‘নিষেধাজ্ঞা শেষ নিম্নচাপ শুরু, আমরা খামু কী’
নিজেদের বর্তমান অবস্থার বর্ণনা দিচ্ছিলেন পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া জেলে খালেক হাওলাদার (৭০)।
প্রথম নিউজ, পটুয়াখালী: ‘আমরা জেলেরা ভালো নেই। সরকার বছরে দুইবার দেয় অবরোধ। এর ওপরে কিছুদিন পরপর আবহাওয়া খারাপ হয়। আমরা প্রতিবছর ধারদেনা করে দিন চালাই। এই যে এতদিন ছিল নিষেধাজ্ঞা, আর এখন নিম্নচাপ শুরু; আমরা খামু কী?’
এভাবেই নিজেদের বর্তমান অবস্থার বর্ণনা দিচ্ছিলেন পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া জেলে খালেক হাওলাদার (৭০)। তিনি বলেন, ‘৬৫ দিন অবরোধ শেষে গত রোববার রাতে আমরা সমুদ্রে যাই। একবার জাল ফেলে অল্পকিছু মাছ ধরি। এরপরই সাগর গরম (উত্তাল) হতে থাকে। একদিনের মাথায় মঙ্গলবার রাতে ফিরে আসতে হয়।’
এই জেলে আরও বলেন, ‘আমরা ১ লাখ ২০ হাজার টাকার বাজারসহ বিভিন্ন খরচ করে সাগরে নেমেছিলাম। কিন্তু যে মাছ পেয়েছি তাতে ২০ হাজার টাকাও বিক্রি হবে না। এখন আমরা কী খামু আর কী দিয়ে ধারদেনা পরিশোধ করমু?’
এটি শুধু জেলে খালেকের নয়, প্রায় সব জেলেরই বর্তমান অবস্থা। বুধবার (২৬ জুলাই) পটুয়াখালীর বড় দুটি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র আলীপুর-মহিপুর ঘুরে দেখা মেলে এমন চিত্রের। জেলে এবং আড়ত মালিকদের দাবি, সরকার যেন এই ৬৫ দিনের অবরোধ তুলে নেয়। তাহলে কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলবে তাদের।
গত ২৩ জুলাই রাতে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সমুদ্রে মাছ শিকারে নামেন জেলেরা। তার ঠিক দুই দিনের মাথায় সাগর উত্তাল হলে মঙ্গলবার বিকেল থেকেই নিরাপদ আশ্রয় ফিরতে বাধ্য হন তারা। এতে লোকসানের মুখে পড়েন জেলেরা।
কুয়াকাটা-আলীপুর মৎস্য আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি আনসার উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘শুধু খালেকের জীবন এমন নয়, মৎস্য পেশায় জড়িত সব জেলেদের বর্তমান অবস্থা এটি। সরকারের দেওয়া অবরোধ এবং বৈরি আবহাওয়ার কারণে ঠিকমতো মাছ ধরতে না পারায় প্রতিবছর অনেক জেলে ঋণের বোঝা সইতে না পেরে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘যেসব জেলেরা সমুদ্র থেকে ফিরে এসেছে তারা এখন বসে বসে খাবে। পরিবারের জন্য ধারদেনা করে বাজার করবে। দিনশেষে তাদের ঋণের বোঝা অনেক লম্বা হয়ে যাচ্ছে। তাই সরকার যাতে এই জেলেদের জন্য বিনা সুদে ঋণের ব্যবস্থা করে সেই দাবি জানাই।’
সামুদ্রিক মাছের বাধাহীন প্রজনন ও সংরক্ষণে গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের মৎস্য আহরণে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সমুদ্রে নামেন জেলেরা। এরপরই ২৫ জুলাই পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ার কারণে সমুদ্র উত্তাল হলে নিরাপদ আশ্রয়ে তীরে ফিরতে বাধ্য হন তারা।