গণহত্যাকারী নেতানিয়াহুর পরিণতি হবে হিটলারের মতো : তুরস্ক

গণহত্যাকারী নেতানিয়াহুর পরিণতি হবে হিটলারের মতো : তুরস্ক


প্রথম নিউজ, ডেস্ক : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলের প্রাণঘাতী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বরাবরই কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে চলেছে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী মুসলিম রাষ্ট্র তুরস্ক। এমনকি গাজায় ইসরায়েলি হামলাকে শতাব্দীর অন্যতম ‘শ্রেষ্ঠ বর্বরতা’ বলে ইতোমধ্যেই আখ্যায়িত করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান।

এছাড়া গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধ ঠেকাতে কার্যকর কোনও ভূমিকা নিতে ব্যর্থ হওয়ায় জাতিসংঘের পাশাপাশি মুসলিম বিশ্বের নেতাদেরও বিভিন্ন সময় সমালোচনা করেছেন তিনি। আর এবার গণহত্যাকারী নেতানিয়াহুর পরিণতি হিটলারের মতো হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে ইউরোপ ও এশিয়ার সংযোগস্থল বলে পরিচিত এই দেশটি।

সোমবার (২৯ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

বার্তাসংস্থাটি বলছে, ‘যেভাবে গণহত্যাকারী হিটলারের সমাপ্তি হয়েছিল, তেমনি গণহত্যাকারী (ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন) নেতানিয়াহুরও সমাপ্তি হবে’ বলে তুরস্ক সোমবার জানিয়েছে।

তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘যেভাবে গণহত্যাকারী নাৎসিদের জবাবদিহি করা হয়েছিল, তেমনি যারা ফিলিস্তিনিদের ধ্বংস করতে চায় তাদেরও জবাবদিহি করা হবে। মানবতা ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়াবে। আপনি ফিলিস্তিনিদের ধ্বংস করতে পারবেন না।’

তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছেন, ‘আমাদের প্রেসিডেন্ট মানবতার কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছেন। যারা এই ন্যায়সঙ্গত কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করতে চাইছেন - বিশেষ করে ইসরায়েলসহ আন্তর্জাতিক ইহুদিবাদী গোষ্ঠীগুলো - খুব আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইতিহাস সব গণহত্যাকারী এবং তাদের সমর্থকদের পরিণতি একইভাবে অবসান ঘটিয়েছে।’

সোশ্যাল মিডিয়ায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ মানহানিকর ও অপমানজনক মন্তব্য করার পর তুর্কি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই বিবৃতিটি দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা ৯ মাসেরও বেশি সময় ধরে চালানো এই হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৩৯ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। গাজায় ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসনের শুরু থেকেই তীব্র সমালোচনা করে চলেছেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান।

এর আগে গাজা উপত্যকায় নির্বিচার বোমা হামলার ঘটনায় গত বছরের ডিসেম্বরের শেষের দিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর তীব্র সমালোচনা করেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। সেসময় তিনি বলেন, বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু আর অ্যাডলফ হিটলারের মাঝে কোনও পার্থক্য নেই। গাজায় ইসরায়েলের হামলাকে ইহুদিদের প্রতি নাৎসিদের আচরণের সাথেও তুলনা করেন তিনি।

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের প্রতি সমর্থন রয়েছে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য তুরস্কের। গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজায় শুরু হওয়া ইসরায়েলের বিমান ও স্থল হামলার সমালোচনা নিয়মিতভাবেই করছে দেশটি।

একইসঙ্গে ইসরায়েলকে ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’ বলে অভিহিত করে তুরস্ক বলেছে, ইসরায়েলি নেতাদের অবশ্যই আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের চেষ্টা করা উচিত। ইসরায়েলের গাজা হামলায় সমর্থনকারী পশ্চিমা দেশগুলোও যুদ্ধাপরাধ করছে বলে মন্তব্য করেছেন এরদোয়ান।

গত ডিসেম্বরে তুরস্কের এই প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘তারা হিটলারকে নিয়ে খারাপ কথা বলত। হিটলারের সাথে আপনার পার্থক্য কী? এই নেতানিয়াহু কি হিটলারের চেয়ে কম করছেন? না কম করেন নাই।’

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণের ফলে এখন পর্যন্ত ৩৯ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৯১ হাজার মানুষ।

মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।

এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।