আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশের ভোট

ভোটের দিন বিবিসি, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, এএফপি, রয়টার্স, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, আল-জাজিরার মতো সংবাদ মাধ্যমগুলোর শিরোনাম হয়েছে বাংলাদেশের নির্বাচন।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশের ভোট

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে রোববার। গত কয়েক দিন ধরেই বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে একাধিক সংবাদ প্রকাশ করেছে প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। সেই ধারাবাহিকতায় ভোটের দিনও বিবিসি, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, এএফপি, রয়টার্স, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, আল-জাজিরার মতো সংবাদ মাধ্যমগুলোর শিরোনাম হয়েছে বাংলাদেশের নির্বাচন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স শিরোনাম করেছে, বাংলাদেশের নির্বাচনে ভোটারের সংখ্যা কম, ক্ষমতায় থাকছে শেখ হাসিনাই। রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশিদের বড় একটি অংশই সাধারণ নির্বাচন থেকে দূরে ছিল। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে টানা চতুর্থ বারের মতো ক্ষমতায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধান বিরোধী দল এই নির্বাচন বয়কট করেছে। তারপরেও ভোটের দিন ব্যাপক সহিংসতা দেখা গেছে। রয়টার্স বলেছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি এবং কয়েকটি ছোট মিত্রদের ভোট বয়কটের পর ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশটি ভার্চুয়াল একদলীয় শাসনের দিকে যাচ্ছে বলে সতর্ক করেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো- যারা বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের প্রধান গ্রাহক, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে।

ভোটের দিন বিবিসি শিরোনাম দিয়েছে, ‘বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে ভোটকেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ’। খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নির্বাচনের আগেই সহিংসতার ঢেউ দেখা গেছে। রিপোর্টে ট্রেনে দেয়া আগুনে চার যাত্রীর নিহত হওয়ার ঘটনা ছাড়াও চট্টগ্রামের একটি বৌদ্ধ মন্দির আক্রান্ত হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচন বয়কটের ডাক দিয়েছে এবং দেশব্যাপী দুই দিনের হরতাল ডেকেছে।  

দ্য গার্ডিয়ান লিখেছে, বাংলাদেশে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পঞ্চমবারের মতো ক্ষমতায় আসছেন শেখ হাসিনা। ভোটগ্রহণের দিন করা ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইতিমধ্যে গণগ্রেপ্তারে বিপর্যস্ত বিরোধী দলগুলো এই 'ভুয়া' নির্বাচন বয়কট করেছে। শেখ হাসিনার দলকে কোনো ‘কার্যকর’ প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখোমুখি হতে হয়নি। ফলে জয়ের পথে রয়েছে তার দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

এদিকে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে লাইভ রিপোর্ট প্রচার করেছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা। ওই লাইভ আপডেটের শিরোনাম ছিল,  বিরোধী দলের বর্জনের মধ্যেই ভোটগ্রহণ চলছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা পঞ্চমবারের মতো নির্বাচনে বিজয়ী হতে যাচ্ছেন, যে নির্বাচন প্রধান বিরোধী দল বয়কট করেছে। স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় ব্যালট খোলার পরপরই ভোট দেন শেখ হাসিনা। প্রায় আট লাখ পুলিশ, আধাসামরিক বাহিনী ও পুলিশ বাহিনী নির্বাচন পাহারা দিয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তাদেরও মোতায়েন করা হয়।

প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন সংবাদের শিরোনাম দিয়েছে, বিরোধীদের বয়কটের পরও বাংলাদেশে চলছে ভোট গ্রহণ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধান বিরোধী দল বয়কট করলেও রোববার বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের দীর্ঘতম মেয়াদের নারী প্রধানমন্ত্রী, তিনি টানা চতুর্থ মেয়াদে বিজয়ী হতে চলেছেন। রোববারের সাধারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে বলেও লিখেছে সিএনএন। 

তুরস্কভিত্তিক বার্তা সংস্থা আনাদোলুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে টানা ৪র্থ মেয়াদে জয়ী হতে চলেছেন। তাদের আরেক রিপোর্টে ভোটার সংখ্যা কম হওয়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান এই নির্বাচনকে জাতির প্রতি প্রহসন বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি দাবি করেছেন যে, নির্বাচনের কম ভোটদান এই বিষয়টির ওপরই ইঙ্গিত দেয়। 

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, হরতাল-অগ্নিসংযোগের মধ্যে বাংলাদেশের ভোটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা ৪র্থ মেয়াদে জয়ী হতে পারেন। গণমাধ্যমটির লাইভ আপডেটে জানানো হয়েছে যে, ভারতের তিনজনসহ শতাধিক বিদেশি পর্যবেক্ষক এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন। ভারত এই নির্বাচনকে বাংলাদেশের একটি ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ কিছু দেশ বিশ্বাসযোগ্য এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে। ভারতের আরেক সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার জানিয়েছে, নৌকার জয় নিয়ে আশাবাদী হাসিনা। ভোট দিয়ে বেরিয়ে প্রধানমন্ত্রী জানান, দেশের জনগণের ওপর তার আস্থা রয়েছে। তার দলেরই জয় হবে বলে তিনি নিশ্চিত।

সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম খালিজ টাইমস জানিয়েছে, প্রধান বিরোধী দলের বয়কট এবং ভোটের আগে সহিংসতার মধ্যেই সাধারণ নির্বাচনে টানা চতুর্থ এবং সামগ্রিকভাবে পঞ্চম মেয়াদে জয়ী হতে যাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম ‘নিউজ ডট কম অস্ট্রেলিয়া’ এক বিশ্লেষণে লিখেছে, গণগ্রেপ্তারের কারণে বিরোধী দলগুলোর বর্জনের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার পঞ্চম মেয়াদে ক্ষমতায় বসানোর নিশ্চয়তা দিতে নির্বাচন হচ্ছে বাংলাদেশে। এতে আরও বলা হয়, শেখ হাসিনার দল যে আসনগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে সেখানে কার্যত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখোমুখি হচ্ছে না। তবে সংসদকে যেন একদলীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত না করা যেতে পারে সেই প্রচেষ্টার আপাত প্রচেষ্টা হিসেবে কয়েকটি আসনে প্রার্থী দেয়নি। এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এবং অন্যান্য দল নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে কয়েক মাস ধরে বিক্ষোভ করেছে।

ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া শিরোনাম করেছে, ‘সহিংসতা ও বিরোধীদের বয়কটের মধ্যেও বাংলাদেশের নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন ভোটাররা’। তারাও নির্বাচন নিয়ে লাইভ আপডেট প্রচার করে। গণমাধ্যমটি জানায়, বাংলাদেশের নির্বাচনকে ঘিরে ব্যাপক সহিংসতা দেখা গেছে এবং এই নির্বাচন বয়কট করেছে প্রধান বিরোধী দল। তবে রোববার ভোটাররা ভোট দিয়েছেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পথে রয়েছেন। নির্বাচনের আগে অন্তত ১৮টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।