তেলের কাছেই হার মানবাধিকারের
জেদ্দার একটি প্রাসাদের বাইরে সৌদি যুবরাজের সঙ্গে বাইডেনের এই ‘ফিস্ট বাম্প’ মানবাধিকারের পক্ষের মার্কিনসহ বিশ্ববাসীকে হতবাক করে দেয়।
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসে বিশ্বমঞ্চে ওয়াশিংটনের ভূমিকা সম্পর্কে বাইডেন বলেছিলেন, ‘আমরা বিশ্বের কাছে একটি বাতিঘর।’ এমনকি সৌদি সফরের চার সপ্তাহ আগেও বাইডেন বলেছিলেন, তিনি দেশটিতে গিয়ে মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন না। অথচ বাইডেনের সৌদি সফরে দেখা গেল উল্টো চিত্র। সৌদি কর্তৃপক্ষ জানত, বাইডেনের এ সফরের দিকে সারা বিশ্বের নজর রয়েছে। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বাইডেন ‘ফিস্ট বাম্প’ করলে সেই ছবি প্রথম প্রকাশ করে সৌদির সরকারি সংবাদমাধ্যমগুলো। পরে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। বিবিসির আনা ফস্টার তাঁর বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, এই একটি ছবিই বাইডেনের সৌদি সফরকে সংজ্ঞায়িত করে। ছবিটি মানবাধিকারের পক্ষের লোকজনের জন্য ছিল মারাত্মক এক ধাক্কা। তাঁরা বাইডেনের তীব্র সমালোচনা করেন। খাসোগি দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার কলাম লেখক ছিলেন। তাঁর হত্যার ‘নির্দেশদাতার’ সঙ্গে বাইডেনের ফিস্ট বাম্পের প্রতিক্রিয়ায় একটি বিবৃতি দেন পত্রিকাটির সিইও ফ্রেড রায়ান। তিনি বলেন, এই ফিস্ট বাম্প ছিল হ্যান্ডশেকের চেয়েও খারাপ। এটা লজ্জাজনক। খাসোগি হত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অভূতপূর্ব চাপের মধ্যে পড়েন সৌদি যুবরাজ। এই চাপ থেকে বেরিয়ে আসতে তিনি মরিয়া ছিলেন। বাইডেনের ‘ফিস্ট বাম্প’ তাঁকে নিঃসন্দেহ স্বস্তি দিয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের নির্বাহী পরিচালক কেনেথ রথ টুইটারে তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এই দৃশ্য (ফিস্ট বাম্প) দেখে বিশ্বের স্বৈরাচারীরা হাসছে। মানবাধিকারের প্রতি বাইডেনের যে সমর্থন, তা সামান্য তেলের জন্য বিক্রি হতে পারে বলে মন্তব্য করেন কেনেথ রথ।
একই মত দ্য গার্ডিয়ানের সাংবাদিক বেথান ম্যাককার্নানের। তিনি লিখেছেন, বাইডেন তাঁর মধ্যপ্রাচ্যে সফরে আপস করতে বাধ্য হয়েছেন। তেলের কাছে হেরে গেছে মানবাধিকার। বাইডেন অবশ্য দাবি করেন, সৌদি যুবরাজের সঙ্গে বৈঠকে তিনি খাসোগি হত্যার বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন। এ ঘটনায় মোহাম্মদ বিন সালমানের ভূমিকা সম্পর্কে তিনি তাঁর অবস্থান তুলে ধরেছেন। বৈঠকে সৌদি যুবরাজও বাইডেনের সামনে পাল্টা প্রশ্ন তোলেন বলে খবর বের হয়। তিনি ফিলিস্তিনি-আমেরিকান সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ হত্যার তদন্ত না করা, ইরাকের আবু গারিব কারাগারে বন্দী নিপীড়ন অনুমোদনের জন্য ওয়াশিংটনকে অভিযুক্ত করেন। ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে কপটতার অভিযোগ করেন। বাইডেনের সৌদি সফরকে দেশটির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের জন্য একটা বড় বিজয় মনে করেন সৌদির রাজনৈতিক বিশ্লেষক আলি শিহাবি। অন্যদিকে ভূ-কৌশলবিদ-কলামিস্ট ব্রহ্ম চেলানি তাঁর ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, বাইডেন নৈতিকতার বিষয়ে বিশ্বকে জ্ঞান দিয়ে বেড়ান। কিন্তু বাইডেনের সৌদি সফর তাঁর কথিত নৈতিকতার দীক্ষার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তথ্যসূত্র: বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান, দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট, এএফপি
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews