নিমতলীর সর্বনাশা ঘটনাও পথ দেখাতে পারেনি
নীমতলী ট্রাজেডির পর টাস্কফোর্স গঠন, অঙ্গিকার ও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। রাজধানী থেকে রাসায়নিকের গুদাম-কারখানা সরিয়ে নিতে হয় দুটি কমিটি।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: ২০১০ সালে ৩ জুন ঘটে নিমতলী ট্রাজেডি। ভয়াবহ আগুনে ঝরে যায় ১২৪ টি প্রাণ। রাসায়নিকের গুদামে রক্ষিত দাহ্য পদার্থের কারণেই পুরান ঢাকার নবাব কাটরার নিমতলীতে ভয়াবহ আগুন ছড়িয়ে পড়ে বলে তদন্তে উল্লেখ করা হয়।
নীমতলী ট্রাজেডির পর টাস্কফোর্স গঠন, অঙ্গিকার ও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। রাজধানী থেকে রাসায়নিকের গুদাম-কারখানা সরিয়ে নিতে হয় দুটি কমিটি। সেই কমিটি কেরানীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জে জায়গা ঠিক করার সুপারিশসহ উচ্চ মাত্রার বিপজ্জনক ৫ শতাধিক রাসায়নিকের তালিকা করে প্রতিবেদন দেয় শিল্প মন্ত্রণালয়ে। বাস্তবায়ন হয়নি তার। এর পর কেটে গেছে বেশ কয়েক বছর। কিন্তু বদলায়নি পুরান ঢাকা। আবারো লাশের মিছিল। চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কেড়ে নিয়েছে বহু প্রাণ।
কথায় বলে, ‘বায়ান্ন বাজার তেপ্পান্ন গলি’। সেই আদি প্রবাদ একবিংশ শতাব্দীতেও বহাল রয়েছে। চুড়িহাট্টায় আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট ছুটে আসে। কিন্তু সরু রাস্তার কারণে তারা গাড়ি নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেনি। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা হতাশার সুরে বলেন, রাস্তা সরু থাকায় পাইপ নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে সক্ষম হননি। দ্রুত কাজ শুরু করতে পারলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আরও কম সময় লাগত। ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও কমানো যেত।
বাংলাদেশ কেমিক্যাল অ্যান্ড পারফিউমারি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক নুরুল আক্তার বলেন, আমরা আগুন লাগলেই সচেতন হই। সরকারও একটু নড়েচড়ে বসে। আবার কিছুদিন পর সবাই ভুলে যায়। ফলে একই ঘটনা পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের বার বার গুদামের জন্য জায়গা দেওয়ার কথা বলা হলেও জায়গা দিচ্ছে না সরকার। আমি সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি, এ ধরনের দুর্ঘটনা বন্ধে অবিলম্বে আমাদের একটি নির্দিষ্ট জায়গা দেওয়া হোক। কারখানা ও গুদামের জন্য আমরা সরকারকে টাকা দিতেও প্রস্তুত আছি।
এদিকে স্থানীয়রা বলেন, এখনও কেমিক্যাল কারখানা অলিতে-গলিতে রয়ে গেছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো নজর দেয়নি। অত্যন্ত দাহ্য পদার্থ হওয়ায় চকবাজারের আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং এটি বিভীষিকাময় রূপ ধারণ করে।
চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পেছনের একটি ভবন থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে স্থানীয়রা জানান। পরে তা পাশের ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। রাত ৩টায় ৩৭টি ইউনিটের প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ঘটনায় দগ্ধ ১৫ জনসহ ৫২ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং আশঙ্কাজনক অবস্থায় দুইজনকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে (মিটফোর্ড) ভর্তি করা হয়।
নিমতলী ট্র্যাজেডিতে গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। কমিটি বিভিন্ন ধরনের সুপারিশও দেয়। সেখানে বলা হয়, পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি এলাকায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকতে পারছিল না। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নানাভাবে চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছিল। প্লাস্টিক কারখানায় দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন লাফিয়ে বাড়তে থাকে। আহতদের আর্তনাদ আর চারপাশের মানুষের আহাজারিতে নিমতলীর বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।
আহতদের দ্রুত হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আহতদের দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। তিনি আহতদের দ্রুত সুচিকিৎসার নির্দেশ দেন। ওই বছরের ৫ জুন রাষ্ট্রীয় শোক দিবস ঘোষণা করা হয়। সেই দুর্ঘটনা নিয়ে নানা ঘটনাও ঘটতে থাকে। সব হারানো তিনজন অসহায় মেয়েকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেয়ের মর্যাদা দিয়ে তাদের গণভবনে বিয়ের ব্যবস্থাও করেন।
গণমাধ্যমের বিভিন্ন খবর থেকে জানা যায়, পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি এলাকায় বিপজ্জনক কেমিক্যালের শত শত কারখানা ও গুদাম রয়েছে। প্রায়ই কেমিক্যাল কারখানায় আগুন লেগে নানা দুর্ঘটনা ঘটে। দাবি ওঠে সেসব কারখানা ও গুদাম ওই এলাকা থেকে অবিলম্বে সরিয়ে নেয়ার। এ ব্যাপারে সরকারও কেমিক্যালের গুদাম এবং কারখানা সরাতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু তারপর কেটে গেছে ১২টি বছর। সেই বিপজ্জনক কেমিক্যালের কারখানা ও গুদাম এখনও সরানো হয়নি, যা ঝুঁকিপূর্ণ বলেছে ফায়ার সার্ভিস। অন্যদিকে বারবার কেমিক্যালের গুদাম ও কারখানা সরানোর উদ্যোগ নেয়ার আশ্বাস দিলেও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সেটি বাস্তবায়ন করতে পারেনি।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews