নির্বাচন তদারকির গাড়ি কিনতে চায় কমিশন
যদিও কৃচ্ছ্রসাধন কর্মসূচির আওতায় বর্তমান নতুন গাড়ি কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে অর্থ বিভাগের।
প্রথম নিউজ, অনলাইন : আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দায়িত্ব পালনের জন্য ঢাকা, চট্টগ্রাম ও টাঙ্গাইল কার্যালয়ের গাড়ি কেনার প্রস্তাব দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। অপরদিকে মাঠ পর্যায়ের জরিপ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্যও গাড়ি কেনার প্রস্তাব দিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। যদিও কৃচ্ছ্রসাধন কর্মসূচির আওতায় বর্তমান নতুন গাড়ি কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে অর্থ বিভাগের। এরপরও পৃথকভাবে সম্প্রতি এসব প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, সরকারি হিসাবে একটি গাড়ির আয়ুষ্কাল ১০ বছর থাকে। পরবর্তী সময় সেগুলো অকেজো ঘোষণা করে বিক্রি করে দেওয়া হয়। বর্তমানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার বাজেটের অর্থ দিয়ে নতুন গাড়ি কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা আছে। কিন্তু দশ বছরের পুরোনো গাড়ির প্রতিস্থাপক হিসেবে নতুন গাড়ি কেনার পথ কিছুটা খুলে দেওয়ার পর এসব প্রস্তাব আসা শুরু হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের চিঠিতে আরও বলা হয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। এই নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। আর জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি বড় ও বিশাল কর্মযজ্ঞ। ফলে সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে দাপ্তরিক গাড়ি ব্যবহার করা না হলে আসন্ন জাতীয় সংসদের ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও পরিদর্শনসহ অন্যান্য নির্বাচনি কার্যক্রম ব্যাহত হবে।
প্রসঙ্গত, এর আগে ভিভিআইপি ও বিদেশি ডেলিগেটদের জন্য ২০টি মার্সিডিস বেঞ্জ কার (এস ক্লাস-স্যালুন-ডব্লিউভি ২২৩) কেনার প্রস্তাব ছিল। অত্যাধুনিক প্রতিটি গাড়ির দাম ধরা হয়েছিল সাড়ে ৩ কোটি টাকা। একইভাবে মন্ত্রিসভার সদস্যদের জন্য ৫০টি টয়োটা ক্যাম্রি হাইব্রিড সেডান কার কেনারও কথা ছিল।
প্রতিটির মূল্য ধরা হয় ১ কোটি ৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এই ৭০টি বিলাসবহুল গাড়ি কিনতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১২২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে এই টাকা বরাদ্দ দিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ বিভাগে চিঠি দিয়েছিল সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর। কিন্তু বৈশ্বিক-সংকট ও সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন নীতির কারণে বিলাসবহুল গাড়ি কেনার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে অর্থ বিভাগ।
নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাব : ২৫ জুলাই নির্বাচন কমিশন থেকে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে অর্থ বিভাগে। সেখানে বলা হয়, নির্বাচন সচিবালয়ের আওতাধীন মাঠ পর্যায়ে কার্যালয়গুলোর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা (চতুর্থ গ্রেড) এবং সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা (পঞ্চম গ্রেড) গাড়ি ব্যবহার করছেন ২০১২ সালের কেনা মিতসুবিশি পাজেরো (১২৩৫ সিসি) জীপ। বর্তমানে এসব গাড়ি বাজারে সরবরাহ নেই এবং ব্যবহারের অনুপযোগী। ইতোমধ্যে সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয় ঢাকা, চট্টগ্রাম ও টাঙ্গাইলের গাড়িগুলোর বয়স ১০ বছর অতিক্রম করায় অকেজো (কনডেম) ঘোষণা করে নিলামে বিক্রি করা হয়।
