আয় কমেছে এমপি শিমুলের, বেড়েছে স্ত্রীর 

আয় কমেছে এমপি শিমুলের, বেড়েছে স্ত্রীর 

প্রথম নিউজ, নাটোর : গত ৫ বছরে নাটোর-২ (সদর-নলডাঙ্গা) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম শিমুলের আয় কমেছে। শিমুলের আয় কমলেও বেড়েছে তার স্ত্রী শামীম সুলতানা জান্নাতির আয়। শিমুল এই আসনের টানা দুইবারের সংসদ সদস্য। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন।

২০১৮ সালে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় শিমুল উল্লেখ করেছিলেন, সেসময় তার বাৎসরিক মোট আয় ছিল ৬৪ লাখ ৩২ হাজার ২৪১ টাকা। তার স্ত্রীর আয় ছিল ২২ লাখ ৬৮ হাজার ৩২৭ টাকা। নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা এবারের হলফনামায় শিমুল উল্লেখ করেছেন, তার বাৎসরিক আয় মোট ৫৩ লাখ ৩ হাজার ১০৯ টাকা। যা গত নির্বাচনের হলফনামায় উল্লেখিত আয় থেকে ১১ লাখ ২৯ হাজার ১৩২ টাকা কমেছে।

শিমুলের আয় কমলেও বেড়েছে সম্পদের পরিমাণ। ২০১৮ সালের হলফনামায় শিমুলের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ছিল মোট ৩ কোটি ৮৩ লাখ ২৮ হাজার ৯০৮ টাকার। আর এবারের হলফনামায় শিমুলের মোট সম্পদ দেখানো হয়েছে ৪ কোটি ৬৫ লাখ ৩১ হাজার ৬৪৬ টাকা। যা বিগত সময়ের থেকে ৮২ লাখ ২ হাজার ৭৩৮ টাকা বেড়েছে।

এদিকে শিমুলের স্ত্রীর আয়ের সঙ্গে সমান্তরালভাবে বেড়েছে সম্পদের পরিমাণ। গতবারের থেকে ৫ লাখ ৬০ হাজার ৩৩ টাকা বেড়ে এবারের হলফনামায় শামীম সুলতানা জান্নাতির বাৎসরিক আয় দাঁড়িয়েছে ২৮ লাখ ২৮ হাজার ৩৬০ টাকা। অন্যদিকে গত ৫ বছরে শিমুলের স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে তিন গুণ। ২০১৮ সালের হলফনামায় শিমুলের স্ত্রীর সম্পদ ছিল মোট ১ কোটি ৮৫ লাখ ১৭ হাজার ৬৯৯ টাকা। আর এবারে তার সম্পদ বেড়ে হয়েছে ৭ কোটি ৫৭ লাখ ৭১ হাজার ৭০৬ টাকা। 

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে শিমুলের দাখিল করা হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। শিমুল এবারের হলফনামায় পেশা হিসেবে ব্যবসা দেখিয়ে সেই খাত থেকে বাৎসরিক ২৭ লাখ ৫০ হাজার ৫০০ টাকা, শেয়ার-সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত থেকে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩৮৯ টাকা, সংসদ সদস্য হিসেবে বেতন-ভাতা ২৪ লাখ ৫ হাজার ২০০ টাকা আয়ের কথা জানিয়েছেন। তার স্ত্রী ব্যবসা থেকে ২৪ লাখ ২৬ হাজার টাকা এবং শেয়ার-সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত থেকে ৪ লাখ ২ হাজার ৩৬০ টাকা আয় হয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করেন।

২০১৮ সালের নির্বাচনের হলফনামায় এমপি শিমুল পেশা হিসেবে প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার ও সরবরাহকারী দেখিয়েছিলেন। যেখানে ঠিকাদারি থেকে ১ লাখ ২৮ হাজার ৫৮৭ টাকা ও মৎস্য চাষ থেকে ৩৬ লাখ ৮৫০ টাকা আয় করেন শিমুল। এছাড়া শেয়ার-সঞ্চয়পত্র/ ব্যাংক আমানত থেকে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৩ টাকা ও সংসদ সদস্য হিসেবে প্রাপ্ত সম্মানী ভাতা ২৩ লাখ ৬২ হাজার ৮০১ টাকা আয় করেন।

