ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিলো ইউরোপের তিন দেশ

নরওয়ে ও আয়ারল্যান্ডের পাশাপাশি ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ হলো ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া।

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিলো ইউরোপের তিন দেশ

প্রথম নিউজ, অনলাইন: ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিক-ভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে আয়ারল্যান্ড, স্পেন ও নরওয়ে। এ ঘোষণা দিয়েছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ। নরওয়ে ও আয়ারল্যান্ডের পাশাপাশি ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ হলো ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া। এর আগেই এ তিনটি দেশ এই স্বীকৃতি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। এর প্রেক্ষিতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দিয়েছে ইসরাইল। তারা  স্পেনকে উদ্দেশ্য করে বলেছে, মাদ্রিদ ইহুদিদের গণহত্যা করতে উস্কানি দিচ্ছে। ওদিকে স্লোভেনিয়া, বৃটেন ও অস্ট্রেলিয়াও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়ার কথা বিবেচনা করছে। তারাও এই স্বীকৃতি দিতে পারে। এর ফলে ফিলিস্তিনের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন সিএনএন, আল-জাজিরা। 

মঙ্গলবার স্পেনের মন্ত্রিপরিষদ পূর্বঘোষিত স্বীকৃতি দেয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করে। একই সঙ্গে নরওয়ে ও আয়ারল্যান্ড একই সিদ্ধান্ত কার্যকর করে। স্পেন সরকারের মুখপাত্র পিলার আলেগরিয়া ঘোষণা দেন যে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়ার গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে মন্ত্রিপরিষদ। এর একটিই লক্ষ্য। তা হলো শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনিদের সহায়তা করা। এ ঘোষণাকে ঐতিহাসিক ন্যায়বিচার বলে ঘোষণা দিয়েছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ইসরাইল রাষ্ট্রের পাশাপাশি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই শুধু শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ। ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হতে হবে পশ্চিমতীর ও গাজাকে একটি করিডোরের মাধ্যমে সংযুক্ত করে। এর রাজধানী হবে পূর্ব জেরুজালেম। উভয় পক্ষ সম্মত না হলে ১৯৬৭ সালের পূর্বের সীমান্ত পরিবর্তনকে স্বীকৃতি দেবে না মাদ্রিদ। ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধে পশ্চিমতীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গাজা উপত্যকা সহ বিভিন্ন ভূখণ্ড দখল করে নেয় ইসরাইল।  

উল্লেখ্য, মার্চেই স্পেন, আয়ারল্যান্ড, মাল্টা ও স্লোভেনিয়ার নেতারা ঘোষণা দেন যে- গাজা যুদ্ধের ইতি ঘটানোর ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে তারা ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার কথা বিবেচনা করছেন। মঙ্গলবার নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস্পেন বার্থ ইডি বিবৃতিতে বলেছেন, অসলোর স্বীকৃতি কার্যকর হয়েছে। এতে বলা হয়, কমপক্ষে ৩০ বছর ধরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে শক্তিশালী অবস্থান নিয়েছে নরওয়ে। মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে সেই স্বীকৃতি দিচ্ছে নরওয়ে। এটা নরওয়ে ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সম্পর্কের মধ্যে এক ঐতিহাসিক মাইলফলক। এরই মধ্যে ডাবলিনে আইরিশ পার্লামেন্টের বাইরে উত্তোলন করা হয়েছে ফিলিস্তিনি পতাকা। আইরিশ প্রধানমন্ত্রী সিমন হ্যারিস বলেন, এটা এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। আমি মনে করি এটা বিশ্বের কাছে একটি বার্তা পাঠাবে। দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানে আপনিও একটি দেশের পাশে দাঁড়াতে পারেন, যখন অন্যরা দুঃখজনকভাবে বোমা হামলাকে বেছে নিয়েছে। এসব ঘোষণায় ইসরাইলে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। গাজা যুদ্ধ নিয়ে ইউরোপিয়ান কিছু দেশের সঙ্গে তাদের মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরাইল কাটজ তেল আবিবে বসে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজকে ইহুদি গণহত্যা উস্‌কে দেয়ার একজন অংশীদার হিসেবে অভিযুক্ত করেছেন। এক্সে তিনি স্পেনের সেকেন্ড ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ইয়োলান্ডা ডায়াস, ইরানের সুপ্রিম নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি এবং গাজায় হামাস প্রধান ইয়াহিয়া সিওয়ারের মধ্যে তুলনা করেছেন। 

এর আগে জাতিসংঘে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার প্রস্তাবে ভোট দিয়েছে ১৯৩টি দেশের মধ্যে ১৪৩টি দেশ। এর মধ্যে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বেশ কিছু দেশ আছে। কিন্তু এর মধ্যে নেই ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি। ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্র মনে করে সমঝোতার মাধ্যমে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সমাধান হতে পারে। ক্রমশ চাপ বাড়ছে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর। শুধু তা-ই নয়, এসব দেশের প্রধানমন্ত্রীরা আহ্বান জানিয়েছেন ইসরাইলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার। একই সঙ্গে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মোট ২৭টি সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিও একই আহ্বান জানানো হয়। আয়ারল্যান্ড, স্পেন ও নরওয়ের এমন উদ্যোগকে মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের এই তিনটি দেশ তাদের বিবেকের কারণে সাড়া দিয়েছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেলও তাদের সুরে সুর মিলিয়ে কথা বলেছেন। ফলে ইউরোপের সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্কে টান পড়েছে। ওই তিনটি দেশ বলেছে, মধ্যপ্রাচ্যে টেকসই শান্তি অর্জনের জন্য সবচেয়ে উন্নত পথ হলো তাদেরকে স্বীকৃতি দিয়ে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক একটি সমাধান। কিন্তু দ্রুততার সঙ্গে তার নিন্দা জানিয়েছে ইসরাইল। সঙ্গে সঙ্গে ওই তিনটি দেশে নিয়োজিত তাদের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে ইসরাইল। 

সিএনএন বলেছে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ওই তিনটি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়ার ফলে ইসরাইলের ওপর ভয়াবহ চাপ সৃষ্টি হবে। কারণ, তারা গাজাকে সাত মাসের যুদ্ধে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে। সেখানে মানবিক সংকট সৃষ্টি করেছে। হত্যা করেছে কমপক্ষে ৩৬,০০০ মানুষ। এর ফলে অবিলম্বে গাজার রাফায় সামরিক অভিযান বন্ধ করতে ইসরাইলের প্রতি নির্দেশ দিয়েছে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস। গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধের জন্য ইসরাইল আন্তর্জাতিক অপ্রত্যাশিত কূটনৈতিক চাপ মোকাবিলা করছে। ওদিকে নিজ দেশে নিজের সরকারের ভেতরে বিভক্তি সৃষ্টি হয়েছে নেতানিয়াহুর। ৮ই জুন পর্যন্ত তাকে আল্টিমেটাম দিয়েছেন একজন মন্ত্রী। এ সময়ের মধ্যে তার দাবি না মানলে যুদ্ধকালীন মন্ত্রিপরিষদ থেকে পদত্যাগের হুমকি দিয়েছেন তিনি।