এবারের ঈদ মানুষের জন্য ছিল নিরানন্দ: প্রিন্স

সকল মামলায় জামিন থাকলেও অন্যায়ভাবে ঠুনকো কারনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে ঈদের আগে মুক্তি দেওয়া হয় নাই। এটা সরকারের কর্তৃত্ববাদী প্রতিহিংসার রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ। তিনি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং অবিলম্বে রিজভী আহমেদ এর নিঃশর্ত মুক্তি দাবী করেন।

এবারের ঈদ মানুষের জন্য ছিল নিরানন্দ: প্রিন্স

প্রথম নিউজ,ঢাকা:বিএনপির ভারপ্রাপ্দ দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, ঈদ মানে আনন্দ। একমাস সিয়াম সাধনার পর মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব ঈদ সকলরে জীবনে আনন্দ নিয়ে আসে। কিন্তু এবারের রোজা ও  ঈদে জনগণের কষ্ট হয়েছে। তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে থাকা মানুষের মনে কোন আনন্দ ছিল না। এবারের ঈদ মানুষের জন্য ছিল নিরানন্দ।
আজ নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। প্রিন্স বলেন, রমজান মাসে এবং ঈদের আগ মুহুর্তেও ক্ষমতাসীন কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী সরকার দমন-নিপীড়ন অব্যাহত রেখেছে। বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এড. রুহুল কবীর রিজভী আহমেদকে গত ৭ ডিসেম্বর বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করা হয়।  তিনি বলেন, রিজভী আহমেদ শারীরিকভাবে অসুস্থ। কারাগারে তাঁকে সু-চিকিৎসা দেওয়া হয় নাই। পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে বার বার তাঁকে বিশেষায়িত কোন হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়ার আহবান করা হলেও, সরকার তা করে নাই। বার বার তাকে মুক্তি দেয়ার দাবী করা হলেও ফ্যাসিবাদী সরকার মুক্তি দেয় নাই। সকল মামলায় জামিন থাকলেও অন্যায়ভাবে ঠুনকো কারনে তাঁকে ঈদের আগে মুক্তি দেওয়া হয় নাই। এটা সরকারের কর্তৃত্ববাদী প্রতিহিংসার রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ। তিনি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং অবিলম্বে রিজভী আহমেদ এর নিঃশর্ত মুক্তি দাবী করেন।

বিএনপি এ নেতা আরও বলেন, ঈদের একদিন আগে অর্থাৎ ২০ এপ্রিল রাতে তারাবি নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর রাজধানীর ওয়ারী এলাকা থেকে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবকদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এর সভাপতি এ এ জহির উদ্দিন তুহিনকে পুলিশ বিনা কারনে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। গত ১০ এপ্রিল ২০২৩ইং আছরের নামাজের পর বাড্ডা থেকে সাদা পোষাকধারীরা জিয়া মঞ্চের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আউয়ালকে তুলে নেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত তাঁর কোন সন্ধান পাওয়া যায় নি। পরিবারের সাথে সাথে আমরাও এ ব্যাপারে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং চিন্তিত, কারন এর আগেও সাদা পোষাকধারীরা একইভাবে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের গুম করেছে। পরবর্তীতে তাঁদের অনেকেরই কোন খোঁজ পাওয়া যায় নি।  তিনি এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবকদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এর সভাপতি এ এ জহির উদ্দিন তুহিন এর নিঃশর্ত মুক্তি দাবী করেন।   অবিলম্বে জিয়া মঞ্চের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আউয়ালকে জনসম্মুখে হাজির করার দাবিও জানান তিনি।

এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ঈদের আগেও সরকার মিথ্যা মামলা বন্ধ করে নাই। গত ২০ এপ্রিল ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহবায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার সহ ও তার ভাই যুবায়ের হোসেন তালুকদারসহ তারাকান্দা উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ১১ নেতা কর্মীর নামে ও ১০/১২ জন অজ্ঞাত উল্লেখ করে মিথ্যা ও গায়েবী মামলা দায়ের করা হয়।  তিনি অবিলম্বে মোতাহার হোসেন তালুকদারসহ নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও হয়রানী বন্ধের দাবী জানান। 
ঈদের দিনও প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন তা সথ্যের অপলাপ: প্রিন্স বলেন, অনির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী ঈদের দিনেও যা বলেছেন তা সত্যের অপলাপ ছাড়া আর কিছুই নয়। মিডনাইট নির্বাচনের অনৈতিক সরকারের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌছে দেয়ায় মানুষ এখন গ্রামে গ্রামে আনন্দ ঈদের আনন্দ উপভোগ করছেন। শুধু গ্রাম নয়, গ্রাম-শহরের মানুষের মনে যে, ঈদের আনন্দ নাই-জনগণের নির্বাচিত সরকার হলে বা জনসম্পৃক্ত সরকার থাকলে তারা উপলব্ধি করত। জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে প্রহসণের ও জনবিচ্ছিন্ন সরকারের পক্ষে তা উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। শতভাগ বিদ্যুতায়নের মিথ্যা দাবী করা সরকারের মিথ্যা উন্নয়ন কেমন তা গ্রাম-শহরের মানুষ হারে হারে টের পাচ্ছে। তীব্র দাবদাহ প্রচন্ড গরমে বিদ্যুতের অভাবে বার বার লোডশেডিং এ গ্রাম-শহরের মানুষের জীবন যখন নাকাল, তখন ঈদের দিনে প্রধানমন্ত্রীর এহেন মিথ্যা দাবী জনগণের সাথে নির্মম রসিকতা ছাড়া আর কিছুই না। ঘরে ঘরে আজ বিদ্যুৎ নাই। ঘরে ঘরে অন্ধকার নেমে এসেছে। তিনি বলেন, গ্রাম ও শহরে বিদ্যুৎ সংকট এতটাই তীব্র ও প্রকট যে, প্রচন্ড গরমে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১০/১২ ঘন্টা বিদ্যুৎ বিহীন অবস্থায় মানুষ দিনাতিপাত করছে। বিদ্যুৎ সংকটের প্রভাবে কল, কারখানায় এবং কৃষিতে পড়েছে। প্রচন্ড খরতাপের ফসলের জমি ফেটে চৌচিড় হয়ে যাচ্ছে, বিদ্যুৎতের অভাবে মানুষ জমিতে পানি দিতে পারছে না, ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় কৃষকের মাথায় হাত। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতিতে মানুষ দিশেহারা। রমজান মাস এমনিক ঈদেও মানুষ পরিবার, পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
বিএনপি নেতা বলেন, রোজার আগে সরকার বলেছিলেন, রোজার মাসে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়বে না। বাস্তবতা হচ্ছে, রোজার মধ্যেও প্রতিদিন প্রতিটি দ্রব্যের মূল্য লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে, এমনকি ঈদের আগের দিনও বেড়েছে। কাপড়ের দাম প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ঈদের মধ্যে খেটে খাওয়া স্বল্প আয়ের মানুষ, মধ্যবিত্তরাও পরিবারের সদস্যদের ঐতিহ্যগত ঈদ উপহার দিতে পারে নাই। দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে ব্যার্থ হওয়া সরকার মিথ্যা অযুহাতে সারের দাম বৃদ্ধি করেছে। বিশ^বাজারে সারের দাম যখন ৬২ থেকে ২৫ শতাংশ কমে গেছে, সরকার তখন তাদের অব্যবস্থাপনা, অপরিনামদর্শী সিদ্ধান্ত, দুর্নীতি, লুটপাট আড়াল করতে বিশ^বাজারে মূল্যবৃদ্ধির মিথ্যা কথা বলে বাংলাদেশেও সারের দাম বৃদ্ধি করেছে। মিথ্যাচারের ওপর দাড়িয়ে থাকা সরকারের সিরিজ মিথ্যাচারে এ এক নতুন সংযোজন।
তিনি বলেন, এর মধ্যে সরকার ধানের যে ক্রয়মূল্য নির্ধারন করেছে, তাতেও কৃষকরা হতাশ। এতে কৃষকরা লাভবান হবেনা, লাভবান হবে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যস্বত্ত্বভোগী নেতাকর্মীরা। সরকার নিজেই বলছে, প্রতিকেজি ধান উৎপাদন ২৯.৮০ টাকা খরচ হয়েছে। সেখানে সরকার প্রতি কেজি ধানের দাম ৩০ টাকা নির্ধারন করে কৃষকের সাথে প্রতারণা করেছে। আর এই ধান বিক্রয় করে কৃষকরা সারাবছর ঈদ সহ অন্যান্য আয়োজনে এবং জীবন যাত্রার ব্যায় নির্বাহ করে। কৃষকের সাথে এটা সরকারের মহাপ্রতারণা এবং মশকরা ছাড়া আর কিছুই না।

