নাগালের বাইরে মুরগি ও গরুর মাংস: বেড়েছে মোটা চাল-চিনি-পেঁয়াজের দাম
আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর পুরান ঢাকার নারিন্দা কাঁচাবাজার, রায় সাহেব বাজার ও নয়া বাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: গত কয়েকসপ্তাহ ধরেই বাজারে মুরগির দাম চড়া। মাঝে মধ্যে ১০ থেকে ১৫ টাকা ওঠানামা করছে। আর গরুর মাংসের দাম অস্থিতিশীল। তাই এখনো ক্রেতাদের নাগালের বাইরেই রয়েছে গরুর মাংস ও মুরগির দাম। আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর পুরান ঢাকার নারিন্দা কাঁচাবাজার, রায় সাহেব বাজার ও নয়া বাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৭৫ টাকা থেকে ১৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তবে ব্রয়লার মুরগি গত সপ্তাহে ১৯০ টাকা বিক্রি হতো যা ১০ টাকা কমে এ সপ্তাহে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে বেড়েছে সোনালী ও লেয়ার মুরগির দাম। সোনালি ৩৩০ টাকা, লেয়ার ৩০০ টাকা, পাকিস্তানি কক ৩৪০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। যা গত সপ্তাহে লেয়ার ২৮০ টাকা, সোনালী ৩১০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হতো। এছাড়া দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, কাটা মুরগির মাংস বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়। গরু ও খাসির মাংসের দাম গত কয়েকমাসের মতোই স্থিতিশীল রয়েছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা, কলিজাও মাংসের দামে বিক্রি হচ্ছে। আর খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা কেজি দরে। গরুর ভ্যাপসা ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে দর কষাকষি করলে ১০ থেকে ২০ টাকা কমান ব্যবসায়ীরা।
রায় সাহেব বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী সেলিম রেজা বলেন, মুরগির বাড়তি দাম অনেক দিন ধরে একই অবস্থায় আছে। দেখা যায় একসপ্তাহ ১০ টাকা কমে আবার পরের সপ্তাহে বেড়ে আগের মতো সমান হয়ে যায়। অন্যান্য মাংসের দাম বেশি হওয়ায় বাজারে মুরগির মাংসের চাহিদা কমেনি। এছাড়া বাজারে চাহিদার তুলনায় মুরগির সরবরাহ অনেক কম। যে কারণে দাম বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সব জিনিসের দাম বেশি। মুরগির খাদ্যের দাম বেড়েছে। এছাড়া বেশি পরিমাণে বিদ্যুৎ সমস্যায় বাচ্চা ফুটানো সমস্যা হচ্ছে তাই খামার থেকেই উৎপাদন কমে গেছে। আর বাচ্চার দাম বেড়ে যাওয়ায় খামারিরা মুরগির দাম বাড়িয়েছেন।
মুরগি কিনতে আসা সালাম শেখ বলেন, গরুর মাংসের যেই দাম তা তো আর কিনে খেতে পারি না। ব্রয়লার মুরগি খাবো তার দামও অনেক। ১২০ টাকার ব্রয়লার ২ থেকে ৩ মাস ধরে প্রায় ২০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। গরুর মাংসের দাম যে সেই রমজানে বেড়েছে আর কমেনি। আর মাছের বাজারেও আগুন। তাই শাকসবজি খেয়েই দিন পার করছি। বেসরকারি চাকরিজীবী আবদুর রহমান বলেন, প্রতি সপ্তাহে তো গরুর মাংস খেতে পারি না। মাসে এক দুইবার কিনি গরুর মাংস। কয়েক মাস ধরে দাম কমেছেও না বাড়ছেও না। সিন্ডিকেট করে এ অবস্থা সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে। বাজার মনিটরিংয়ের অভাবে ব্যবসায়ীরা যে যেভাবে পারছে জনগণের পকেট কাটছে। চাকরি করে যে বেতন পাই তা দিয়ে আর জীবন চলে না। সবকিছুর দাম বেড়েছে, বাড়েনি মানুষের আয়। বেঁচে থাকাই এখন কঠিন হয়ে পড়ছে।
এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়ে গেছে মোটা চাল, পেঁয়াজ ও চিনির দাম। অন্যদিকে শাক-সবজি, মাছ-মাংসসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য এখনো বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। কমেনি ডিম এবং ব্রয়লার মুরগির দামও। ফলে বাজারে নেই কোনো স্বস্তির খবর। এসব বাজারের চালের দোকান ঘুরে জানা যায়, মোটা চালের মূল্যবৃদ্ধিতে নিম্নআয়ের মানুষের কপালে চিন্তার ভাঁজ। এক সপ্তাহ আগেও খুচরায় যে চালের দাম ছিল ৫২-৫৪ টাকার মধ্যে, সেই চাল কিনতে আজ গুনতে হচ্ছে ৫৬-৫৮ টাকা। এর কারণ হিসেবে দেখা গেছে, বাজারে অধিকাংশ দোকানে স্বর্ণা জাতের মোটা চাল নেই। যেটা বিক্রি হচ্ছে সেটা পাইজাম, যা প্রতিকেজি ৫৬-৫৮ টাকা।
রামপুরা বাজারের চাল বিক্রেতা জালাল হোসেন বলেন, মৌসুম শেষ বলে কমদামের স্বর্ণা চাল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। সেজন্যে দেশি ও ভারত থেকে আমদানি করা পাইজাম এখন মোটা চাল হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। তবে পাইজামের দাম স্বর্ণা থেকে প্রতি কেজিতে ২-৪ টাকা বেশি। ওই বাজারের চা বিক্রেতা ইউনুস হোসেন বলেন, ১০ কেজি চাল কিনতে গেলে একদিনের রোজগারের টাকা পুরোপুরি শেষ। প্রতি সপ্তাহে একদিনের রোজগারের টাকা চালের পেছনেই চলে যায়। ফলে অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এদিকে, বাজারে নতুন করে বেড়েছে চিনির দাম। এক কেজি খোলা চিনি ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহের ৯০ থেকে ৯৫ টাকার মধ্যে ছিল। আর প্যাকেটজাত চিনি কিনতে গুনতে হচ্ছে কোম্পানিভেদে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা। যদিও সরকার নির্ধারিত চিনির দাম এর থেকে অনেক কম। সরকার নির্ধারিত সর্বশেষ মূল্য অনুযায়ী, প্রতি কেজি খোলা চিনি ৮৪ টাকা এবং প্যাকেট চিনি ৮৯ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু রিফাইনার্সরা চলতি মাসের শুরুতেই প্রতিকেজি খোলা চিনি ৯০ টাকা ও প্যাকেটজাত ৯৫ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়ে রেখেছেন ট্যারিফ কমিশনে। বাস্তবে সেটাও মানা হচ্ছে না, বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি দামে।
মালিবাগ বাজারের বিক্রমপুর স্টোরের হামিদুর রহমান বলেন, কোম্পানিগুলো চিনির দাম বাড়াবে হয়তো, সেজন্য সরবরাহ একবারে কমিয়ে দিয়েছে। পাইকারি বাজারে চাহিদা দিলেও আগের দামে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে অনেকে চিনি বিক্রি বন্ধ রেখেছেন।
অন্যদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। মানভেদে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগে ৪৫-৫৫ টাকা ছিল। এখন বাছাই করা এক কেজি দেশি পেঁয়াজ কিনতে গুনতে হচ্ছে ৬০ টাকা। তালতলা বাজারের ব্যবসায়ী সামিউল বলেন, মৌসুমের শেষ, এ জন্য পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম প্রতিদিনই ১-২ টাকা করে বাড়ছে। প্রতিবছর এ সময় পেঁয়াজের দাম আরও চড়া থাকে। এ বছর সেই তুলনায় দাম অনেক কম।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews