জোয়ারে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, দুর্ভোগ চরমে
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে বরিশাল বিভাগের প্রায় সব কটি জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: দেশের অন্যান্য অংশের মতো দক্ষিণাঞ্চলেও এবার বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাত তুলনামূলক কম ছিল। তবে শরতে এসে প্রবল বর্ষণে এ অঞ্চলের জনজীবন অনেকটাই থমকে গেছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে বরিশাল বিভাগের প্রায় সব কটি জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব জেলার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বেড়েছে। ফলে দিনে দুবার জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ছে অনেক এলাকায়। এতে অনেক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে গত রবিবার থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। বরিশাল আবহাওয়া বিভাগ বলছে, মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই বিভাগে বৃষ্টি ঝরেছে ৪২৭ দশমিক ৩ মিলিমিটার। অথচ পুরো সেপ্টেম্বরে এ অঞ্চলে স্বাভাবিক বৃষ্টি হওয়ার কথা ২৫৯ দশমিক ৪ মিলিমিটার। অর্থাৎ মাত্র ৫৪ ঘণ্টায় পুরো মাসের মোট বৃষ্টিপাতের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে।
আবহাওয়া বিভাগ বলছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি স্থলভাগের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটি ক্রমে দুর্বল হচ্ছে। এর প্রভাবে আরও দুই-তিন দিন বৃষ্টিপাত হবে। বরিশাল নগরের বেশির ভাগ সড়ক তলিয়ে গেছে। জরুরি কাজ ছাড়া কেউ বাইরে বের হচ্ছেন না। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী ও অল্প আয়ের মানুষ।
বৃষ্টির পাশাপাশি দক্ষিণ উপকূলের নদ-নদীতে তিন দিন ধরে চলছে উঁচু জোয়ারের তাণ্ডব। এতে এসব নদ–নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বাসিন্দাদের দুর্ভোগ বেড়েছে। অস্বাভাবিক জোয়ারে বরিশাল সদরের দপদপিয়া, চরবাড়িয়াসহ অনেক এলাকা এবং জেলার মেহেন্দীগঞ্জ, হিজলা, মুলাদি উপজেলার নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়ছে। একইভাবে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় বিষখালী নদী ও বলেশ্বর নদ উপচে অনেক গ্রাম পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, বরিশাল নগর পয়েন্টে গতকাল দুপুর ১২টায় কীর্তনখোলা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ভোলার দৌলতখান পয়েন্টে সুরমা-মেঘনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ পয়েন্টে পায়রা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৪ সেন্টমিটার এবং বরগুনার পাথরঘাটা পয়েন্টে বিষখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ৮২ সেন্টমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
সাতক্ষীরায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপকূল রক্ষা বাঁধের ৮২ কিলোমিটারে অন্তত ৪০টি স্থান ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে গত সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাতে প্রবল জোয়ারের চাপে আশাশুনির একাধিক স্থানে বাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চলে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো বিভাগ-১) নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের বলেন, বিভাগ-১-এর আওতায় ৩৮০ কিলোমিটার উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৪২ কিলোমিটার। তবে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ৮ থেকে ১০টি স্থান। এরই মধ্যে কয়েকটি স্থানে কাজ করা হয়েছে।
বিভাগ-২-এর আওতায় উপকূলীয় অঞ্চলে ৪০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ৪০ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে সাতক্ষীরা পাউবোর (বিভাগ-২) নির্বাহী প্রকৌশলী শাহনেওয়াজ তালুকদার বলেন, বাঁধ মেরামতের কাজ চলছে। এদিকে, বাগেরহাট সদর, মোড়েলগঞ্জ, রামপাল, মোংলা উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রাম জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি ও বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে জেলার কয়েক শ চিংড়ির ঘের ভেসে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
টানা তৃতীয় দিনের জোয়ারে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের করমজল পর্যটন ও বন্য প্রাণী প্রজননকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির বলেন, নদ–নদীতে যে হারে পানি বাড়ছে, তাতে সুন্দরবনের প্রাণিকুল হুমকির মুখে পড়ছে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews