ঘূণিঝড় মোখা: উপকূলের দুর্বল বেড়িবাঁধ নিয়ে উৎকণ্ঠা বাড়ছে
ঝুঁকিতে থাকা মানুষকে সরিয়ে নিতে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত থাকলেও অরক্ষিত রয়েছে বেড়িবাঁধ। এতে ক্ষতি হতে পারে সম্পদের।
প্রথম নিউজ, খুলনা প্রতিবেদক: উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’। বিপদ সামনে রেখে খুলনাসহ সারাদেশে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন। ঝুঁকিতে থাকা মানুষকে সরিয়ে নিতে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত থাকলেও অরক্ষিত রয়েছে বেড়িবাঁধ। এতে ক্ষতি হতে পারে সম্পদের। খুলনা উপকূলে ঘূর্ণিঝড়ের সময় বড় ধরনের জলোচ্ছ্বাস হলে পানি ঢুকে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতেই উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। খুলনার কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া গ্রামের উত্তর পাশের বাঁধের প্রায় ২৫০ মিটার ভেঙে গিয়েছিল ঘূর্ণিঝড় আম্পানে। দুই বছর ধরে ওই বাঁধসহ আশপাশের প্রায় দুই হাজার মিটার বাঁধ মেরামত করা হয়। তবে ওই এলাকায় বাঁধে ফের ধস নেমেছে। সেখানকার তিনটি স্থানে এ মুহূর্তে ৩০০ মিটারের মতো বাঁধ ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
কয়রা ও পাইকগাছার বাসিন্দারা জানান, ঘূর্ণিঝড় যদি খুলনা উপকূলে আঘাত না হানে, তারপরও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে নদনদীতে পানির চাপ বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। আর পানি বাড়লে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার ভয় আছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) খুলনার ডিভিশন-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রহমান জানান, তাদের অধীনে ৩৭৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে তিন কিলোমিটার অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ও ছয় কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। পাউবো খুলনার ডিভিশন-২-এর অধীনে কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা ও বটিয়াঘাটা উপজেলায় বেড়িবাঁধ রয়েছে মোট ৬৩০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে ১০ কিলোমিটার।
পাউবো সাতক্ষীরার ডিভিশন-১-এর অধীনে ৩৮০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে তিন কিলোমিটার অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এবং ২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সাতক্ষীরা ডিভিশন-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহনেওয়াজ বলেন, তাঁর আওতাধীন এলাকায় ৩০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে তিন কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এই বাঁধ মেরামত করা হবে। পাউবোর বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ জানান, জেলার ৩৩৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে শ্যামনগর ও মোরেলগঞ্জ উপজেলায় ১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। অর্থ বরাদ্দ না থাকায় তা মেরামত করা সম্ভব হয়নি। এদিকে খুলনার কয়রা উপজেলায় প্রায় পাঁচ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা দাবি করলেও বাস্তবে অনেক বেশি। এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গনকূল। সেখানে জলোচ্ছ্বাস হলেই ভেঙ্গে যেতে পারে।
স্থানীয় কয়রা উপজেলার উত্তরবেদকাশী গ্রামের বাসিন্দা নুরুজ্জামান জানান, বাঁধ বেশি কিংবা কম সেটা বড় কথা নয়। আসলে কয়রা উপজেলার কয়েকটি পয়েন্ট রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে কয়রার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের গোয়ালখালী, জোড়সিং, চরামূখা, উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের হরিহরপুর, গাতিরঘের, কাঠকাটা, কাঠমারচর, কয়রা সদর ইউনিয়নের গোবরা, ঘাটাখালী, মহারাজপুর ইউনিয়নের পবনা, দশহালিয়া, মহেশ^রীপুর ইউনিয়নের শিকারীবাড়ি, নয়ানিসহ বেশ কয়েকটি স্থান রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া দাকোপের কামারখোলা, নলিয়ান, কালাবগী, সুতারখালী, পাইকগাছা উপজেলার শিবসা নদীর বেশ কয়েকটি পয়েন্ট ছুঁকিপূর্ণ রয়েছে।
নিরাপদে সরে যেতে সুন্দরবন উপকূলে মাইকিং : ঘূর্ণিঝড় মোখ মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে মোংলা কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন। শুক্রবার (১২ মে) সকাল থেকে উপকূলের ১৪ স্টেশন থেকে সতর্কীকরণ মাইকিং করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বঙ্গোপসাগর, সুন্দরবনের নদ-নদী ও মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলে চলাচলরত দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের নাবিক, জেলে-মাঝিমাল্লাদের নিরাপদে সরে যেতে বলা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোস্টগার্ডের এ প্রচারণা চলবে।
কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের (মোংলা) অপারেশনাল অফিসার লে. কমান্ডার তারেক আহমেদ জানান, সুন্দরবন উপকূলে সতর্কীকরণ ও সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়
পরবর্তী উদ্ধার তৎপরতার জন্য কোস্টগার্ডের হাই স্পিডবোট ও জাহাজ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তিনি আরও জানান, পর্যাপ্ত খাদ্য সামগ্রী ও চিকিৎসার জন্য মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।