বকেয়া বেতন চাওয়ায় শ্রমিকদের ওপর গুলি

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) বিকেল ৪টার দিকে বরিশাল নগরীর কাউনিয়া এলাকায় বিসিক শিল্পনগরীতে এ ঘটনা ঘটে।

বকেয়া বেতন চাওয়ায় শ্রমিকদের ওপর গুলি

প্রথম নিউজ, বরিশাল : বকেয়া বেতন চাওয়াকে কেন্দ্র করে বরিশালে ফরচুন সুজ শ্রমিকদের ওপর আনসারদের গুলিবর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ফরচুন সুজের দুটি কারখানা এবং বেশ কয়েকটি যানবাহনে ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং ভাঙচুর করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশের এক পরিদর্শক এবং নারী শ্রমিকসহ অন্তত ১০ জন শ্রমিক আহত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) বিকেল ৪টার দিকে বরিশাল নগরীর কাউনিয়া এলাকায় বিসিক শিল্পনগরীতে এ ঘটনা ঘটে। আহত মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউনিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন শ্রমিককে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানান, ফরচুন সুজ কোম্পানির প্রতিটি শ্রমিক মালিক পক্ষের চরম জুলুম এবং নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। গত তিন মাস ধারে ১০ হাজারের অধিক শ্রমিককে বেতন দিচ্ছে না তারা। গত ঈদে বোনাস পর্যন্ত দেয়নি। ফলে ঘর ভাড়া দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, দীর্ঘ দাবির প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার শ্রমিকদের এক মাসের অর্ধেক বেতন দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদ জানান শ্রমিকরা। এ নিয়ে ফরচুন প্রিমিয়ার কারখানায় শ্রমিকদের সঙ্গে মালিক পক্ষের বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায় ফরচুন গ্রুপের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের ভাই ও প্রতিষ্ঠানের এমডি নুর আলম এবং রবিউল ইসলামের নির্দেশে কারখানায় দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা শ্রমিকদের গায়ে গুলি করে। এতে ফয়সাল, রাফসান, রাজিব এবং জীবনসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়।
নারী শ্রমিক সাজু, মিতু এবং সালমাসহ বেশ কয়েকজন অভিযোগ করেন, শুধু পুরুষ শ্রমিকদের ওপর হামলা হয়নি। আনসার সদস্যরা নারী সদস্যের গায়ে হাত দিয়েছে। সালমাকে মারধর করেছে। মিতুকে মারধর করে তার মোবাইল ছিনিয়ে নিয়েছে।
এদিকে, ঘটনার কিছু সময় পর আনসার সদস্যদের গুলিতে রাজিব নামের একজন শ্রমিকের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে। এর পরপরই বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বিসিকের মধ্যে ফরচুন সুজ কারখানা এবং রাস্তার পাশে থাকা কোম্পানির কয়েকটি বাস এবং অন্তত ১০টি পণ্যবাহী ট্রাক ভাঙচুর করে।
খবর পেয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ কাউনিয়া থানা পুলিশের একাধিক টিম ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। তারা বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের নিবৃত করার চেষ্টা করে। এ সময় তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ এবং ফরচুন গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করে। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শ্রমিকদের ওপর লাঠিচার্জ করে।
খবর পেয়ে বরিশালের জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মনদীপ ঘরাই ঘটনাস্থলে ছুটে যান। জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে তিনিসহ জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসেছেন। শ্রমিকদের অভিযোগ শুনেছেন। মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আউয়াল মোল্লা শ্রমিকদের বরাত দিয়ে বলেন, শ্রমিকদের দাবি গত তিন মাস ধারে তারা বেতন পায় না। তাদের ওভারটাইম পর্যন্ত দেওয়া হয় না। কারখানা কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার তাদের এক মাসের অর্ধেক বেতন দেয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ জানায় শ্রমিকরা। এ সময় আনসার সদস্যরা শ্রমিকদের ওপর গুলি চালায় বলে শ্রমিকদের দাবি।
ঘটনাস্থলে থাকা বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার ফারুক হোসেন বলেন, খবর পেয়ে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ পুলিশ ফোর্স ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে শ্রমিকদের ইট-পাটকেলের আঘাতে পুলিশ পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান রক্তাক্ত হয়। পরে ভাঙচুর ঠেকাতে লাঠিচার্জ করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, জেলা প্রশাসন ও মেট্রোপলিটন পুলিশের উপস্থিতিতে শ্রমিক এবং মালিক পক্ষের লোকেদের নিয়ে বসে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।