নির্বাচনী চুক্তির পর ভেনিজুয়েলায় শিথিল মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে যদি এই সমঝোতা বা প্রতিশ্রুতি পূরণ করা না হয়, তাহলে আবারও এসব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।

নির্বাচনী চুক্তির পর ভেনিজুয়েলায় শিথিল মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধীদের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করার পর ভেনিজুয়েলার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা আংশিক শিথিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে দেশটি সপষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে, বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে যদি এই সমঝোতা বা প্রতিশ্রুতি পূরণ করা না হয়, তাহলে আবারও এসব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনিজুয়েলায় প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো নেতৃত্বাধীন সমাজতান্ত্রিক সরকার ও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত বিরোধী দলের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরের পর এমন পদক্ষেপ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ খবর দিয়েছে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।  

খবরে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট বুধবার সন্ধ্যায় ভেনিজুয়েলার তেল ও গ্যাস সেক্টরের জন্য ছয় মাসের লাইসেন্স অনুমোদন করেছে। পাশাপাশি আলাদা একটি লাইসেন্স দেয়া হয়েছে ভেনিজুয়েলার স্বর্ণখনি কোম্পানি মাইনারভেন’কে। ফলে ভেনিজুয়েলা বাধা ছাড়াই আন্তর্জাতিক বাজারে তেল, গ্যাস বিক্রি করতে পারবে। ভেনিজুয়েলার পেট্রোলেওস দ্যা ভেনিজুয়েলা নামের রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানির সুনির্দিষ্ট কিছু বন্ডের বিষয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের বাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞা সরাতে বিদ্যমান দুটি লাইসেন্স সংশোধন করেছে ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট। তবে প্রাথমিক ট্রেডিংয়ের বিরুদ্ধে কার্যকর থাকবে এই নিষেধাজ্ঞা। 

এর আগে মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট মাদুরো ও বিরোধী দল ইউনিটারি প্ল্যাটফরম নিষেধাজ্ঞা এড়াতে বার্বাডোজে সমঝোতা আলোচনা শুরু করে। এরই মধ্যে তারা একটি চুক্তিও স্বাক্ষর করেছে। আগামী বছর হতে যাওয়া নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের যেতে দিতে সম্মত হয়েছে উভয় পক্ষই। নির্বাচনে যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থী দিতে রাজি হয়েছে উভয় পক্ষ। নিজস্ব নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি পক্ষ তাদের প্রার্থী বাছাই করতে পারবে। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট বিবৃতিতে বলেছে, গণতান্ত্রিক এই পটপরিবর্তনের ফলে ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ভেনিজুয়েলার তেল, গ্যাস ও স্বর্ণের খাতে জেনারেল লাইসেন্স ইস্যু করবে। 

নির্বাচনে বিরোধী দলের প্রার্থী মারিয়া কোরিনা মাচাদো। কিন্তু দেশটির সরকারি অফিসের দায়িত্ব পালনে তার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রপন্থী হুয়ান গাইদোকে সমর্থন দেয়ার কারণে তাকে এই শাস্তি দেয় ভেনিজুয়েলা সরকার। এদিকে দেশটিতে এই পটপরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বুধবার রাতে বলেছেন, ওয়াশিংটন আশা করে ভেনিজুয়েলা সরকার রাজনৈতিক বন্দি ও অন্যায়ভাবে আটক করা মার্কিন নাগরিকদের মুক্তি দেয়া শুরু করবে। নভেম্বরের শেষ নাগাদ সব প্রার্থীর বিরুদ্ধে থাকা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে। আর এসব শর্ত মানতে ব্যর্থ হলে যুক্তরাষ্ট্র আবারও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে।

রয়টার্স জানিয়েছে, ভেনিজুয়েলায় দীর্ঘদিন দুই দলের মধ্যে কথাবার্তা বন্ধ ছিল। এবার দুই দল যেসব বিষয়ে একমত হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, দেশটির আগামী নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা। এর মধ্যে আছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও জাতিসংঘ। বার্বাডোজে চূড়ান্ত হওয়া ওই চুক্তির বিস্তারিত স্টাডি করে যুক্তরাষ্ট্র। এরপরই ভেনিজুয়েলার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা শিথিলে রাজি হয় তারা।

যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও কানাডা যৌথ এক বিবৃতিতে বলেছে, বার্বাডোজে ভেনিজুয়েলার রাজনৈতিক চুক্তিকে আমরা স্বাগত জানাই। তারা ভেনিজুয়েলায় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় একে প্রয়োজনীয় একটি পদক্ষেপ বলে আখ্যায়িত করে। বিবৃতিতে রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, মানবাধিকারের প্রতি সম্মান দেখানোর দাবি পুনর্ব্যক্ত করা হয়। যদিও মঙ্গলবার সম্পাদিত চুক্তিতে এসব ইস্যু আসেনি। 

গত সপ্তাহে রয়টার্স রিপোর্ট করে যে, একটি চুক্তি নিয়ে নিজস্ব আলোচনায় অগ্রগতি করেছে ভেনিজুয়েলা ও যুক্তরাষ্ট্র। এতে বলা হয় প্রেসিডেন্ট মাদুরো যদি বিরোধীদের সঙ্গে সমঝোতা শুরু করেন তাহলে বাড়তি একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে ভেনিজুয়েলার অশোধিত তেল নিতে অনুমতি দেয়া হবে। প্রেসিডেন্ট মাদুরো যদি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রাখতে ব্যর্থ হন, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি উল্টে যেতে পারে। আর্থিক সংকটে থাকা ভেনিজুয়েলার রাজস্বের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো তেল। নরওয়ের মধ্যস্থতায় গত মঙ্গলবার বার্বাডোজে আলোচনায় বসে বিরোধী দল ও সরকারি দল। ১১ মাসের মধ্যে দু’পক্ষের এটাই প্রথম বৈঠক। দেশটি দীর্ঘদিন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক যে সংকটের মুখে আছে, তা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় খুঁজতে এই বৈঠক। 

উল্লেখ্য, ২০১৪ ও ২০১৭ সালে ভেনিজুয়েলায় সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় দেশটির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো। এরমধ্যে রয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৭ দেশ, কানাডা, পানামা ও সুইজারল্যান্ড। প্রেসিডেন্ট মাদুরোর ঘনিষ্ঠ শতাধিক ব্যক্তিকে টার্গেট করা হয় নিষেধাজ্ঞায়। নিষেধাজ্ঞার অধীনে রয়েছে বর্তমান ও সাবেক সরকারের কর্মকর্তারা, বিচার বিভাগ, সামরিক বাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। এ ছাড়া মানবাধিকার লঙ্ঘন, দুর্নীতি ও গণতান্ত্রিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করার অভিযোগে আরও কয়েক জনের বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে পশ্চিমা দেশগুলো।

দেশটির ১১৯ ব্যক্তির ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য কয়েকটি দেশ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় ভেনিজুয়েলার ১৫০টিরও বেশি কোম্পানির বিরুদ্ধে। এ ছাড়া মাদুরোর সঙ্গে সম্পর্ক থাকার অভিযোগে মোট ৭১৮ জনের ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়। নিষেধাজ্ঞার অধীনে থাকা ব্যক্তিদের সম্পত্তি জব্দ, অর্থ লেনদেন এবং ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা হয়। দেশটির তেল, সোনা, খনি, খাদ্য ও ব্যাংকগুলোকে টার্গেট করা হয় মার্কিন নিষেধাজ্ঞায়। গত কয়েক বছরে এর ভয়াবহ প্রভাব দেখা যায় দেশটির অর্থনীতিতে। অবশেষে বুধবার মার্কিন নিষেধাজ্ঞা শিথিল হওয়ায় আশা করা হচ্ছে এখন কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবেন ভেনিজুয়েলানরা।