ঢাকায় নিজ নামের সড়ক ও পার্ক উদ্বোধন করবেন কাতারের আমির

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন মিরপুরের কালশী এলাকায় বালুর মাঠে নির্মিতব্য পার্ক ও মিরপুর ইসিবি চত্ত্বর থেকে কালসী উড়াল সেতু পর্যন্ত সড়কটি কাতারের আমিরের নামে নামকরণ করা হবে।

ঢাকায় নিজ নামের সড়ক ও পার্ক উদ্বোধন করবেন কাতারের আমির

প্রথম নিউজ, অনলাইন: রাজধানীতে একটি সড়ক ও পার্কের নামকরণ করা হচ্ছে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির নামে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন মিরপুরের কালশী এলাকায় বালুর মাঠে নির্মিতব্য পার্ক ও মিরপুর ইসিবি চত্ত্বর থেকে কালসী উড়াল সেতু পর্যন্ত সড়কটি কাতারের আমিরের নামে নামকরণ করা হবে। নিজে উপস্থিত থেকে এই দুটো স্থাপনা উদ্বোধন করবেন কাতারের আমির।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের এই সম্পর্ক এবং আমিরের এই সফরকে স্মরণীয় করে রাখার লক্ষ্যে তার নামে এই পার্ক ও রাস্তার নামকরণ করা হচ্ছে। আগামী মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বেলা ৩টায় কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির এই দুটি স্থাপনা উদ্বোধনের কথা রয়েছে। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি আগামী সোমবার (২২ এপ্রিল) দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে আসছেন। এটি হতে যাচ্ছে তার প্রথম বাংলাদেশ সফর। জানা গেছে, এই সফরে ঢাকা-দোহা আলোচনায় জ্বালানি সহযোগিতা, বিনিয়োগ, জনশক্তি রপ্তানি এবং অভিবাসন প্রাধান্য পাবে। তিনি সফরে ১৫০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন।

এই সফরের বিষয়ে কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. নজরুল ইসলাম বলেছেন, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির বাংলাদেশ সফরের ফলে দুই দেশের মধ্যে দৃঢ় বন্ধুত্ব ও সম্পৃক্ততা গড়ে উঠবে। প্রায় ২০ বছর পর সর্বোচ্চ পর্যায়ের এ সফর হচ্ছে। এটি আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপনের সাথেও সঙ্গতিপূর্ণ। প্রসঙ্গত, ১৯৭৪ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশ ও কাতার দৃষ্টান্তমূলক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বজায় রেখে আসছে।

মো. নজরুল ইসলাম আরও বলেন, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কয়েকবার আমন্ত্রণ জানান। ২০২৩ সালের মার্চ ও মে মাসে প্রধানমন্ত্রীর পরপর দুটি সফর প্রমাণ করে যে, উভয় পক্ষই এই সম্পর্ককে উচ্চ মর্যাদায় রাখে।

জানা গেছে, গত বছরের মার্চে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দোহায় জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি ৫) সম্মেলনের সাইডলাইনে শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় এলএনজি বিষয়ে সহযোগিতা বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী কাতারের আমিরকে অনুরোধ করেন। আশা করা হচ্ছে, আমিরের সফরে এ বিষয়টি গুরুত্ব পাবে।

কাতারের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য সম্পর্কও ক্রমেই বাড়ছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে কাতারে প্রায় ৩২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। একই সময়ে বাংলাদেশে কাতার রপ্তানি করেছে ২৩৬৬.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে এলএনজি ও সার রপ্তানি করে কাতার। বাংলাদেশ কিছু গার্মেন্টস আইটেম, শাকসবজি এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার রপ্তানি করে। কাতারে আমাদের রপ্তানি আরও প্রসারিত করার বিশাল সুযোগ রয়েছে। আমাদের এই অঞ্চলে সবচেয়ে উন্মুক্ত বিনিয়োগ ব্যবস্থা রয়েছে। এলএনজি সংরক্ষণ ও বিতরণে বিনিয়োগের মাধ্যমে কাতার জ্বালানি খাতে তাদের সম্পৃক্ততা আরও বাড়াতে পারে। কাতার অবকাঠামো ও রিয়েল এস্টেট খাতেও বিনিয়োগ করতে পারে।

কাতার বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির বৃহৎ বাজার। বাংলাদেশ ২০০৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কাতারে মোট ৮ লাখ ১০ হাজার ১৫১ কর্মী রপ্তানি করেছে, যা বিশ্ব জনশক্তি বাজারে মোট জনশক্তি রপ্তানির ৬.৪৭ শতাংশ। গতবছর ২০২৩ সালে কাতারে গেছে ৫৬ হাজার ১৪৮ বাংলাদেশি। চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ কাতারে ৬ হাজার ৭৭৯ জন কর্মী রপ্তানি করে। বাংলাদেশিরা কাতারের সরকারি, আধা-সরকারি ও বেসরকারি খাতে কাজ করছেন। বাংলাদেশ ২০১৩ সালে কাতারে মহিলা কর্মী পাঠানো শুরু করে। ২০১৮ সালে ৩ হাজারের বেশি মহিলা কর্মী কাতারে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ পায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি কমে যাওয়ায় এবং ওমান কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে দেওয়ায় বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কাতার একটি নিরাপদ গন্তব্য হতে পারে। দেশটির আমিরের সফরে এ বিষয়টি গুরুত্ব পাবে বলেও আশা করা হচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, এই সফরে দুই দেশের মধ্যে প্রায় এক ডজন সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে।

কাতারের আমিরের নামে সড়ক ও পার্ক হচ্ছে ঢাকায়:
২০২৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক জনসভায় কালশী এলাকার বালুর মাঠে বিনোদন পার্ক ও খেলার মাঠ করার ঘোষণা দেন। তিনি ওই এলাকার মানুষের জন্য উপহার হিসেবে ১৬ বিঘা জমি খেলার মাঠ ও পার্কের জন্য বরাদ্দ দেন। মাঠ ও বিনোদন পার্কটিতে যুবকদের জন্য ক্রিকেট ও ফুটবল খেলার ব্যবস্থা এবং প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবস্থা থাকবে। প্রবীণদের জন্য হাঁটার ব্যবস্থা এবং শিশুদের খেলাধুলার জায়গা থাকবে। পার্কটি তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ও তুরস্কের বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে তুরস্কের জাতির পিতা কামাল আতাতুর্কের নামে রাজধানীর বনানীতে একটি সড়ক রয়েছে। বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামেও তুরস্কে একটি সড়কের নামকরণ করা হয়েছে।