অন্যদিকে শিমুলের স্ত্রী একই ধরনের ব্যবসা করে ২০ লাখ ১৩ হাজার ৯৩৯ টাকা এবং এফডিআর ও ব্যাংক জমার আমানত থেকে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৮৮ টাকা আয় করেন। ২০২৩ সালের হলফনামা শিমুল উল্লেখ করেছেন, তার কাছে নগদ টাকা আছে ১ কোটি ৫৬ লাখ ৯ হাজার ৬২১ টাকা, ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আছে ৩৩ লাখ ৩২ হাজার ১৫২ টাকা, শেয়ার বাজারে সামির ইমপ্যাক্ট লিমিটেড প্রতিষ্ঠানে নিজের ৫০ লাখ, এফডিআর ২১ লাখ ৪৭ হাজার ৬৭৩ টাকা, সেভিংস সার্টিফিকিটে ৪০ লাখ টাকা, দুইটি জিপ ১ কোটি ৫৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকা, স্বর্ণালংকার ১ লাখ টাকা, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ২০ হাজার টাকা এবং ১ লাখ টাকা আসবাবপত্র রয়েছে। এছাড়া এমপি শিমুলের নামে ১ লাখ ১৩ হাজার টাকা মূল্যের ৬৪.৩৭ শতাংশ কৃষি জমি ও ৭ লাখ ৭৩ হাজার ২০০ টাকা মূল্যের ৮ শতাংশ অকৃষি জমি রয়েছে। 

তার স্ত্রীর নামে ৪ কোটি ৪১ লাখ টাকার বাড়ি এবং ফ্ল্যাট আছে। এর মধ্যে তিনতলা বাড়ির মূল্য ৩ কোটি ৫৯ লাখ ৪২ হাজার ৫০ টাকা এবং ফ্ল্যাটের মূল্য ৮১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। তার নগদ টাকা আছে ১ কোটি ৫৬ লাখ ৬৯ হাজার ৪৭০ টাকা। ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আছে ৭৮ হাজার ৮৭১ টাকা, ৫০ লাখ টাকার শেয়ার, এফডিআর ৬৯ লাখ ৬ হাজার ৩১৫ টাকা, ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার ১টি জিপ, ৩৫ ভরি সোনা, ২ লাখ টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকার আসবাবপত্র রয়েছে।

২০১৮ সালের হলফনামায় শিমুল উল্লেখ করেছিলেন, অস্থাবর সম্পদ হিসেবে সেসময় তার কাছে নগদ টাকা ছিল ১ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার ৩০৪ টাকা। ব্যাংকে ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ১ কোটি ২৬ লাখ ৬৭ হাজার ৪০৪ টাকা, বিভিন্ন সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ৭৩ লাখ টাকা, ১টি জিপ গাড়ী যার মূল্য ৬৩ লাখ ৬২ হাজার টাকা, স্বর্ণ ১ লাখ টাকার, ইলেকট্রনিক পণ্য ও আসবাবপত্র ১ লাখ ২০ হাজার টাকার ছিল। স্থাবর সম্পদ হিসেবে সেসময় শিমুলের নামে ৬৪.৩৭ শতাংশ কৃষি জমি ও ৩ শতাংশ অকৃষি জমি ছিল। 

তার স্ত্রীর নামে নগদ ৫৮ লাখ ৩৭ হাজার ৭৪ টাকা, ব্যাংকে ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ১৬ লাখ ১৮ হাজার ৩১৩ টাকা, বিভিন্ন সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ৫৪ লাখ ২৭ হাজার ১১২ টাকা, ১টি জিপ গাড়ি যার মূল্য ৩৪ লাখ ৫০ হাজার, ৩৫ ভরি স্বর্ণ এবং ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্র ছিল ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকার। এছাড়া শিমুলের স্ত্রীর নামে স্থাবর সম্পদ হিসেবে ১৪.১১ শতাংশ অকৃষি জমি ছিল।

সে সময় শিমুলের ব্যক্তিগত ঋণ ৫০ লাখ টাকা এবং ব্যাংকে ১৬ লাখ ১ হাজার ৩৮৪ টাকা ঋণের কথা উল্লেখ করেন হলফনামায়।  ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামা অনুযায়ী সেময় শিমুলের নিজের মোট সম্পদ ছিল ৩২ লাখ ৩৭ হাজার ৩৩৬ টাকা। তার স্ত্রীর ছিল ১৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কারসহ ১৩ লাখ টাকার স্থাবর- অস্থাবর সম্পদ। হলফনামায় শিমুলের ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছিল ৩ লাখ ২৩ হাজার ৯২০ টাকা এবং উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে সম্মানী বাবদ আয় ছিল ২ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাটোর-২ আসন থেকে ৬ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। যার ভেতর পাঁচজনের মনোনয়নপত্র বৈধ এবং একজনের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁঞা। বৈধ প্রার্থীরা হলেন- শফিকুল ইসলাম শিমুল (আওয়ামী লীগ), ড. নুরুন্নবী মৃধা (জাপা), বজলুর রশীদ (বাংলাদেশ কংগ্রেস), আহাদ আলী সরকার (আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র) ও শরিফুল ইসলাম (জাসদ)। মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী কোরবান আলীর।