আরও ৩ দিনের হিট এলার্ট, বাড়ছে মৃত্যু
এমন পরিস্থিতিতে সোমবার আবারো ৭২ ঘণ্টার হিট এলার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: দেশের অধিকাংশ জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। গরমে জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা। গরমের তীব্রতায় বেড়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটিও। হিটস্ট্রোকে গতকালও ৩ জনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে। এমন পরিস্থিতিতে সোমবার আবারো ৭২ ঘণ্টার হিট এলার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। চলতি মাসে এ নিয়ে টানা তৃতীয় দফায় হিট এলার্ট জারি করা হলো। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহেও নতুন হিট এলার্ট জারি হতে পারে বলে ধারণা করছেন আবহাওয়াবিদরা।
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বাংলাদেশের কিছু জেলায় তাপপ্রবাহ বইতে শুরু করে। এরপর গত দুই সপ্তাহে তাপপ্রবাহ প্রায় সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলার উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে যশোরে চলতি বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলার তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪২.৩ ডিগ্রির মধ্যেই অবস্থান করছে। আর ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
চলমান তাপপ্রবাহ সম্পর্কে আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক বলেন, আবহাওয়া পরিস্থিতি বিবেচনায় চলমান হিট এলার্টের মেয়াদ বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। আমরা ধারণা করছি পুরো এপ্রিল জুড়েই এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি মে মাসেও তাপপ্রবাহ থাকতে পারে। পরবর্তী আবহাওয়া পরিস্থিতি বিবেচনা করে আবহাওয়া অধিদপ্তর এই হিট এলার্টের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেবে।
এদিকে গত কয়েকদিনের তুলনায় গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কম ছিল। তবে আজ থেকে ফের বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। খুলনা বিভাগের খুলনা জেলা, চুয়াডাঙ্গা ও যশোরে এই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এই তিন জেলার সঙ্গে বাগেরহাট, কুষ্টিয়া, পাবনা এবং রাজশাহী জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। এ ছাড়া ঢাকা, রংপুর, বরিশাল বিভাগসহ রাজশাহী ও খুলনার অবশিষ্ট জেলাসমূহ এবং মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি জেলার উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এসব জেলার উপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ আরও বিস্তার লাভ করতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। একই সঙ্গে জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বিরাজ করতে পারে। এ সময়ে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে, তবে রাতের তাপমাত্রা থাকতে পারে অপরিবর্তিত। এদিকে আগামী তিন দিনের পূর্বাভাসে দুই দিন সিলেট বিভাগে বৃষ্টির আভাস দেয়া হয়েছে। এ সময় শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া বইতে পারে। গত ২৪ ঘণ্টায়ও সিলেটে ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ওদিকে মে মাসের শুরুতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হতে পারে জানিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেছেন, তখন তাপমাত্রা কমে আসতে পারে।
হিটস্ট্রোকে মৃত্যু বাড়ছেই: তীব্র গরম অনুভূত হওয়ায় সারা দেশেই জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গতকালও হিটস্ট্রোকে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে তিন দিনে ১০ জনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে। গতকাল হিটস্ট্রোকে আব্দুল আওয়াল (৪৫) নামে এক রিকশাচালকের মৃত্যু হয়। রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল নার্সিং কলেজের পেছনের রাস্তা থেকে অজ্ঞান অবস্থায় ওই রিকশাচালককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের থেকে জানা যায়, ওই রিকশাচালক রিকশা চালিয়ে এসে নার্সিং কলেজের পেছনে কাঁপতে কাঁপতে রাস্তায় পড়ে অচেতন হয়ে যায়। পরে দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার পর তিনি মারা যান। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. কিশোর কুমার বলেন, এক রিকশাচালককে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। তবে তার মৃত্যু হিটস্ট্রোকে হয়েছে কিনা ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে।
এদিকে চুয়াডাঙ্গায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহে এক ঘণ্টার ব্যবধানে হিটস্ট্রোকে ২ নারীর মৃত্যু হয়েছে। তারা দুজনই আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদাহ ইউনিয়নের বেগুয়ারখাল গ্রামের বাসিন্দা। গতকাল সকালে স্বামীর জন্য মাঠে ভাত নিয়ে যাওয়ার সময় আশুরা খাতুন (২৫) ও সকাল সাড়ে ১০টায় আয়েশা বেগম (৭০) মারা যান। স্থানীয়রা জানান, বেগুয়ারখাল গ্রামের আনোয়ার হোসেন সকালে না খেয়েই মাঠে কাজ করতে যান। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে স্ত্রী আশুরা খাতুন স্বামীর জন্য মাঠে ভাত নিয়ে যাচ্ছিলেন। স্বামীর ক্ষেত পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই জমির আইলে আশুরা খাতুন মাটিতে পড়ে যান। মাঠের কৃষকরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আশুরাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার আগেই তিনি মারা যান। এর এক ঘণ্টা পর সকাল সাড়ে ১০টায় একই গ্রামের আক্কাস আলীর স্ত্রী আয়েশা বেগম মারা যান। কয়েক দিনের তীব্র গরমে তিনি হাঁসফাঁস করছিলেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত গ্রাম্য চিকিৎসক রাশেদুল ইসলাম বলেন, ক’দিনের তীব্র গরমে আয়েশা বেগম অসুস্থ হয়ে পড়েন। দুজনই হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।