পদযাত্রায় নেতাকর্মীর ঢল বিভিন্ন স্থানে বাধা, হামলা
সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে ঢাকাসহ দেশের ১৩ মহানগরের প্রতিটি থানায় বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিতে গতকাল শনিবার নেতাকর্মীর ঢল নামে। তবে বিভিন্ন স্থানে বাধা ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। ঢাকায় চারটি স্থানে হামলায় ৫২ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরবসহ পাঁচ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদিন সমমনা ৫৩টি রাজনৈতিক দল ও সংগঠনও এ কর্মসূচি পালন করে।
প্রথম নিউজ ডেস্ক: সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে ঢাকাসহ দেশের ১৩ মহানগরের প্রতিটি থানায় বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিতে গতকাল শনিবার নেতাকর্মীর ঢল নামে। তবে বিভিন্ন স্থানে বাধা ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। ঢাকায় চারটি স্থানে হামলায় ৫২ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরবসহ পাঁচ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদিন সমমনা ৫৩টি রাজনৈতিক দল ও সংগঠনও এ কর্মসূচি পালন করে।
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে রাজধানীর ৫০টি থানায় একযোগে এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা এতে নেতৃত্ব দেন। দুপুরের পর থেকে মহানগরের বিভিন্ন ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা থেকে নেতাকর্মীরা নির্দিষ্ট স্থানে জড়ো হতে থাকেন। দলের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরাও খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে পদযাত্রায় সমবেত হন। এ সময় তাঁরা ১০ দফা দাবির পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানোর দাবিতে ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড বহন করেন। সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগানে পুরো ঢাকা মিছিলের শহরে পরিণত হয়।
বিকেলে উত্তরা পূর্ব থানার আউয়াল অ্যাভিনিউ সড়কে পদযাত্রাপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দশম ও একাদশ সংসদের মতো তামাশার নির্বাচন জনগণ এবার আর হতে দেবে না। আওয়ামী লীগ মনে করেছে যে, তারা ওইভাবে ক্ষমতায় এসে আবারও জনগণকে শোষণ করবে, তাদের সম্পদ লুটে নিয়ে যাবে। কিন্তু এবার মানুষ রাস্তায় নেমেছে। আন্দোলনের পর আন্দোলন হচ্ছে। শান্তিপূর্ণভাবে সেই আন্দোলনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব। এবার আর তামাশার নির্বাচন হতে দেব না।
এ সময় ১০ দফা দাবি পূরণ ও নিত্যপণ্য ও বিদ্যুতের দাম কমানোর দাবিতে আগামী ১১ মার্চ ঢাকাসহ মহানগর ও জেলায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি ভারতে মামলায় খালাস পাওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী মিছিল বের করায় বন্ধের দিনও রাজধানীবাসী তীব্র যানজটের মধ্যে পড়েন। অনেক যাত্রী গাড়ি ছেড়ে হেঁটে গন্তব্যের দিকে রওনা হন।
হামলা-গ্রেপ্তার: উত্তরার তুরাগ থানায় কর্মসূচি পালনকালে বিএনপি নেতাকর্মীর ওপর ক্ষমতাসীন দলের হামলার অভিযোগ করেছে দলটি। নেতাকর্মীরা জানান, পদযাত্রার আগে বিএনপির কেন্দ্রীয় মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহিরউদ্দিন স্বপনের বক্তব্য দানকালে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হামলা করেন। পরে ধাওয়া খেয়ে তাঁরা পালিয়ে যান। পদযাত্রার শেষ মুহূর্তে আবারও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা স্বপনের গাড়িতে হামলা করেন।
এ সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা আসাদুজ্জামান পলাশসহ বিএনপির প্রায় ১১ জন কর্মী আহত হন। মহানগর বিএনপি নেতা মোস্তফা জামানের গাড়িতে এবং বাড়িতেও হামলা করে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিতে হামলা করে সাবেক এমপি সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়ার গাড়ি ভাঙচুর করেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। হামলায় পাপিয়া ছাড়াও ৩০ জনের বেশি নেতাকর্মী আহত হন বলে দলের দাবি।
