আত্তীকরণের আওতায় আরও ৩ প্রতিষ্ঠান

আত্তীকৃত হবে সম্পদ ও বেতন স্কেলে * সুপারিশ লাগবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের

আত্তীকরণের আওতায় আরও ৩ প্রতিষ্ঠান
আত্তীকরণের আওতায় আরও ৩ প্রতিষ্ঠান

প্রথম নিউজ, অনলাইন: সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের উদ্বৃত্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী আত্তীকরণে একটি নতুন আইন প্রণয়ন করছে সরকার। আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, যে পদ থেকে উদ্বৃত্ত হয়েছেন, যতদূর সম্ভব তাকে ওই পদে একই স্কেলে আত্তীকরণ করা হবে। সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে আত্তীকরণ করা যাবে। কোনো কর্মচারী একবার আত্তীকৃত হলে তিনি দ্বিতীয়বার পুনরাত্তীকরণের সুযোগ পাবেন না। আত্তীকরণের ক্ষেত্রে যোগ্য ও অভিজ্ঞ কর্মচারীরা প্রধান্য পাবেন। তাদের কোনো পরীক্ষা দিতে হবে না। সরকারের ৫০ ভাগের অধিক অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে-এমন প্রতিষ্ঠানও বন্ধ হয়ে গেলে কর্মচারীরা আত্তীকরণের আওতায় আসবেন।

উদ্বৃত্ত ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে সব কাগজপত্র জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে। ইতোমধ্যে আইনটির খসড়া চূড়ান্ত করে তা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, যা ‘সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের উদ্বৃত্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী আত্তীকরণ আইন-২০২২’ নামে অভিহিত হবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। আইনের খসড়ায় বলা হয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যে কোনো মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে আত্তীকরণের ক্ষমতা অর্পণ করতে পারবে। আত্তীকৃতদের জ্যেষ্ঠতা, বেতন ও পেনশন নির্ধারণে সরকার নতুন বিধানাবলি প্রণয়ন করবে। আত্তীকৃত পদে যোগদানের আগে তারা যে হিসাবরক্ষণ অফিস থেকে সর্বশেষ বেতনভাতা গ্রহণ করেছেন, সেই হিসাবরক্ষণ অফিস থেকেই তারা বেতন, ভাতা এবং অবসর সুবিধাদি তুলবেন। তাদের বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদি প্রদানের সুবিধার্থে সুপারনিউমারারি পদ সৃজন করা হবে।

আত্তীকৃত পদের জ্যেষ্ঠতা, বেতন, পেনশন এবং আনুতোষিকের জন্য তার আগের চাকরির সম্পূর্ণ সময়কাল গণনা করা হবে। যে প্রতিষ্ঠানে আত্তীকরণ করা হবে, সেই প্রতিষ্ঠানের বিধি-প্রবিধি অনুযায়ী বেতন, ভাতা ও অবসর সুবিধা পাবেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ বা মনোনয়ন ছাড়া উদ্বৃত্ত কর্মচারী আত্তীকরণ করা যাবে না। জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন (এনডিসি) বলেন, এখনো বলার মতো কিছু হয়নি। হলে জানতে পারবেন। এর বেশি কিছু বলতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।

সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। ওই প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের আওতায় সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তবে সংস্থাটিতে কর্মরত বাকি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আত্তীকরণের অংশ হিসাবে এ আইন প্রণয়ন জরুরি হয়ে পড়ে। কারণ, করপোরেশনের জনবল আত্তীকরণের কোনো পরিস্থিতি ইতঃপূর্বে সৃষ্টি হয়নি। এ আইন প্রণয়নের ফলে কোনো করপোরেশন বন্ধ হয়ে গেলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আত্তীকরণের আওতায় আসবে। তারা উদাহরণ দিয়ে বলেন, ভবিষ্যতে সাধারণ বীমা করপোরেশন, জীবন বীমা করপোরেশন, চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন প্রভৃতি বন্ধ হলেও কর্মচারীরা আত্তীকরণ হবেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, যে কর্মচারী যে মন্ত্রণালয়ের অধীনে কর্মরত, সেই মন্ত্রণালয় তাদের উদ্বৃত্ত করবে। উপযুক্ত প্রমাণসহ ওই মন্ত্রণালয়ের সচিবের স্বাক্ষরে তা আত্তীকরণের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব আকারেপাঠাবে। উদ্বৃত্তকালীন কর্মচারীরা সুপারনিউমারারি পদের বিপরীতে বেতনভাতাদি পাবেন। এই সংক্রান্ত যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সরকারি কর্মচারী উদ্বৃত্ত ঘোষণাকারী মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগের সম্মতিতে সম্পন্ন হবে। উদ্বৃত্ত কর্মচারী আত্তীকরণের আগে মারা গেলে যে হিসাবরক্ষণ অফিস থেকে তিনি সর্বশেষ বেতনভাতা নিয়েছেন, সেই হিসাবরক্ষণ অফিস থেকে চাকরিবিধি অনুযায়ী পেনশন, পারিবারিক পেনশন সুবিধা তুলবেন। উদ্বৃত্তকরণের তারিখ থেকে আত্তীকরণের আগপর্যন্ত তাদের বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন লাগবে না।

তারা আরও জানান, সরকারের ৫০ ভাগের অধিক অর্থায়নে পরিচালিত কোম্পানি, ব্যাংক, বিমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান অথবা শিল্প-বাণিজ্য সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে ওইসব প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা আত্তীকরণের সুবিধা পাবে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠানে আত্তীকরণের ক্ষেত্রে ওই প্রতিষ্ঠানে চাকরিকালের ৫০ ভাগ আত্তীকৃত সরকারি পদের জ্যেষ্ঠতার জন্য গণনা করা হবে। পক্ষান্তরে একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান থেকে অপর একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে আত্তীকরণের ক্ষেত্রে পূর্ব পদের সম্পূর্ণ চাকরিকাল আত্তীকৃত পদের জ্যেষ্ঠতা, বেতন, ছুটি, পেনশন এবং আনুতোষিকের জন্য গণনা করা হবে। ২৫ বছর চাকরি করার পর কোনো কর্মচারী উদ্বৃত্ত হলে এবং তিনি পূর্ণ অবসর সুবিধা গ্রহণ করলে পুনরায় সরকারি কোনো কার্যালয়ে আত্তীকরণের জন্য বিবেচিত হবে না। 

নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য সরকার জনবল নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও উদ্বৃত্ত সরকারি কর্মচারী আত্তীকরণের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এ আইনের অধীনে কোনো সরকারি কর্মচারীকে আত্তীকরণের ক্ষেত্রে সরকারি কর্ম কমিশনের সঙ্গে কোনো ধরনের পরামর্শের প্রয়োজন হবে না। আইনটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অসুবিধা দেখা দিলে তা দূর করতে সরকার এ আইনের সঙ্গে সংগতি রেখে আদেশ জারি করবে। আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইন, বিধি, প্রবিধান, উপ-আইন, আইনের ক্ষমতাসম্পন্ন কোনো দলিল, চুক্তি, অঙ্গীকারনামা, সমঝোতাপত্র, চাকরির শর্তাদিতে ভিন্ন যা কিছুই থাকুক না কেন উদ্বৃত্ত ও আত্তীকরণের ক্ষেত্রে এ আইনের বিধানাবলি প্রধান্য পাবে।

দায়মুক্তি : দেশের কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে এ আইনের অধীনে সম্পন্ন কোনো কাজ বা জারীকৃত কোনো আদেশের বিরুদ্ধে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না। সরকার বা কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে এ আইন বা বিধানের অধীন কোনো কিছু করা বা করার অভিপ্রায়ের বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা অন্য কোনো আইনগত কার্যধারা দায়ের করা যাবে না।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: