপরাধ, নারী ও শিশু নির্যাতন এবং অধিকারবিষয়ক মোকদ্দমায় প্রতিনিয়ত মিথ্যা মামলা করা হচ্ছে। প্রতিপক্ষকে হয়রানি করার জন্য মিথ্যা মামলা হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহত হচ্ছে। বিচার বিভাগকে এর ভার বহন করতে হচ্ছে। একজন বেতনভোগী কর্মকর্তা কীভাবে শতকোটি টাকার মালিক হন সে প্রশ্নও রাখেন তিনি। 

বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের ২ নম্বর বিচারকক্ষে বিদায়ি সংবর্ধনায় বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ এসব কথা বলেন। এ সময় প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও আপিল বিভাগের অপর বিচারপতিরা বেঞ্চে ছিলেন। বিদায়ি সংবর্ধনাকালে বিচারকক্ষটি আইনজীবী ও আগত ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে পরিপূর্ণ ছিল।

১৯৫৭ সালের ১ জুন জন্ম নেওয়া বিচারপতি আবদুল হাফিজের বয়স ৬৭ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। তবে আজ সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় বৃহস্পতিবার তার শেষ কর্মদিবস ছিল। প্রথা অনুসারে, বৃহস্পতিবার এই বিচারপতিকে বিদায়ি সংবর্ধনা জানানো হয়। অনুষ্ঠানে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন এ বিচারপতির কর্মময় জীবন নিয়ে বক্তব্য দেন।

মিথ্যা মামলা ও দুর্নীতি প্রসঙ্গে বিদায়ি সংবর্ধনায় বিচারপতি আবদুল হাফিজ বলেন, মিথ্যা মামলা ন্যায়বিচারের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি দুর্নীতি আমাদের সব অর্জনকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের হাত থেকে অফিস-আদালতকে মুক্ত রাখতে হবে। একজন বেতনভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারী কীভাবে কোটি কোটি, এমনকি শতকোটি টাকার মালিক হন, তা দেশবাসীকে হতবাক করে। তাই এগুলো রোধ করতে রাষ্ট্রকেই দায়িত্ব নিতে হবে।

বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ বলেন, নীতি-নৈতিকতার তোয়াক্কা না করে মুহূর্তেই বড়লোক হওয়ার মানসিকতা আমাদের বড় বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে। আপনারা সবাই এ ব্যাপারে সম্যকভাবে অবহিত।

বিচারকদের উদ্দেশে আপিল বিভাগের বিদায়ি এই বিচারপতি বলেন, বিচারকরা দায়িত্ব পালন করবেন সততা ও ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে সব প্রকার পক্ষপাতিত্ব ও ভয়-ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে; গরিব-ধনী, ক্ষমতাশালী-ক্ষমতাহীন, সবাই তার কাছে সমান। আইনজীবীরা আদালতকে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে আইনগত সহায়তা দেবেন, এটাই শাশ্বত নিয়ম। 

সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে, বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর ১৯৮২ সালে ঢাকা জেলা আদালতের আইনজীবী হিসাবে তালিকাভুক্ত হন।