তেজগাঁও থানা বিএনপির উদ্যোগে পদযাত্রা কর্মসূচি পালনকালে এলাকার রেলগেট থেকে কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরবকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম জানান, নিরবের বিরুদ্ধে সাতটি মামলায় ওয়ারেন্ট রয়েছে।
পদযাত্রায় বাধা, হামলা, গ্রেপ্তার ও ভাঙচুরের নিন্দা জানিয়ে মির্জা ফখরুল গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, নিষ্ঠুর দমননীতি ও মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি তাদের অগ্রাহ্যের কারণে সমগ্র দেশই এখন কারাগারে পরিণত হয়েছে।
অন্যান্য জোট, দল ও সংগঠন: সকালে গণতন্ত্র মঞ্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে, ১২ দলীয় জোট বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্কি থেকে, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট বিজয়নগরে আল-রাজী কমপ্লেক্সের সামনে থেকে এবং সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট পুরানা পল্টন মোড়ে থেকে পৃথক পদযাত্রা করে। বিকেলে এলডিপি রাজধানীর পান্থপথ, বাড্ডা ও যাত্রাবাড়ী থেকে তিনটি আলাদা পদযাত্রা বের করে।
৭ মার্চ বিএনপির সমাবেশ: আগামী মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে দলটি। সমাবেশের অনুমতি চেয়ে গতকাল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবর চিঠি দিয়েছে দলটি।
চট্টগ্রামে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর অংশগ্রহণ: বড় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই চট্টগ্রামে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেশিরভাগ পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম সড়কগুলোতে। ফলে গতকাল বিকেলে এই কর্মসূচি চলাকালে বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। অনেক সড়কে বিএনপি নেতাকর্মীর পেছনে পেছনে হাঁটার গতিতে অনেক পথ চলতে হয় যানবাহনগুলোকে। এতে বেশ ভোগান্তি ও বিড়ম্বনায় পড়তে হয় যাত্রীদের।
পদযাত্রা কর্মসূচিগুলোতে বিপুল সংখ্যক বিএনপি নেতাকর্মী অংশ নেন। তবে বেশিরভাগ পদযাত্রাই আধা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে শেষ করতে হয়। তাদের অনুমতি দেওয়া অংশের বাইরে যেতে না দিলেও সহনশীল আচরণ করেছে পুলিশ।
নগরীর ডবলমুরিং থানা বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিতে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ এখন জনবিচ্ছিন্ন দল। তাদের এখন বিএনপির কাউন্টার প্রোগ্রাম দেওয়া ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। তিনি আরও বলেন, দেশে আজ নীরব দুর্ভিক্ষ চলছে। মানুষ দুই বেলা খেতে পারছে না। মুরগি এখন চার ভাগে ভাগ করে আর গরুর মাংস গ্রাম হিসাবে বিক্রি করা হচ্ছে।
খুলনা ব্যুরো জানায়, নগরীর সোনাডাঙ্গা বিএনপির পদযাত্রা-পূর্ব সমাবেশে বিএনপির নেতারা বলেছেন, সরকারের অপকর্মের জন্য আজকে দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিচ্ছে। ডিসেম্বরের আগেই এই সরকারের পতন হবে। খুলনা মহানগরের ৫ থানায় এই পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।
‘এবার গোল হবেই’: রংপুর অফিস জানায়, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেছেন, সরকার বিএনপির সঙ্গে পেরে উঠছে না। তাই এখন ডিফেন্সিভ খেলছে। কিন্তু এতে লাভ নেই। কারণ, তারেক রহমান মেসির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন, এবার গোল হবেই হবে। রংপুর নগরীর শাপলা চত্বরে পদযাত্রা শেষে প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। মহানগরের ছয় থানায় পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।