বঙ্গবাজার ও নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে এবার ব্যবসায়ী, কর্মচারীদের ঈদ উৎসব  বলে কিছু ছিল না। বিএনপি’র পক্ষ থেকে আমরা বার বার ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের পর্যাপ্ত সহযোগিতার দাবী করেছিলাম, কিন্তু সরকার তা করে নাই। ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের ঈদ ছিল বিষাদময়। এসব অগ্নিকান্ডে প্রকৃত রহস্য উন্মোচন না করে সরকার ব্লেম গেম এ ব্যস্ত। ব্লেম গেম করে সরকার নিজেদের আড়াল করতে পারবে না।গ্রাম গঞ্জে মানুষের আনন্দ-উৎসবে মেতে উঠার প্রধানমন্ত্রীর দাবী যে, কতটা অবাস্তব, তা সহজেই অনুমেয়। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট, অব্যবস্থাপনা সহ দুঃশাসনে মানুষের মনে কোন আনন্দ-উৎসব নাই।
বিএনপির মুখপাত্র বলেন, জনগণের ভোট চুরি করে আজ যারা ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রেখেছে, তারা উন্নয়নের নামে দুর্নীতি, লুটপাট করে বিদেশে অর্থপাচার করে দেশ-বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়েছে। বর্তমানে দুর্নীতিবাজরাই ক্ষমতায় আছে এবং সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। আন্দোলনে ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে জনগণ তাদের পরাস্ত করবে এবং দুর্নীতি-লুটপাটের বিচার করবে। নির্বাচনের নামে অনুগত প্রশাসন দিয়ে আগের রাতে ভোট চুরি করে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে গায়েবী ফলাফল ঘোষণা করাও মহা দুর্নীতির নামান্তর। ক্ষমতাসীনরা বলছে, বার বার নাকি জনগণ তাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে এবং এজন্য তারা জনগণের কাছে কৃতজ্ঞ, এসব কথা জনগণের সাথে মশকরা করা ছাড়া আর কিছুই নয়। ক্ষমতাসীনদের কৃতজ্ঞতা তাদের প্রতি, যারা ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের আগের রাতে ভোট চুরি করে, ব্যালট বাক্স ভর্তি করে আওয়ামীলীগকে নির্বাচিত ঘোষণা করে অবৈধ ক্ষমতা ভোগ করার সুযোগ দিয়েছে। দেশবাসীতো বটেই বিশ^বাসীও জানে সেদিন ভোটারদেরকে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত করে প্রহসনের নির্বাচন করা হয়েছিল। তারা আবারও নিজেদের অধীনে নির্বাচনের নামে প্রহসনের পায়তারা চালাচ্ছে। জনগণ এই সরকারকে বিশ^াস করে না, এই সরকারের প্রতি কোন আস্থাও নাই। তাই গণতন্ত্র বিরোধী, ভোটাধিকার হরণকারী সরকারের পদত্যাগ, অবৈধ সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে এবং নতুন, নিরপেক্ষ ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থাপনায় অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক, গ্রহনযোগ্য, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন গণ-দাবীতে পরিনত হয়েছে। মিথ্যাচার করে, ছেলে ভোলানো গল্প বলে আর প্রহসন করতে দেয়া হবে না। ভোট চোর সরকারের মিথ্যা আশ্বাসে জনগণের কোন বিশ্বাস নাই এবং বিশ্ববাসীরও কোন আস্থা নাই। জনগণ জনদুর্ভোগ সৃষ্টকারী, গণ-বিরোধী ফ্যাসিবাদ সরকারের পদত্যাগ চায়।
তিনি বলেন, যত তাড়াতাড়ি ক্ষমতাসীনরা এই দাবী মেনে নিবে, ততই তাদের জন্য মঙ্গল, জনগণেরও মঙ্গল হবে। অন্যথায় গণ-অভ্যূথানের মাধ্যমে গণ-বিচ্ছিন্ন ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় নিতে হবে। উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য আওয়ামী সরকারকেই দায়ী থাকতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা: রফিকুল ইসলাম, সহ সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী, খন্দকার মাশকুর রহমান,সৈয়দ জয়নাল আবেদীন মেজবাহ, রাজিব আহসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।