প্রার্থী বাছাই শুরু করেছে আওয়ামী লীগ
এরইমধ্যে বেশ কয়েক জেলার নেতাদের আগামী নির্বাচনের জন্য নিজ এলাকায় কাজ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: অনেকটা নীরবেই প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এরইমধ্যে বেশ কয়েক জেলার নেতাদের আগামী নির্বাচনের জন্য নিজ এলাকায় কাজ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দলের হাইকমান্ড থেকে এ ধরনের নির্দেশনা এসেছে বলে তাদের দাবি। মানবজমিনকে তারা বলেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, নির্বাচনের খুব বেশি দেরি নেই। ঢাকায় সময় না দিয়ে নিজের নির্বাচনী এলাকায় সময় দেন। জনগণের পাশে গিয়ে দাঁড়ান। তাদের কথা শোনেন। প্রতিটি ভোটারের কাছে ধরনা দেন। কারণ আগামী নির্বাচন হবে কঠিন ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। এমনকি কোনো ধরনের কোন্দল থাকলে সেটাও মিটিয়ে নেয়ার তাগাদা গিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী নির্বাচনেও জোটবদ্ধভাবে অংশ নেবে আওয়ামী লীগ। সেক্ষেত্রে জোটের সঙ্গেও আসন ভাগাভাগির একটা বিষয় থাকবে। সেদিকটাও মোটামুটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে শেষ মুহূর্তে হয়তো কয়েকটি আসনে রদবদল হতে পারে। এসব দিক বিবেচনা করে ১২ই আগস্ট দলের বিশেষ বর্ধিত সভা থেকে সরাসরি নির্বাচনের প্রস্তুতির বার্তা দিয়েছেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। ওই বার্তায় জোর দেয়া হয়েছে সাংগঠনিক ঐক্যের ওপর। বিভেদ ভুলে একযোগে কাজ করতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে আগামী নির্বাচনে কারা মনোনয়ন পাবেন বা পেতে পারেন সে বিষয়ে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছেন দলীয় সভাপতি। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু করতে বলেছেন। দলীয় সভাপতি বলেন, দলের উন্নয়ন প্রচার না করে এমপি কি করলো, সেটা নিয়ে লেগে থাকেন। এতে দলের বদনাম হয়। আমি পরিষ্কারভাবে বলছি, কাকে মনোনয়ন দেবো, সেটা জরিপ করে দেখছি। এখনো জরিপ চলছে। কিন্তু যারা এমপিদের বিরুদ্ধে বলে, দলের বিপক্ষে বলে, তাকে মনোনয়ন দেবো না।
তিনি বলেন, যারা এমপি ও দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে বলে ভবিষ্যতে তাদেরকে দলে রাখবো কিনা সেটাও ভেবে দেখবো। কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, যথাসময়েই নির্বাচন হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। বিএনপি নির্বাচন বানচাল করার নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু তারা সফল হবে না। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ছোট এক জেলার তরুণ নেতা জানান, তাকে এরইমধ্যে সবুজ সংকেত দেয়া হয়েছে। দলের সংকেত পেয়ে রাতদিন নিজ নির্বাচনী এলাকায় কাজ করছেন তিনি। দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। শেষ মুহূর্তেও যদি তাকে সরিয়ে দেয়া হয় তারপরও তিনি নৌকার পক্ষে কাজ করে যাবেন বলে মন্তব্য করেন। তরুণ ওই নেতা জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির সদস্য।
এদিকে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন হলে মনোনয়ন কারা পেতে পারেন সে বিষয়টি নিয়ে এগোচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আগামী নির্বাচনে জোটের শরিক দলগুলোর আসনে খুব একটা বেশি পরিবর্তন হবে না বলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা ইঙ্গিত দেন। তবে সবকিছু নির্ভর করছে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর। নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, আওয়ামী লীগ সভাপতির হাতে এরইমধ্যে সবগুলো জরিপ রিপোর্ট এসে পৌঁছেছে। শিগগিরই জরিপ রিপোর্টগুলোর বিচার-বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন স্থানের প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিকভাবে সবুজ সংকেত দেয়া শুরু হবে। আওয়ামী লীগে এবার মনোনয়নে ইচ্ছুক প্রার্থীর সংখ্যা অনেক। প্রতিটি আসনেই চার থেকে পাঁচজন ন্যূনতম প্রার্থী রয়েছেন। এদের মধ্যে অন্তত, দুই তিন জন সমান জনপ্রিয়।
এ রকম বাস্তবতায় আওয়ামী লীগ যাদেরকে প্রার্থী দেবে স্বাভাবিকভাবেই তাদের বিরোধী একটা পক্ষ দাঁড়িয়ে যাবে। আওয়ামী লীগের কৌশলগত অবস্থান হচ্ছে, যদি আওয়ামী লীগ আগে থেকেই প্রার্থিতা ঘোষণা করে, সেক্ষেত্রে যারা বিদ্রোহী এবং যারা দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারে, তাদেরকে নিষ্ক্রিয় করা সম্ভব হবে। এর ফলে তারাও নির্বাচনের সময় নির্বাচনের মাঠে সক্রিয় থাকবেন। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, দলীয় সভাপতি তো আরও আগে থেকেই আমাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা সে অনুযায়ী কাজ শুরু করেছি। নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসবে আমাদের প্রস্তুত্তির বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। নির্বাচনের একটি বড় পার্ট হচ্ছে দলীয় প্রার্থী বাছাই। আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে যোগ্য ও জনপ্রিয় নেতাদের মনোনয়ন দেয়ার কাজ শুরু করেছে। চলতি বছরের শেষ দিকে অথবা আগামী বছরের প্রথম দিকে অনুষ্ঠিত হতে পারে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।