বর্তমানে সংশ্লিষ্ট এসব কার্যালয়ে ব্যবহারের জন্য গাড়ি নেই। কিন্তু বিভিন্ন নির্বাচনে রির্টানিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনসহ ভোটার তালিকা হালনাগাদ, জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের কার্যক্রম তদারকি ও দাফতরিক কার্যক্রম পরিদর্শন করতে হয়। যে কারণে নির্বাচন কর্মকর্তা ও সিনিয়র জেলা অফিসার তাদের আওতাধীন জেলা ও উপজেলার দুর্গম এলাকায় ভ্রমণ করতে হয়। কিন্তু দাফতরিক গাড়ি অকেজো ঘোষণা করায় চলমান বিভিন্ন নির্বাচন কার্যক্রম, ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ সংশ্লিষ্ট দাফরিত কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
ভূমি রের্কড ও জরিপ অধিপ্তরের প্রস্তাব : সাতটি গাড়ি কেনার জন্য ৫ কোটি টাকা বাজেট থেকে ব্যয় করার অনুমতি চেয়ে অর্থ বিভাগের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। গাড়িগুলো কেনা হবে ভূমি রের্কড ও জরিপ অধিদপ্তরের জন্য। প্রস্তাবে আরও বলা হয়, সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের গাড়ি ঢাকা মেট্রো (গাড়ির সিরিয়াল-ঘ-০২-২৭৬৯ (জীপ), ঘ-১১-১৩৮১ (জীপ), ঘ-১১-৪৫৮৪ (জীপ) ঘ-০২-২১৪২ (জীপ), ঘ-১১-০৭২০ (জীপ), ঘ-১১-৭২২ (জীপ), ঘ-১১-০৭২৯ (জীপ), ন-৮২৪১ (পিকআপ), ক-০৩-৯১০১(কার), ভ-৮৮৩১ অকেজো ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়, এই অফিসের অধীনে ১৯টি জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস আছে। যেখানে ৪১টি গাড়ির প্রয়োজন। অকেজো ঘোষণার পর ৩২টি গাড়ি বিদ্যমান আছে। তবে এই অধিদফতরে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে গাড়ি কেনা বাবদ। এই অর্থ দিয়ে সাতটি গাড়ি কেনা সম্ভব। ফলে জরিপ কাজ সুষ্ঠুভাবে তত্ত্বাবধায়ন ও পরিচালনার স্বার্থে অকেজো গাড়ির স্থলে প্রতিস্থাপক হিসাবে সাতটি গাড়ি কেনা যেতে পারে। এ ব্যাপারে অর্থ বিভাগের অনুমতি চাওয়া হয়।
নতুন অর্থবছরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার গাড়ি, জলযান ও উড়োজাহাজ ক্রয় বাবদ বরাদ্দ রাখা আছে ২৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় এ খাতের পুরো বরাদ্দ স্থগিত করা হয়েছে। ফলে কোনো মন্ত্রণালয় বিভাগ নতুন কোনো পরিবহণ কিনতে পারবে না। তবে একটি শর্ত দিয়ে বলা হয়েছে ১০ বছরের অধিক পুরোনো গাড়ির ক্ষেত্রে প্রতিস্থাপনের জন্য অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিতে হবে। অনুমোদন পাওয়ার পর সে অর্থ ব্যয় করা যাবে।
গাড়ির মূল্য পুনর্নির্ধারণ : সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ক্রয়কৃত গাড়ির মূল্য বাড়ানো হয়েছে। এখন থেকে প্রথম ও দ্বিতীয় গ্রেডের কর্মকর্তাদের জন্য জীপ গাড়ির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরের গ্রেড ১ ও ২ পর্যায়ের কর্মচারীদের জন্য মূলত ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা দামের গাড়ি কেনার এখতিয়ার রয়েছে। আর গ্রেড ৩ বা তার চেয়ে নিম্ন পর্যায়ের কর্মচারীদের জন্য কেনা যাবে ৬৫ লাখ টাকা দামের গাড়ি। সরকারি কর্মচারীদের ব্যবহারের জন্য সর্বোচ্চ ৫২ লাখ টাকার মাইক্রোবাস কেনা যাবে।